২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আতঙ্কের নাম বড় খারদিয়া গ্রাম

৭ মাসে ৩ খুন, ৫০০ বাড়ি ভাঙচুর, সচিবের বাড়িতে আগুন
সালথার বড় খারদিয়া গ্রামে সাম্প্রতিক এক সংঘর্ষে ভাঙচুর করা একটি বাড়ি : নয়া দিগন্ত -

ফরিদপুরের সালথা উপজেলার একটি গ্রাম, ‘বড় খারদিয়া’ যেন এক আতঙ্কের নাম। মোট ১৮টি পাড়া নিয়ে গঠিত বিশাল এই গ্রামে জনসংখ্যা ৮ হাজারেরও বেশি। নারী-পুরুষ মিলে ভোটার সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। একাধিক সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সমাজসেবক, রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ অসংখ্য বিশিষ্টজনের জন্ম এখানে। আর্থিকভাবে এখানকার বেশির ভাগ মানুষই সচ্ছল। জমিতেও প্রচুর ফসল ফলে। অথচ যুগ যুগ ধরে গ্রামটিতে বিরাজ করছে অশান্তির উত্তাপ ও আতঙ্ক।
গত সাত মাসে এ গ্রামে একাধিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে তিন যুবক নিহত ও শত শত মানুষ আহত হয়। এসব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত কয়েক মাসে এই গ্রামে ভাঙচুর করা হয়েছে পাঁচ শতাধিক বসতবাড়ি। এক সচিবের বাড়িতেও আগুন দেয়া হয়েছে। রীতিমতো ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে গ্রামটি। শান্তি ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পুলিশ। কিন্তু কে শোনে কার কথা। অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার ও গ্রেফতার করেও যেন কাজ হচ্ছে না কোনো। গ্রামবাসীরা তাদের মতো সহিংসতার সংস্কৃতি ধরে রাখতেই যেন মরিয়া। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ইতোমধ্যে গ্রাম ছেড়ে অনেকেই শহরে গিয়ে বসবাস করছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর যদুনন্দী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মিয়া ও ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্লার সমর্থকদের মধ্যে খারদিয়া গ্রামে যে সংঘর্ষ হয়, তাতে নিহত হন মারিজ শিকদার। গত ৫ মে এ দুই দলের মধ্যে ফের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন সিরাজুল ইসলাম। আহত আসাদ মোল্লা মারা যান গত বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায়।
গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে খারদিয়া গ্রামে গিয়ে দেখি গা শিউরে ওঠার মতো অবস্থা। উল্লেখিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উভয় দলের সাধারণ মানুষের শত শত টিনের ঘর ভেঙে চুরমার করা হয়েছে। এমনকি ইটের তৈরি বাড়ি ও দালান ঘরের দেয়াল পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। মুজিবর রহমান নামে এক উপ-সচিবের বসতঘরের ভেতরে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্রে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরে থাকা নামি-দামি ব্রান্ডের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। এমন ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র দেখে কার না গা শিউরে ওঠে!
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহতরা সবাই ছিলেন শ্রমিক। এদের মধ্যে কেউ ছিলেন সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। বাড়িতে তাদের শুনসান নীরবতা, স্বজন হারানোর বেদনায় কেউ নির্বাক চেয়ে আছে। কেউবা দাবি করছেন বিচারের। যাদের জন্য তারা জীবন দিলো, তারা এখন কোথায়?
সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত রাবেয়া বেগম, তাসলিমা আক্তার ও আমেনা খাতুন নামে তিন নারী জানান, আমাদের স্বামীরা সবাই ছিল দিনমুজুর। এখন কী উপায় হবে আমাদের? একাধিক কৃষক বলেন, নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে এবং দল ভারি করতে আমাদেরকে তারা বাধ্য করে দলে ভিড়তে। দল ভারি না করলে নিজেদের লোকেরাই হামলা করে। অথবা মামলা দিয়ে হয়রানি করে।
খারদিয়ার বাসিন্দা কয়েকজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, আমাদের গ্রামটা অর্থনীতিকভাবে সমৃদ্ধ। গ্রামে ঢুকলে যে কারো মনে হবে এটা যেন কোনো মিনি শহর। কিন্তু মোড়লদের কর্মকাণ্ডে সেই মিনি শহর এখন ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। কি বলবো, এই গ্রামের বাসিন্দা হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেও লজ্জা লাগে। কোনো সভ্য সমাজের মানুষ এ গ্রামে বসবাস করতে চাইবে না।
সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো: সুমিনুর রহমান বলেন, খারদিয়া গ্রামে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। ফরিদপুর পুলিশ সুপার আলিমুজ্জানও গ্রামটি পরিদর্শন করে গেছেন। তার নির্দেশে গ্রামের মাতবর ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করা হয়েছে। একাধিকবার অভিযান চালিয়ে দেশীয় অস্ত্রসহ কয়েকজনকে ধরে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলে পাঠানো হয়েছে। ওসি সাহেবও সার্বক্ষণিক ওই এলাকার খোঁজখবর রাখছেন। পরিবেশ ভালো রাখতে গ্রামে পুলিশের ক্যাম্প বসানো হয়েছে। আশা করি দ্রুতই গ্রামটিতে শান্তির পরিবেশ তৈরি হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
না’গঞ্জের আলোচিত ৭ খুন : এক দশক ধরে বিচারের অপেক্ষায় স্বজনরা ডেমরায় অছিম পরিবহনে আগুন : যুব ও ছাত্রদলের ৩ জন গ্রেফতার ‘ডা: জাফরুল্লাহকে নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে আলোচনা করা উচিত’ শেখ জামালের জন্মদিন আজ গুচ্ছের বিজ্ঞান বিভাগে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ৯০ শতাংশ প্রচণ্ড গরমে জবিতে অসুস্থ শিক্ষার্থী দিতে পারলেন না পরীক্ষা কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে রাজনৈতিক চাপ নেই : ডিএমপি কমিশনার ময়মনসিংহ ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠিত স্টুডেন্টস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের বৃত্তি ও সনদ বিতরণ নিরাপদ প্রাণিজ প্রোটিন উৎপাদন করতে হবে : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বনানীতে মোটরসাইকেল টেনে হিঁচড়ে নেয়ার সময় বাসে আগুন

সকল