২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিরসরাইয়ে কোরবানির জন্য ৪০ হাজার পশু প্রস্তুত

নাহার অ্যাগ্রো ফার্মে কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা গরু : নয়া দিগন্ত -

আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা কোরবানিকে ঘিরে মিরসরাই উপজেলায় ৪০ হাজার পশু প্রস্তুত করছেন খামারিরা। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দু’টি পৌরসভায় অবস্থিত ছোট-বড় ২৬৫ খামারে এসব পশু পালন করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে বাজারের চেয়ে খামারে কেনাবেচাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
জানা গেছে, প্রতি বছর কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে উপজেলার খামারি ও কৃষকরা গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত থাকেন। কোরবানি ঈদে উপজেলার স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে গবাদিপশু ফেনী, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে উপজেলার খামারিরা। দেশে গেল বছর ভারত থেকে পশু কম আমদানি করায় দেশী গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা ভালো লাভও করেছিলেন। তাই এ বছরও কোরবানিকে সামনে রেখে দেশী গরু ও ছাগল মোটাতাজা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার খামারি ও কৃষকেরা। তবে এ বছরও ভারতীয় গরু না এলে তারা বেশ লাভবান হবেন এমনটাই আশা করছেন তারা। বিগত বছরগুলোর মতো এবারো গবাদিপশু লালনপালনকারীরা ভালো দামের প্রত্যাশায় রয়েছেন।
জানা যায়, মিরসরাই উপজেলায় স্থায়ী ও অস্থায়ী মোট ২৪টি হাটে গবাদিপশু বেচাকেনা হয়। এবারো সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে হাট বসানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। উপজেলার ২৪টি হাটের মধ্যে মিরসরাই বাজার, বড়তাকিয়া, মিঠাছরা, জোরারগঞ্জ, বারইয়ারহাট, আবুতোরাব হাট বড়। এসব হাটে বিভিন্ন স্থান থেকে বেপারিরা এসে গরু কিনে ফেনী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে বিক্রি করেন। এ ছাড়া স্থানীয় বেপারিরা এলাকায় কৃষকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করেন। বর্তমানে এ উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার মানুষ (খামারি, কৃষক ও বেপারিরা) এই পেশার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে। খামারি ছাড়াও উপজেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে দুই-একটি করে গরু মোটাতাজা করেন। গত বছর ঈদের সময় আকার ভেদে প্রতিটি গরু ৪৫ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন এখানকার গবাদিপশু খামারি ও কৃষকরা। উপজেলায় ৫০ শতাংশ গরু মোটাতাজা করছেন খামারিরা আর বাকি ৫০ শতাংশ করছেন সাধারণ কৃষকরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের তথ্য মতে, মিরসরাই উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ২৬৫টি খামার রয়েছে। এবার এসব খামারে হৃষ্টপুষ্ট করা হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৫টি ষাঁড়, ১২ হাজার ৮১২টি বলদ, ১১০০ গাভী, চার হাজার ৪১৬টি মহিষ, পাঁচ হাজার ৫৮৭টি ছাগল, তিন হাজার ১৭৭টি ভেড়া। গত বছরের তুলনায় গরুর সংখ্যা বেড়েছে। এ ছাড়া করোনার কারণে বিগত তিন মাস বিয়ে, জেয়াফত, মেজবানসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবার কোরবানিতে গরুর সংখ্যা বেড়েছে। উপজেলায় রেড চিটাগাং ক্যাটেল বা অষ্টমুখী লাল গরু সবচেয়ে বেশি মোটাতাজা করা হয়। এ ছাড়া শাহীওয়াল, ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও দেশী গরুও মোটাতাজা করা হয়।
নাহার অ্যাগ্রো গ্রুপের জিএম (প্রোডাশন) মনোজ কুমার চৌহান বলেন, আমরা নিজস্ব ফার্মে জন্ম নেয়া হলিস্টিন ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরুগুলোকে নিয়মমাফিক নেপিয়ার ঘাস ছাড়াও পুষ্টিকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি ক্যাটেল ফিড খাওয়ানো হয়। আমাদের গরুগুলোকে প্রাণঘাতী স্টেরোয়েড জাতীয় ওষুধ খাওয়ানো হয় না। গরুগুলো হয় রোগমুক্ত, স্বাস্থ্যবান ও প্রাণবন্ত। মিরসরাইয়ের নলখোঁ ও চট্টগ্রাম শহরের খুলশী আবাসিকে আমাদের সেলস সেন্টার রয়েছে। আমাদের খামারে ৪০০ থেকে ৯০০ কেজি ওজনের গরু রয়েছে। যেগুলোর বাজারমূল্য এক লাখ থেকে সাত লাখ টাকা পর্যন্ত।
নাহার অ্যাগ্রো গ্রুপের পরিচালক তানজীব জাওয়াদ রহমান বলেন, কোরবানির গরু হাট বাজারে নেই। খুলশীতে সেলস ও প্রদর্শন সেন্টার রয়েছে। সেলস সেন্টার বা খামার থেকে বিক্রি করা হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে একজন ক্রেতার জন্য আধা ঘণ্টা সময় দেয়া হবে। অনলাইনে আগে থেকে সময় নিতে হবে। সেই মতে ক্রেতাদের ডিসপ্লে সেন্টার বা খামারে সময় দেয়া হবে।
ডোমখালী আরবিসি এগ্রিকালচার লিমিটেড স্বত্ত্বাধিকারী শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোরবানিকে ঘিরে আমার খামারে গরু মোটাতাজা করে প্রস্তুত করা হয়েছে। ক্রেতারা খামারে এসে পছন্দ করে কোরবানির গরু কিনতে পারবেন।
মিরসরাই উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: শ্যামল চন্দ্র পোদ্দার বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণে ক্ষতিকর স্টোরোয়েড হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার ও বিক্রি না করার জন্য দোকানদার ও খামারিদের অনুরোধ করে আসছি। উপজেলায় ক্ষতিকর হরমোন জাতীয় ওষুধ ব্যবহারকৃত গবাদিপশু নেই বলে আমার বিশ^াস। মিরসরাইয়ে সবচেয়ে বেশি চাহিদা থাকে দেশী মাঝারি আকারের গরুর। বিগত বছরগুলোতে কোরবানির পশুর বাজারে আমরা দেখেছি সঙ্কট হয়নি আশা করি এবারো সঙ্কট হবে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর থেকে নিরাপদ গো-মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যে আমরা খামারিদের দীর্ঘদিন ধরে উদ্বুদ্ধ করেছি এবং মনিটরিং কার্যক্রমও জোরদার করেছি। ফলে আশানুরূপ ফল এসেছে। আমরা সরকারিভাবে তাদের ওষুধ ফ্রি দিয়েছি, এর মধ্যে কৃমির ওষুধ ও ভ্যাকসিন রয়েছে। কৃষক ও খামারিদের কয়েকবার করে ট্রেনিং দেয়া হয়েছে। সব সময় বিভিন্ন পরামর্শসহ খোঁজখবর রেখেছি। প্রতিবারের মতো এবরো বাজারগুলোতে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি নজরদারি করবে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতর।


আরো সংবাদ



premium cement