৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সাড়ে ৩ লাখ গরু-মহিষ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পাবনা-সিরাজগঞ্জের খামারিরা

সাঁথিয়ার আফড়া গ্রামের একটি খামারে গরুকে খাওয়াচ্ছেন খামারি : নয়া দিগন্ত -

গবাদিপশুসমৃদ্ধ পাবনা-সিরাজগঞ্জ অঞ্চলে এবার কোরবানির বাজার ধরার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ। গোখামাারি, চাষি, মৌসুমি ব্যবসায়ীরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু মোটাতাজা করে এখন করোনা আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের দুশ্চিন্তা করোনা পরিস্থিতি যদি ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থায়ী হয় তাহলে গবাদিপশু বেচাকেনায় ধস নামবে। সে ক্ষেত্রে তাদের পড়তে হবে বিরাট লোকসানে।
খামারিরা বলছেন, করোনা ক্রান্তিকালে তারা গবাদিপশু নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় আছেন। সারা বছর গরু মোটাতাজা করে অনেকে বড় অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন। তবে ঈদে গরু বিক্রি করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা যাচ্ছে না তাদের। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে গ্রামের সাধারণ কৃষক, বেকার যুবক থেকে শুরু করে হাজার হাজার মানুষ গরু-মহিষ, ছাগল-ভেড়া পালন করেন। এখন অনেক শিক্ষিত যুবকও গরু মোটাতাজাকরণকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। যে কারণে পাবনা-সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গরু-ছাগলের বড় বড় খামার গড়ে উঠেছে। সারা বছর গোশত ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে স্পেশাল গরুÑমহিষ তৈরি করেন খামারিরা।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের পরিসংখ্যান অনুয়ায়ী, দুই জেলায় তালিকাভুক্ত গোখামার রয়েছে প্রায় ৪২ হাজার। এ ছাড়া গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গবাদিপশু পালন করা হয়। এবার এ অঞ্চলে গোখামারের পাশাপাশি প্রায় ৪০ হাজার মৌসুমি ব্যবসায়ী ও কৃষকের গোয়ালে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গরু-মহিষ, ছাগল ও ভেড়া প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। সারা দেশের কোরবানির হাটগুলোতে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মুন্সীগঞ্জ থেকেই বেশি গরু সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
পাবনা ও সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের একাধিক খামারি ও চাষি জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক নিয়মে মোটাতাজা করা গরুর মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড জাতীয় পাবনা ব্রিড, অস্ট্রেলিয়ান-ফ্রিজিয়ান ব্রিড, ইন্ডিয়ান হরিয়ান ব্রিড, পাকিস্তানি সাহিয়াল ব্রিড। তবে এর পাশাপাশি রয়েছে স্থানীয় ব্রিডিং পদ্ধতিতে জন্ম নেয়া (যা লোকাল ক্রস ব্রিড নামে পরিচিত) গরু। এসব জাতের সব গরুই মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় বড় করে বাজারে তোলা হয়। গরু মোটাতাজাকরণ একটি নিয়মিত ও প্রচলিত পদ্ধতি। বিশেষ পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত ইউরিয়া, লালিগুড় ও খড়ের একটি বিশেষ মিকচার আট দিন কোনো পাত্রে বন্ধ করে রেখে তা রোদে শুকিয়ে গরুকে খাওয়াতে হয়। তিন মাস এটা খাওয়ালে গরু খুব দ্রুত মোটাতাজা হয়ে ওঠে। এই গরুর গোশত মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।
সাঁথিয়া উপজেলার মনমথপুর গ্রামের খামারি আব্দুল জব্বার জানান, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে খড়, লালিগুর, ভাতের মাড়, তাজা ঘাস, খৈল, গম, ছোলা, খোসারি, মাসকলাই ও মটরের ভূসিসহ বিভিন্ন পুষ্টিকর খাবার খাইয়ে তিনি ২৫টি গরু মোটাতাজা করেছেন। এখন করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন। বর্ষায় গোচারণভূমি ডুবে যাওয়ায় গোখাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। এ কারণে গরু লালন-পালনে খরচ অনেক বেড়ে গেছে। আরেক খামারি আব্দুল জব্বার মিয়া জানান, গরু মোটাতাজা করে আতঙ্কে আছেন। যদি গরুগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে বড় অঙ্কের লোকসান দিতে হবে।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের রাউতারা গ্রামের খামারি সাইফুল ইসলাম বললেন, করোনা কত দিন থাকবে সেটি কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছে না। যদি কোরবানির ঈদ পর্যন্ত থাকে, তাহলে দুঃখের সীমা থাকবে না। গরু পালন করতে গিয়ে অনেকেই ধারদেনা করেছেন। কোরবানিতে গরু বিক্রি করতে না পারলে কিভাবে ধারদেনা শোধ করবেন তা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। পোঁতাজিয়া গ্রামের আফাজ উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর কোরবানির এক-দেড় মাস আগে থেকেই বিভিন্ন এলাকার গরুর ব্যাপারীরা এ অঞ্চলে এসে বাড়ি বাড়ি ঘুরে গরু কেনা শুরু করেন। পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার পশুর হাটগুলো থেকেও তারা কিনে থাকেন। এবার তাদের অনুপস্থিতির কারণে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও সাধারণ কৃষকরা।
পাবনার ফরিদপুর উপজেলার খামারি নান্নু মিয়া জানান, করোনার কারণে এবার গরু কেনায় ব্যাপারীদের আগ্রহ নেই। আগে ব্যাপারীরা গরু কেনার জন্য বারবার ফোন করত। আর এবার আমরা তাদের ফোন করছি, কিন্তু কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। খামারিরা আশঙ্কা করছেন, করোনার কারণে এবার কোরবানির হাটে ক্রেতার অভাবে কম দামে গরু বিক্রি হতে পারে। এ আশঙ্কা থেকে তারা চেষ্টা করছেন এখনই গরু বিক্রি করে দেয়ার।
পাবনার সবচেয়ে বড় গরুর ব্যাপারী বেড়া পৌর এলাকার পায়না গ্রামের আসাদুল্লা জানান, অন্যান্য বছর গরুর ব্যাপারীরা কোরবানির মাসখানেক আগে থেকেই ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাটকে সামনে রেখে এ এলাকার খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনতেন। কিন্তু এবার বেশির ভাগ ব্যাপারীই সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি দেখছেন। গত বছর এ সময় তিনি ৮০টি গরু কিনে ফেলেছিলেন; কিন্তু এবার এখনো কোনো গরু কেনেননি। তিনি বলেন, করোনার কারণে হাটে গরুর দাম ও চাহিদা কেমন হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণেই তিনি গরু কিনছেন না।
উত্তরাঞ্চলের প্রধান পশুরহাট বেড়া সিঅ্যান্ডবি চতুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, অনেক খামারি ও কৃষক গরু বিক্রির জন্য হাটে নিয়ে এসেছেন; কিন্তু ক্রেতা নেই বললেই চলে। গরু বিক্রি করতে আসা সেলন্দা গ্রামের আব্বাস আলী বলেন, ‘সকাল ৭টার দিক পাঁচটা গরু আনছি। এহন বাজে ১২টা, কোনো ব্যাপারীই দাম কয় নাই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছি। ভূসির দোকানে বাকি। এহন গরু বিক্রি না হলি বিপদে পইড়ে যাবো।’
সিঅ্যান্ডবি চতুর হাটের ইজারাদার মিজানুর রহমান উকিল জানান, হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাসহ সর্বসাধারণের জন্য মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু বেচাকেনা একেবারেই নেই। অন্য বছরের মতো ঢাকা, মানিকগঞ্জ, সিলেট, চট্টগ্রামের ব্যাপারীরাও আসছেন না। কমবেশি যা বিক্রি হচ্ছে তা স্থানীয় ব্যাপারী ও কৃষকদের কাছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে আ’ লীগের ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন গুচ্ছের ‘এ’ ইউনিটের ফল প্রকাশ হবিগঞ্জে হারুন হত্যা মামলা : ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১০ জনের যাবজ্জীবন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালগুলোতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে বিক্ষোভে পুলিশের বাঁধা, আরাফাতের সমালোচনা বগুড়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নির্মাণ শ্রমিক নিহত পাঁচবিবিতে গাছের ডাল পড়ে পথচারীর মৃত্যু ঈশ্বরদীতে লোডশেডিংয়ে নাকাল জনজীবন গাজা যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪,৫৩৫ জনে পাঁচবিবিতে অপহরণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপহৃত উদ্ধার, আটক ৩ নারায়ণগঞ্জে তাপদাহে বিপর্যস্ত পশুপাখির পাশে টিম খোরশেদ দাগনভুঞায় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত শিক্ষার্থী হাসপাতালে ভর্তি

সকল