১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


মাদারীপুর হাসপাতালে মালামাল সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম

দন্তচিকিৎসক নেই, অথচ খরচ এক কোটি নব্বই লাখ টাকা
-

মাদারীপুর সদর হাসপাতালে ওষুধসহ আনুষঙ্গিক মালামাল সরবরাহের কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাগজে-কলমে সরবরাহ থাকলেও বাস্তবে তার উপস্থিতি নেই। এতে করে এক দিকে বঞ্চিত হচ্ছে সেবা নিতে আসা সাধারণ রোগীরা, অন্য দিকে গচ্চা যাচ্ছে সরকারের কোটি কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, মাদারীপুর সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালামাল সরবরাহের কাজে দায়িত্বপ্রাপ্ত সিন্ডিকেটের কাছেই জিম্মি হয়ে আছে। রোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে সম্প্রতি দুদকের একটি টিম হাসপাতালটিতে ঝটিকা অভিযান চালায়।
জানা গেছে, গত পাঁচ বছর ধরে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে মালামাল সরবারহের কাজ পাচ্ছে একই পরিবারের দুইটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাদের হাতেই জিম্মি হয়ে আছে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মালামাল সরবরাহের কাজ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হাসপাতালটিতে তিন কোটি ৩৮ লাখ ৫৫ হাজার ২১৬ টাকার মালামাল সরবারহ করা হয়। সরবরাহের কাজ পায় মেসার্স তাসিন এন্টারন্যাশনাল ও মিজান ট্রেডিং কোং নামে দু’টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দু’টির মালিক সিরাজুল আলম খান ও মিজান খান এবং এরা দু’জন আপন ভাই। সিরাজুল আলম খান মাদারীপুর পৌরসভার কাউন্সিলর এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে মালামাল সরবরাহ করা হয় চার কোটি ১৭ লাখ ৫৮ হাজার ১১৯ টাকার। ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ওসব মাল সরবারাহ করে। ২০২০-২১ অর্থবছরেও ওই দুই ভাইয়ের প্রতিষ্ঠান চার কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার ৩৫৭ টাকার মালামাল সরবরাহ করে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মিজান ট্রেডিং কোং ছয় কোটি ৯ লাখ ৭১ হাজার ১২১ টাকার মালামাল সরবরাহ করে।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন কার্যালয় ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ছয়টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে শিডিউল বিক্রি হয় ৯৮টি। জমা পড়ে মাত্র ১৩টি শিডিউল। অবাক করার বিষয় হলো চলতি অর্থবছরেও কাজ পেয়ে যায় ওই দুই ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মিজান ট্রেডিং এবং তাসিন ইন্টারন্যাশনালই। বরাদ্দকৃত পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকার ‘ক’ গ্রুপের ইডিসিএল-বহির্ভূত ওষুধ সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ২৫%, ‘খ’ গ্রুপের সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি ক্রয়ের জন্য ১২%, ‘গ’ গ্রুপে লিলেন সামগ্রী ক্রয়ের জন্য ৫%, ‘ঘ’ গ্রুপে গজ-ব্যান্ডেজ ক্রয়ের জন্য ৫%, ‘ঙ’ গ্রুপে কেমিক্যাল ক্রয়ের জন্য ৩% এবং ‘চ’ গ্রুপে আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ৩% বরাদ্দ রাখা হয়।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, গত অর্থবছরে গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ লাখ ৯৯ হাজার ৮৬৫ টাকা। লিলেন কাপড়ের জন্য বরাদ্দ ছিল ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার ৯৪০ টাকা। সে হিসাবে প্রতিদিন গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা ও লিলেন কাপরের জন্য খরচ হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। অথচ প্রতিদিনই রোগীদের নিজ খরচেই কিনতে হয় এসব সামগ্রী। এক শ’ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালের জন্য গত অর্থবছরে আইভি ফ্লুইড ও দন্তচিকিৎসার উপকরণ (ওষুধ) কেনা হয়েছে এক কোটি ৯০ লাখ ৩১ হাজার ১৮৪ টাকার। অথচ এই হাসপাতালে দন্তচিকিৎসকই নেই দুই বছর ধরে। দন্তচিকিৎসক না থাকলেও বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হয়ে গেছে। এ ছাড়াও অন্যান্য ওষুধও কেনা হয়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৯৭৩ টাকার। মাদারীপুরের পাঁচখোলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রাজ্জাক বলেন, জ্বর আর গ্যাস্টিকের ওষুধ ছাড়া সব ওষুধই তো আমাদের কিনে নিতে হয়। হাসপাতাল থেকে বলা হয় সাপ্লাই নেই।
অবশ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠাণ এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলে, তারা নিয়মতান্ত্রিকভাবেই মালামাল সরবরাহ করেছেন। হাসপাতালের ঠিকাদারি কাজে কোনো ধরনের অনিয়মের সাথেই তারা জড়িত নন।
মাদারীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদ পারভেজ বলেন, মাদারীপুর সদর হাসপাতালে যারা ওষুধ সাপ্লাইয়ের কাজ করেন, তারা গত দুই দশক ধরেই ওষুধ ও অন্যান্য চিকিৎসাসামগ্রী সাপ্লাই করে আসছেন। তারা শক্তশালী এক সিন্ডিকেট।
এ ব্যাপারে মাদারীপুরের সিভিল সার্জন ডা: মুনীর আহমেদ বলেন, মালামাল সরবরাহের কাজে অনিয়ম নেই। তবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এলে তদন্ত করা হবে। দন্তচিকিৎসক না থাকলেও এই খাতে কোটি টাকা খরচের ব্যাপারে তিনি বলেন, ওই টাকা অন্য খাতে খরচ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement