১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


হুমকির মুখে খাদ্য নিরাপত্তা

বেড়া ও সাঁথিয়ায় অবাধে টপ সয়েল বিক্রি

সাঁথিয়ার চরভদ্রকোলা স্কেভেটর দিয়ে ফসলী জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

পাবনার বেড়া ও সাঁথিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমির শ্রেণী পরিবর্তন ও পরিবেশ আইন অমান্য করে কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী মহল। এতে একদিকে যেমন ফসল উৎপাদন কমছে, তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতেই রাতের বেলা মাটি কাটা হচ্ছে বলে অনেকে অভিযোগ করেন।
অবাধে ফসলি জমির মাটি কাটায় আশঙ্কাজনকভাবে কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এদিকে শুধু টপ সয়েল কাটায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। জানা যায়, টপ সয়েল বেশ আঠালো হওয়ায় এই মাটির ইট ভালো হয়। এ জন্য ভাটা মালিকদের কাছে এই মাটির চাহিদা বেশি।
সন্ধ্যার পর হতেই অবাধে চলাচল শুরু হয় মাটিভর্তি লরি ও ড্রাম ট্রাক। চলে রাতভর। মাটিবাহী ট্রাকের প্রভাব পড়ছে সড়কগুলোতেও। অনেকে অভিযোগ করছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাটি ব্যবসায়ীরা তাদের এ কার্যক্রম দিন দিন বাড়িয়েই চলছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেড়া উপজেলার আমিনপুরের সৈয়দপুর আত্রাই নদীতে দু’টি পয়েন্ট, রানীগ্রাম, ঢালারচর ইউনিয়নের কাসেম মোড়, দাঁতিয়া, নান্দিয়ারা, ঘোপসেলন্দা এবং সাঁথিয়া উপজেলার মহিষাখোলা, হুইখালি, চরভদ্রখোলা, মাছগ্রাম, মুক্তার বিলসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে রাতের আঁধারে কাটা হচ্ছে মাটি। আগে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু এলাকায় মাটি কাটা হলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে কয়েক গুণ। অনেকে আবার পুকুর সংস্কারের নামে মাটি বিক্রি করছেন।
মাটি ব্যবসায়ীদের থাবা থেকে বাদ যাচ্ছে না সরকারি খাস জমি, খাল-বিল ও নদ-নদীর চরাঞ্চলও। এসব মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটা ও ভিটা ভরাট কাজে। গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেয়ায় ইতোমধ্যে শতাধিক একর কৃষি জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে। আগে জমিগুলোতে ধানসহ নানা ফসল চাষ করা হতো। এখন এসব পুকুরে মাছের চাষ হচ্ছে। এতে কমে যাচ্ছে ফসল উৎপাদন।
বেড়া উপজেলার আমিনপুর গ্রামের কয়েকজন জানান, আমিনপুর থানা এলাকায় ভেকু দিয়ে সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত কৃষি জমির মাটি কাটা হয়। আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মাটি কাটা হলেও থানা পুলিশ অথবা প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তারা জানান, এই মাটি কাটার সাথে জড়িত ক্ষমতাসীন দলের কিছু প্রভাবশালী নেতা। মাটিভর্তি ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় গ্রামীণ সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস সাধারণ মানুষের নেই। স্থানীয়দের ধারণা থানা পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই মাটির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কাজীরহাট-বগুড়া মহাসড়কের পাশে সাঁথিয়া উপজেলার করমজা ইউনিয়নের মহিষাখোলা গ্রামে। এই গ্রামের সামনে স্কেভেটর মেশিন দিয়ে তিন ফসলি জমির মাটি কেটে পুকুর করা হচ্ছে। এর চারপাশে রয়েছে বোরো ধান, তিল, পেঁয়াজ ও মরিচ ক্ষেত। পার্শ্ববর্তী জমির মালিকরা জানান, ভারী বৃষ্টি বা বর্ষা হলে পুকুরে আমাদের জমির পাড় ভেঙে যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় নেই। নিরুপায় হয়ে জমির মালিকদের অনেকেই টপ সয়েল বিক্রি করে দিচ্ছেন।
সাঁথিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জিব কুমার গোস্বামী বলেন, ফসলি জমির উপরিভাগের (টপ সয়েল) ৬ থেকে ১২ ইঞ্চির মধ্যে মাটির জৈব উপাদান বেশি থাকে। সেই মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হলে জমির জৈব উপাদানও চলে যায়। এতে জমিতে কয়েক বছর ফসল উৎপাদন হয় না। ফসলি জমির মাটি কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করাও বেআইনি।
সাঁথিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাতুল ইসলাম জানান, কৃষি জমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। পুরনো পুকুর পুনঃসংস্কার করা যেতে পারে, তবে পুকুর মালিকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যাচাই-বাচাইয়ের পর এ বিষয়ে অনুমতি দেয়া হয়। কৃষি জমির মাটি কাটার সাথে জড়িতদের প্রথমে সতর্ক করা হয়। তারপর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement