৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাতক্ষীরায় খাল খননে অনিয়ম গচ্চা গেল ১০ কোটি টাকা

খননের পরপরই সাতক্ষীরার প্রাণসায়ের খাল কচুরিপানায় ভরে গেছে : নয়া দিগন্ত -

সাতক্ষীরা শহরের বুক চিরে প্রবাহিত প্রাণসায়ের খালটি সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। মোটা অঙ্কের টাকা খরচ করে দুই বছর আগে খালটি পুনঃখনন করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রাণসায়ের খালে সবুজের সমারোহ। খালটির বুক ভরে গেছে কচুরিপানায়। এমন পরিস্থিতিতে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভারী বর্ষণ হলে পানি নিষ্কাশন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জেলার নাগরিক নেতারা।
সামান্য বৃষ্টিতেই সাতক্ষীরায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। বর্ষা মৌসুমে কয়েক মাস ধরে শহরের তিন ভাগের দুই ভাগ থাকে জলমগ্ন। বর্ষা মৌসুমে পৌরসভার পুরনো সাতক্ষীরা, বদ্দিপুর কলোনি, রসুলপুর, পলাশপোল, কামালনগর, ইটাগাছাসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বাড়িঘরে পানি উঠে যায়। এ অবস্থা চলে কয়েক মাস। এ সময় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয় পৌরসভার নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষদের।


সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় প্রাণসায়ের খাল খনন করা হয়। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার খাল খননে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে শুরু থেকেই। কাদাপানি না শুকিয়েই খনন করার কারণে এ অভিযোগ ওঠে।
সূত্র মতে, ১৮৬৫ সালে সাতক্ষীরার জমিদার প্রাণনাথ রায় শিক্ষার প্রসারে পিএন হাইস্কুল এবং ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসারে প্রাণসায়ের খাল খনন করেন। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খেজুরডাঙ্গি এলাকার বেতনা নদী থেকে সাতক্ষীরা শহর হয়ে এল্লারচর মরিচ্চাপ নদী পর্যন্ত এ খালের দৈর্ঘ্য প্রায় ১৩ কিলোমিটার। প্রথম অবস্থায় এ খালের প্রশস্ততা ছিল ২০০ ফুটের বেশি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সে সময় বড় বড় বাণিজ্যিক নৌকা এসে ভিড় জমাত এ খালে। এর ফলে সাতক্ষীরা শহর ক্রমেই সমৃদ্ধশালী শহরে পরিণত হয়। আর ১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মতামতকে প্রাধান্য না দিয়ে বন্যার পানি নিয়ন্ত্রণের নামে খালের দুই প্রান্তে পানি উন্নয়ন বোর্ড স্লুইস গেট নির্মাণ করে। এতে খালে স্বাভাবিক জোয়ারভাটা বন্ধ হয়ে যায় এবং এটি বদ্ধ খালে পরিণত হয়।


