২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উচ্ছ্বাস উদ্বেগের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া

আশ্রয়ণ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ঘর হস্তান্তর
-

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর দ্বিতীয় পর্যায়ের ঘর নিয়ে উচ্ছ্বাস ও উদ্বেগের মিশ্রপ্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জমিসহ ঘর পাওয়া ভূমিহীনরা। আজ (রোববার) এসব ঘরের চাবি হস্তান্তর করা হবে। প্রথম ধাপের ঘর পাওয়ার পর পানির সঙ্কট, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকা, অনেক ক্ষেত্রে সাবলম্বীদের ঘর বরাদ্দ দেয়াসহ ঘরে উঠা নিয়ে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। কিছু দিন যেতে না যেতেই ঘর ভেঙে পড়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। সব মিলিয়ে আশা ও শঙ্কার মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে উপকারভোগীদের মধ্যে।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরিদপুর জেলার ৯টি উপজেলার ১৫৭২টি পরিবারের ভূমি ও গৃহহীন পরিবার জমিসহ ঘর পাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে কবুলিয়ত, জমির খতিয়ান, গৃহ প্রদানের সনদসহ ঘরের চাবি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, অশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে জেলায় ২ হাজার ৩৫টি ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। সব মিলিয়ে জেলায় প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৬০৭টি পরিবারের মাঝে ২ শতাংশ জমিসহ ঘর হস্তান্তর করা হবে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ১৫৩টি, সদরপুরে ৩৭০টি, সালথায় ২০০টি, মধুখালীতে ৪০টি, আলফাডাঙ্গায় ২৩০টি, বোয়ালমারীতে ১৩০টি, নগরকান্দায় ১১০টি, চরভদ্রাসনে ২০০টি এবং ভাঙ্গায় ১৩৯টি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে আলফাডাঙ্গা উপজেলায় গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য ‘স্বপ্ননগর’ নামে নতুন একটি গ্রাম গড়ে তোলা হয়েছে।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে পঞ্চগড় জেলার পাঁচটি উপজেলায় নতুন করে আরো ৭১৫টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার ঘর পাচ্ছেন। শনিবার দুপুরে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল মান্নান পঞ্চগড় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পঞ্চগড়ের সব উপজেলায় গৃহ নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রত্যেক পরিবারের জন্য ২ শতক জমিসহ নির্মিত ঘর এরই মধ্যে দলিল কবুলিয়ত ও মিউটেশন সম্পন্ন করে উপকারভোগীদের মধ্যে হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের প্রত্যক্ষ মনিটরিং এবং সুপারভিশনে এ জেলার ভূমিহীন পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং উপকারভোগী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেয়া হয়েছে। এছাড়া নির্মাণ কাজের গুণগত মান বজায় রাখার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকরা প্রত্যক্ষভাবে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করেন।
লাকসাম (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, লাকসামের গৃহহীন ও ভূমিহীন ৩৫ পরিবারকে পাকা ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছে সরকার। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রঙিন টিনের ছাউনি দ্বারা নির্মিত ১৯ দশমিক ৬ ফুট বাই ২২ ফুটের সেমিপাকা ঘরে রয়েছে দুটি বেড রুম, বারান্দা, টয়লেট ও কিচেন। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের মধ্যে লাকসাম পূর্ব ইউনিয়নে ১৪টি, আজগরা ইউনিয়নে ৮টি, বাকই ইউনিয়নে ৫টি, মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নে ৫টি ও উওরদা ইউনিয়নে ৩টি। লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ কে এম সাইফুল আলম বলেন, এসব গৃহের হস্তান্তর সনদ ও তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, নাঙ্গলকোটের ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের মাঝে জমি ও নতুন গৃহ পাওয়ার আনন্দে খুশির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারগুলোর একটি গৃহ হবে তারা কখনো চিন্তা করেননি। সব ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য জমি ও গৃহ প্রদান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে নাঙ্গলকোটে ‘ক’ শ্রেণীর পরিবার পুনর্বাসনে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫৩টি গৃহ নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪৩টি গৃহের মধ্যে রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৪৫টি গৃহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া উদ্বোধন করবেন। দুই রুম বিশিষ্ট সেমিপাকা ঘরগুলোতে রান্না ঘর, টয়লেট এবং বারান্দা রয়েছে।
ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর গ্রামের মর্তুজ আলী ও জোসনা বেগম দম্পতির নিজের কোনো ঘর ছিল না। কিন্তু মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ২ শতক জমি ও দুই কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা ঘর পেয়ে খুশিতে আত্মহারা এ দম্পতি। শুধু মর্তুজ আলী-জোসনা বেগম দম্পতি নয় একইভাবে তাদের অনুভূতির কথা ব্যক্ত করেন জমি ও ঘর পাওয়া দিগড় গ্রামের অনেকেই।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ১৭টি স্থানে খাস জমিতে ভূমিহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে ২ শতক জমিসহ ঘর নির্মাণ করে দেয়া হচ্ছে।
পাবনা সংবাদদাতা জানায়, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের আবাসন সুবিধা নিশ্চিত করতে মুজিববর্ষে দ্বিতীয় ধাপে পাবনার ৩৩৭ পরিবার পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ‘স্বপ্নের নীড়’। ইতোমধ্যে জেলার ৯ উপজেলার ৩৩৭টি ‘স্বপ্নের নীড়’ নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। শুক্রবার সকালে পাবনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়। রোববার প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এর আগে প্রথম ধাপে এক হাজার ৮৬ পরিবার অনুরূপ ঘর পেয়েছে।
নীলফামারী সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর পাচ্ছে নীলফামারীর অসহায় ১ হাজার ১০টি পরিবার। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী জানান, নীলফামারীর ৬ উপজেলায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ হাজার ২৫০টি পরিবারের মধ্যে ১ হাজার ১০টি পরিবারকে ঘর, চাবি ও জমি হস্তান্তর করা হবে। এর মধ্যে সদরে ১৫০টি, ডোমারে ২০০টি, ডিমলায় ১৫০টি, জলঢাকায় ৩০০টি, কিশোরগঞ্জে ১৫০টি ও সৈয়দপুর উপজেলায় ৬০টি পরিবার ঘর পাচ্ছে। ৩৯৪ বর্গফুটের একক গৃহ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর ১২৫০টি পরিবারের জন্য জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২১ একর ৭০ শতাংশ।
নওগাঁ সংবাদদাতা জানান, ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের মধ্যে পুনর্বাসন কার্মসূচির আওতায় ঘর হস্তান্তর কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় নওগাঁর সাপাহারে দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পরিবারের মধ্যে ঘর হস্তান্তর করা হবে।
পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, দ্বিতীয় পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন হতদরিদ্র দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলার ৫২৭টি পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসেবে জমির মালিকানা দলিলসহ বসতঘর পাচ্ছেন। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার ৮ উপজেলাসহ চট্টগ্রামের ১৩টি উপজেলার ৬৪৯টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমির মালিকানাসহ বসতঘর প্রদান করা হবে। এর মধ্যে শুধু দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলায় ৫২৭টি পরিবার পাচ্ছে জমির মালিকানার দলিলসহ বসতঘর।
মুকসুদপুর (গোপালগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় (২য় পর্যায়ে) মুকসুদপুরে আরো ১৫০টি গৃহহীন পরিবারের মুখে হাসি ফুটতে যাচ্ছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৫০টি বসতহারা পরিবারকে সেমিপাকা এসব ঘর করে দেয়া হচ্ছে। আজ (১৯ জুন শনিবার) বেলা ১১টায় উপজেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এসব ঘর হস্তান্তর উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্সে উপজেলা নির্বাহী জোবায়ের রহমান রাশেদ সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুর জেলার ১৩টি উপজেলায় ১২ হাজার ভূমিহীন পরিবার সরকারিভাবে জমির মালিকানাসহ ইটের তৈরি ঘরবাড়ি পেয়ে বেশ খুশি তারা। উপজেলার ১১০৭টি পরিবার ঘর পেয়েছে। ৪ নং ইউনিয়ানের বানিয়াল এলাকায় ১১টি পরিবার, শিংড়া ইউনিয়নে ২৩৪টি এবং পালশায় ৩১২টি ঘর ইতোমধ্যে মালিকানা দলিল ভূমিহীনদের হস্তান্তর করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement