২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে কুষ্টিয়ার ২৬১ চালকল

চুক্তি করেও চাল না দেয়ায়
-

কুষ্টিয়া জেলার ২৬১ চালকলকে চুক্তি করেও বোরো মৌসুমে সরকারি গোডাউনে চাল সরবরাহ না করায় কালো তালিকাভুক্তি করা হচ্ছে। জামানত বাজেয়াপ্ত, প্রণোদনা বাতিল ও আগামী দুই মৌসুম চাল সরবরাহ থেকে চুক্তির বাইরে রাখার মতো সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে জেলা খাদ্য বিভাগ। জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার টন। সেখানে সময় বাড়িয়েও সংগ্রহ হয়েছে মাত্র ২২ হাজার টনের কিছু বেশি।
জানা গেছে, জেলায় অটো ও হাসকিংসহ চালকল রয়েছে ৫৩৫টি। এর মধ্যে অটো চালকলের সংখ্যা ৪৯টি। এ সময়ে ২৫৮টি হাসকিং (ম্যানুয়াল) ও তিনটি অটো রাইস মিল চুক্তি মোতাবেক এক ছটাক চালও সরবরাহ করেনি। ১২টি মিল আংশিক সরবরাহ করেছে আর বাকি ২৬৫টি চালকল পুরো চাল সরবরাহ করেছে। জেলায় এ বছর চুক্তি করেছিল ৫৩৫টি চালকল। কুষ্টিয়া সদরে ১৪৪টি, মিরপুরে ৬৭টি ও দৌলতপুরের ৪৭টি মিল এ বছর চাল সরবরাহ করেনি।
চালকল মালিকরা জানান, বোরো মৌসুমে ধানের দাম বেড়ে যাওয়া, চাল উৎপাদন খরচসহ বিভিন্ন হিসাব মিলিয়ে সরকারি দলের থেকে মিল মালিকদের খরচ পড়ছিল বেশি। এ কারণে অনেক মিল মালিক চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আর যারা চাল সরবরাহ করেছেন তারাও লোকসান গুনেছেন। তবে চুক্তির প্রথম দিকে যারা যারা চাল সরবরাহ করেছেন তাদের তেমন লোকসান হয়নি। পরে যারা চাল দিয়েছেন তাদের লোকসান হয়েছে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকারো বেশি। আর ছোট চালকল মালিকরা এমনিতেই লোকসানে আছেন। এ কারণে তারা চাল দিতে পারেনি।
খাদ্য অফিস সূত্র জানিয়েছে, ৩৪ হাজার টনের বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ২২ হাজার টনের সামান্য কিছু বেশি। এর মধ্যে বড় অংশ সরবরাহ হয়েছে কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। এ উপজেলায় দুটি ওসিএলডি রয়েছে। এর মধ্যে বড় বাজার ওসিএলডিতে (গোডাউনে) বেশি চাল সংগ্রহ হয়েছে। বড়বাজার গোডাউনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাকির হোসেন জানান, গোডাউনে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার ২০০ টন, তার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে ৯ হাজার ৩০০ টন। যে বরাদ্দ ছিল তার প্রায় ৭৬ ভাগের কাছে তিনি সংগ্রহ করতে সমর্থ হয়েছেন।
চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদিন জানান, এ বছর দেশে প্রচুর ধান উৎপাদনের পরও ধানের বাজার বেড়ে যায়। আর বোরো মৌসুমে মোটা ধানের উৎপাদন হয় একেবারেই কম। এ কারণে ধান কিনে চাল তৈরি করেই সরকার যে ৩৬ টাকা দর দিয়েছে তার ওপরে খরচ পড়েছে। এ কারণে মিল মালিকরা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা লোকসান দিয়েও চাল সরবরাহ করেছে। তবে যারা চুক্তি করে চাল দিতে ব্যর্থ হয়েছে তাদের ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আগে ভাবলে ভালো হয়। ছোট মিলাররা এমনিতেই দেউলিয়া হয়ে গেছে, তার ওপর কড়া পদক্ষেপ নিলে তারা আর উঠে দাঁড়াতে পারবে না। এ দিকে চাল দিতে পারেনি এমন মিল মালিকদের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। মিল মালিকদের যে ২ লাখ জামানত রয়েছে তা বাতিল হবে। পাশাপাশি তারা আগামী দুই মৌসুম চাল দিতে পারবে না। এর বিপরীতে যারা লোকসান মেনেও চাল দিয়েছে তাদেরকে বাড়তি নানা সুবিধা দেয়ার চিন্তা করছে সরকার।
বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিকদের কেন্দ্রীয় সংগঠনের সভাপতি আব্দুর রশিদ জানান, যারা লোকসানে চাল দিয়েছে তাদেরকে আগামীতে বাড়তি সুবিধা দিতে হবে। যারা লাভের সময় চাল দিবে আর লোকসানের সময় দেবে না তাদের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবে তা সরকারের বিষয়। তবে যারা সরকারের সাথে চুক্তি করে লোকসান হলেও চাল দিয়েছে তাদের বিষয়টি ভালোভাবে দেখা দরকার।’
জেলা খাদ্য কর্মকর্তা তাহসিনুল হক জানান, যারা চুক্তি করেও চাল দেয়নি তাদের তালিকা করা হয়েছে। কী কারণে চাল দিতে পারেনি তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আইন অনুযায়ী এসব মিলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি সরকার আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি ভাবছে। পাশাপাশি যারা লোকসানে চাল দিয়েছে তাদের সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে মন্ত্রণালয়।


আরো সংবাদ



premium cement