০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাটুরিয়ার ছোট রাস্তার বড় দুঃখ

সাটুরিয়া-দরগ্রাম সড়কের প্রায় পুরোটা জুড়েই এমন অবস্থা : নয়া দিগন্ত -

রাস্তাটির নাম সাটুরিয়া-দরগ্রাম সড়ক। দূরত্ব মাত্র ছয় কিলোমিটার। এই সামান্য দূরত্বের পথে নামলেই নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হবে আপনার। লাল সুরকির গুঁড়া আর ধুলোবালুতে ঢেকে যাবে আপনার জামা-কাপড় নাক-মুখ। ইটের লালচে ধুলায় আপনার চোখের ভ্রু ও পাপড়িতে আস্তর পড়ে যাবে। আর মাথা ও চুলের কথা না-ই বলি, ধুলায় একাকার হয়ে যাবে আপনার সব শরীর।
এ যেন এক ধুলাবালুর রাজত্ব। এই পথে কোনো যানবাহন চলে গেলে কয়েক মিনিট পর্যন্ত ধুলার কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে থাকে পুরো এলাকাজুড়ে। আরো রয়েছে সড়কের ওপরে যেখানে সেখানে খানাখন্দ। সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাময় হয়ে যায় সব পথ।
রাস্তাটির কাজ শুরু হয়েছিল ২০২১ সালের জুনে। কাজ শেষ করার কথা ছিল গত এপ্রিল মাসে। সামান্য ঢালাই দিয়ে ও পুরোনো কারপেটিং সরিয়েই যেন কাজের অনেকটা দূর এগিয়ে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। এমনই যেন ভাব। অনেকটা বিলও তুলে নিয়েছেন তিনি। অথচ কাজের এক-তৃতীয়াংশও শেষ করেননি।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, সাটুরিয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে দরগ্রাম বাজার পর্যন্ত সড়কটি প্রায় ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ। ওই সড়কের দু’পাশ প্রশস্তকরণ ও কারপেটিং করার ব্যয় ধরা হয় ৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০২১ সালের জুনে কার্যাদেশ পান মানিকগঞ্জের দাশড়া এলাকার হোসাইন কনস্ট্রাকশন। কাজ শেষ হওয়ার কথা গত এপ্রিল মাসে। অথচ এই সামান্য কাজটুকু করেই ঠিকাদার বিল তুলে নিয়েছেন তিন কোটি ৩২ লাখ টাকা।
উপজেলা শহরে যেতে দরগ্রাম, তিল্লি, বরাইদ ইউনিয়নের মানুষের একমাত্র পথ এই সড়কটিই। এ ছাড়াও জেলার দৌলতপুর, ঘিওর উপজেলা এবং পাশের টাঙ্গাইলের নাগরপুরের লোকজনও এপথ দিয়েই যাতায়াত করেন।
এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারী সিএনজিচালক জুয়েল মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, অসুস্থ যাত্রীরা এ রাস্তায় এলে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে যাত্রীর সংখ্যাও কমে গেছে। সম্রাট মিয়া নামে এক পথচারী বলেন, সংস্কারের নামে এ কী যন্ত্রণায় ফেলা হয়েছে আমাদেরকে। সামান্য ঢালাই ও কারপেটিং সরানোর কাজটুকু করেই যেন আর কিছু করার নেই তাদের। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ করার দাবি জানান তিনি।

হোসাইন কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক ইব্রাহিম মিয়া নয়া দিগন্তকে বলেন, নির্মাণসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির কারণে কাজ বন্ধ করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিকট সময় বৃদ্ধির আবেদন করেছি। শিগগিরই আবার শুরু করা হবে কাজ।
সাটুরিয়া উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের বাকি কাজ অচিরেই শেষ করবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান খান মজলিশ বলেন, এমন জনবহুল সড়কের উন্নয়নমূলক কাজ বন্ধ রেখে ঠিকাদার চলে গিয়েছিল। এতে শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী নাজমুল করিমের বক্তব্য নিতে এ প্রতিবেদক তার অফিসে গেলে তিনি কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হননি। তবে সাটুরিয়া উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শিউলি আক্তার বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement