২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বর্জ্যরে দুর্গন্ধে ভালুকা পৌরবাসীর দুর্ভোগ

-

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর এলাকায় নদীর পাড়ে অবস্থিত শেফার্ড ও গ্লোরী ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা শতাধিক কারখানার বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যরে গন্ধে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন খিরুনদী ও বিভিন্ন খালপাড়ের বাসিন্দারা। সংশ্লিষ্ট বিভাগের তদারকি না থাকায় এবং তাদের রহস্যজনক নীরবতার কারণে অধিকাংশ কারখানার বিরুদ্ধে ইটিপি বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। ফলে নদী ও খাল বিলের প্রবাহমান বর্জ্য সর্বত্রই দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ পেটের পীড়া ও চর্মরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে।
খিরু নদী ও খাল-বিলপাড়ের লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগে পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী খিরু নদীটি ছিল নাব্যতায় পরিপূর্ণ। এই নদী দিয়ে বড় বড় বজরা নৌকা এমনকি বিশাল আকারের লঞ্চ চলাচল করত। এলাকার হাজার হাজার মানুষ এই নদীতে মাছ শিকার করে তাদের পরিবার পরিজনের চাহিদা মিটিয়ে ও বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। আশপাশের কয়েক এলাকার জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র পথ ছিল খিরু নদী। ভাটি এলাকার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ও বরমী বাজার থেকে অত্র এলাকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য কিনে এই নদী দিয়ে নৌকার মাধ্যমে পরিবহন করে এলাকার বিভিন্ন চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। কিন্তু ৯০ দশকের পর থেকে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত মিল কারখানা স্থাপনের পর থেকে কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য ও পলি জমে ঐতিহ্যবাহী এই খিরু নদীটি ভরাট হতে শুরু করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে অর্ধশতাধিক ডায়িং ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্র্জ্য লাউতি ও বিলাইজুড়িসহ বিভিন্ন খাল বিল হয়ে এই খিরু নদীতে এসে পড়ছে। তা ছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দুই পাড়ে বালু স্তূপাকারে রেখে ব্যবসা করার কারণেও নদীটি ভরাট হয়ে যাচ্ছে।
ভালুকা খিরু ব্রিজের দক্ষিণ পাড়ে প্রায় ১৫ বছর আগে গড়ে ওঠা শেফার্ড গ্রুপের শেফার্ড ডায়িং ফ্যাক্টরির বিষাক্ত বর্জ্যে দূষিত হতে শুরু করে খিরু নদীর পানি। আর সম্প্রতি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড খারুয়ালী গ্রামের গজারিয়া খালপাড়ে গড়ে ওঠা গ্লোরী ডায়িং ফ্যাক্টরির বর্জ্য শোধনযন্ত্র থাকলেও তা যে শুধুই লোক দেখানো, তা এখন সবারই জানা। পরিবেশ অধিদফতরের সাথে ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক থাকায় কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খিরু নদীতে ফেলতে তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তারা সরাসরি মোটা পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য খিরু নদীতে ফেললেও সংশ্লিষ্ট দফতরের লোকজন যেন দেখেও না দেখার ভান করছে বছরের পর বছর।
ভালুকা শেফার্ড গ্রুপের ডিজিএম মোখলেছুর রহমান জানান, আমরা সার্বক্ষণিক ইটিপি প্ল্যান্ট চালু রেখে আসছি। তিনি আরো জানান, তাদের রয়েছে বায়োলজিক্যাল ইটিপি, ফলে তাদের মিলের বর্জ্যরে কারণে নদীর পানি নষ্ট হওয়ার কোনো কারণ নেই।
গ্লোরী ডায়িং মিলের জেনারেল ম্যানেজার আফছার উদ্দিন ও প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিক দাস জানান, তাদের ফ্যাক্টরিটি এখানো পুরোপুরি চালু হয়নি। আপাতত ৫০০ শ্রমিক দিয়ে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে এবং পরীক্ষমূলকভাবে ইটিপিও পরিচালিত হচ্ছে। কিছু দিনের মধ্যেই সার্বিকভাবে ফ্যাক্টরিটির উৎপাদন কার্যক্রম চালানো হবে বলে জানান এই দুই কর্মকর্তা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার জানান, ডাইং মিল থেকে নির্গত গাঢ় বর্জ্যপানিতে অ্যামোনিয়া বেশি থাকে অর্থাৎ ইউরিয়ার পরিমাণ অত্যধিক থাকে। যে কারণে ধানগাছ খুব তাড়াতাড়ি বেড়ে যায়। আর তাতে পাতাপচা রোগ বিস্তার হয়ে ফলন নষ্ট হয়। এ ছাড়া ফ্যাক্টরি থেকে নির্গত বর্জ্যে কেমিক্যাল ও ধাতব পদার্থ থাকে যা গাছের খাদ্য হিসেবে ধানে মিশে যায়। আর ওই ধানের চাল ভাত হিসেবে খেলে তা মানবদেহে স্লোপয়জন হিসেবে ক্ষতি করে। কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি খাল বিল নদী নালায় ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, মিল কারখানার বিষাক্ত ধোয়া ও দূষিত বর্জ্যরে কারণে যেভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে তাতে ভালুকার পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলা প্রয়োজন। তা ছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময়েই বিভিন্ন ধরনের প্রদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা খাতুন জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে ওঠা মিল কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য খিরু নদী ও আশপাশ এলাকার খাল-বিল বা জলাশয়ে পড়ছে। এতে করে যে অসহনীয় পরিবেশ দূষণ ঘটছে সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় যা যা করণীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে বলে তিনি জানান।


আরো সংবাদ



premium cement