২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু এখন সময়ের দাবি

-

দেশের গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ঈশ্বরদীতে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় বিমান বন্দর। এটি উত্তরাঞ্চল শুধু নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জন্যও জাগিয়েছিল বিরাট আশা। অথচ সেই সম্ভাবনাময় বিমানবন্দরটিতে নিয়মিত বিমান অবতরণ বন্ধ রয়েছে দীর্ঘ দিন ধরে। মাঝে মধ্যে চালু হয়; কিন্তু চালুর কিছুদিনের মধ্যেই নানা অজুহাতে আবার বন্ধ করে দেয়া হয় বিমানবন্দরটি। কালের পরিক্রমায় আজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি শুধু চালুই নয়, এটিকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর করা সময়ের দাবি।
ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে জাতীয় সংসদে অনেকবার দাবি তুলেছেন সাবেক ভুমিমন্ত্রী মরহুম শামসুর রহমান শরীফ। তার মৃত্যুর পর পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস জাতীয় সংসদে তার প্রথম বক্তৃতায় দাবি করেন ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করতে হবে। ভৌগোলিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকা এবং কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যসমৃদ্ধ এক জনপদের নাম ঈশ্বরদী। এখানে রয়েছে উন্নত সড়ক, নৌ ও রেলপথের দারুণ এক সমন্বয়। এ কারণে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে এখানে গড়ে উঠেছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ হওয়ার পরও অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান দেথাশোনা ও যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ১৯৬০ সালে ৪১২ একর জমির ওপর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি চালু হয়। বর্তমানে বিমানবন্দরের মোট জমির পরিমাণ ৪৩৬ দশমিক ৬৫ একর, যার মধ্যে ৪ হাজার ৭০০ ফুট রানওয়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ম্যানেজার সেতাফুর রহমান।
বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রথম এই বিমানবন্দরটিতে নিয়মিত বিমান চলাচল শুরু হলে যাত্রী বাড়বে অনেকগুণ। ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ফিরে চান পাবনা শহরের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীরা ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, পবনা, সুজানগর, সাঁথিয়া, চাটমোহর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, কুষ্টিয়া, ভেড়ামারা, দৌলতপুর, রাজশাহীর বাঘা, নাটোরের লাল্পুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রামের আকাশপথে যাতায়াতকারী বিনষ্ট নাগরিকরা।
অপর দিকে ঈশ্বরদীতে যেসব জাতীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যখন তখন জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যাতায়াতের প্রয়োজন হয় তাদের মধ্যে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধি এবং মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের রাশিয়ান নাগরিক, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়, ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বাংলাদেশ ডাল গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএটিআই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বেনারসি শিল্প, রেশম বীজাগার, আবহাওয়া অধিদফতর, পাকশী পেপার মিল (বর্তমানে বন্ধ), ঈশ্বরদীতে অবস্থিত পাবনা সুগার মিলস লিমিটেড, দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় ম্যানেজার অফিসের (ডিআরএম অফিস) কর্মকর্তারা এই বিমানবন্দরটি চালু হলে বিরাট সুবিধা পাবেন।
এ বিষয়ে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের ম্যানেজার সেতাফুর রহমান জানান, এ বন্দরটির রানওয়েসহ সব কিছুই ঠিক আছে। বিমান অবতরণে কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই।
পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, ঈশ্বরদীর উন্নয়নের আমার প্রথম কাজ ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করা। আমি আমার মতো কাজ করছি এবং এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না।
জানা গেছে, ১৯৬০ সালে ৪১২ একর জমির ওপর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। তখন প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ে তৈরি করে ডাকোটা ডিসি-৩ বিমান চালু করা হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৯৭২ সালে মেরামত করে আবারো ঈশ্বরদী-ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটে প্রথমে ডাকোটা ডিসি-৩ এবং পরে ফোকার এফ-২৭ বিমান চালু করা হয়। এরপর লোকসানসহ নানা অজুহাতে ১৯৮৭ সালে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৯৪ সালের ১৭ জুলাই বিএনপি সরকার বিমানবন্দরটি সংস্কার করে আবার চালু করে। এরপর আবারো নানা অজুহাত দেখিয়ে ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর বিমানবন্দরটি বন্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ফের ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হয় ঈশ্বরদীতে। কিন্তু চার মাসের মাথায় ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আবারো বন্ধ হয়ে যায় এর কার্যক্রম। এ বিষয়ে সে সময়ে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বেসরকারি এয়ারলাইন্স নভোয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, উড়োজাহাজ অবতরণের জন্য যে প্রশস্ত রানওয়ে দরকার তা ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের নেই। কিন্তু ঈশ্বরদী বিমানবন্দর ম্যানেজার সেতাফুর রহমান জানান, এ বিমানবন্দরের রানওয়েসহ সব কিছুই ঠিক আছে। বিমান অবতরণে কোনো প্রতিবন্ধকতাই নেই।
অন্য দিকে ব্যবসায়ী মহল মনে করে, ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি চালু করা হলে অবশ্যই দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তারা এখানকার ইপিজেডে আরো বেশি করে বিনিয়োগ করবেন। দেশী ও বিদেশী শিল্পোদ্যোক্তারা আকাশপথে আসা-যাওয়ার বিষয়টি বারবার ইপিজেড কর্তৃপক্ষে অবহিত করেছেন। আকাশপথের অভাবে এবং সড়কপথে আসতে অনেক সময় লেগে যাওয়ায় তারা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তাদের এমন মন্তব্য শুনে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ সরকারের উচ্চমহলে যোগাযোগ করেছেন। ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করার বিষয়ে বিভিন্ন মহল থেকে জোর দাবি রয়েছে বলে জানা গেছে।
ঈশ্বরদী থেকে বিপুল পরিমাণ কৃষিপণ্য প্রতিদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন হাটবাজারে সরবরাহ করা হয়। পাশাপাশি দেশের বাইরেও রফতানি হয় এখানকার কৃষিপণ্য। বিমানব্যবস্থা চালু হলে সরকার এখান থেকে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় করতে পারবে। কারণ দেশের চাহিদার প্রায় এক-দশমাংশ সবজির উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। কৃষিপণ্য সরবরাহের জন্য অন্তত একটি বিমান চালু করলে দেশবাসী সময় মতো টাটকা সবজি হাতে পাবে। ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বড় বড় শহরগুলোতে কমে যাবে ট্রাকের যানজট।

 


আরো সংবাদ



premium cement