সূত্র আরো জানায়, জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডের আওতায় ২০১২ সালের ১৮ অক্টোবর খালটি খনন করা হয়। ৯২ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় ১০ কিলোমিটার খাল সংস্কারে নামমাত্র খনন করে প্রকল্পের বেশির ভাগ টাকাই লোপাট করার অভিযোগ ওঠে। খাল খননের নামে খালের দুই ধারে শত শত গাছ কেটে ফেলা হয়। এতে আবারো নেমে আসে পৌরবাসীর দুর্ভোগ। শুষ্ক মৌসুম শীতকালেও শহরে জলাবদ্ধতা বিরাজ করতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় খালের পানিপ্রবাহ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাতক্ষীরা পওর বিভাগ-১ এর অধীনে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরস্থ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্পের (১ম পর্যায়) আওতায় প্রাণসায়ের খাল খনন করা হয়।
সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ থেকে খেজুরডাঙ্গা ৬ ভেন্ট স্লুইস গেটস্থ বেতনা নদীর সংযোগস্থল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য টেন্ডারের মাধ্যমে চার কোটি ৪৬ লাখ টাকা চুক্তি কার্যাদেশ দেয়া হয়। টেন্ডার অনুযায়ী খালটির ডিজাইন দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। যার প্রথম অংশে চরবালিথা থেকে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ পর্যন্ত খনন করা হয়। আর দ্বিতীয় অংশে কুখরালী দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ থেকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত।
নাগরিক কমিটির নেতা অধ্যাপক আনিসুর রহিম বলেন, সবার আগে দরকার জনসচেতনতা। খালটি খননপূর্বক সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়ে ছিলাম, কিন্তু কাজ হয়নি। খালটির বর্তমান অবস্থা খুবই খারাপ। শহরের পাকাপুলের মোড় থেকে সুলতানপুর বড়বাজার ব্রিজ পর্যন্ত এবং টাউনবাজার ব্রিজ থেকে স্টেডিয়াম ব্রিজ পর্যন্ত খালটি কচুরিপানায় ভরে গেছে। ভারী বর্ষণ হলে এই খাল দিয়ে শহরের পানি প্রবাহিত হতে পারবে না। ফলে দেখা দেবে জলাবদ্ধতা।
নাগরিক নেতা অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, প্রাণসায়ের খাল ভরাট ও দখল হওয়ার পর নতুন করে খনন করা হয়। কিন্তু যেভাবে খনন করা হয়েছে, তাতে প্রাণসায়ের প্রাণ ফিরে পাওয়া তো দূরের কথা, শুধু সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।


সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে (বিভাগ-২) নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরার সদর উপজেলার এল্লারচর থেকে খেজুরডাঙ্গী পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার খাল খননের প্রাক্কলিত ব্যয় ১০ কোটি ১৩ লাখ টাকা। নকশা অনুযায়ী এই খাল কাটার কথা ছিল। খালের উপরিভাগের প্রস্থ ৭৫ থেকে ৮০ ফুট হওয়ার কথা ছিল। গভীরতা ৬ থেকে ৮ ফুট ও তলদেশের প্রস্থ ২৫ ফুট হওয়ার কথা ছিল। এ খাল কাটার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে। খাল খননের কার্যাদেশ দেয়া হয় ২০১৯ সালের ১ আগস্ট। খালের উপরিভাগের প্রস্থ কোথাও কোথাও ৫৫ ফুটের বেশি হয়নি। ৩-৪ ফুটের বেশি গর্ত করা হয়নি। খননের পর তলদেশের প্রস্থ ১৫ থেকে ১৮ ফুটের বেশি হয়নি। খাল শুকিয়ে কাটার কথা থাকলেও কাটা হয় পানি রেখেই।
সাতক্ষীরা পাউবো বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, প্রাণসায়ের খাল খনন ২০২০ সালের ৩০ জুনের মধ্যে শেষ করার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় তা হয়নি। এ জন্য ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছিল। খালপাড়ের মানুষ মামলা করায় এবং এস্কেভেটর মেশিন চলাচলের জন্য জায়গা বের করতে দেরি হওয়ায় কাজ করতে দেরি হয়েছিল বলে দাবি করেন তিনি। বিশেষ করে শহর অংশে নকশা অনুযায়ী কাজ হয়নি স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, পরে আবার খাল খনন করতে হবে। না হলে বিল দেয়া হবে না। কিন্তু তার পরের খবর আর জানা যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
৪৪তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশিত ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ শিকারে উপকূলের ৪ লাখ জেলে চৌগাছায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু ইসতিসকার নামাজে পুলিশের বাধা ও গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের হবিগঞ্জে স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড পর্যটন গন্তব্য থেকে যেভাবে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য দেশে ৩৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড পিরোজপুরে আ’লীগ নেতার চেয়ারম্যান পদের প্রার্থিতা স্থগিত শ্রমিকের অধিকার আদায়ের জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : আ.ন.ম শামসুল ইসলাম ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র সাময়িক বরখাস্ত, প্যানল মেয়রকে দায়িত্ব অর্পণ বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত স্থগিত

সকল