২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় বিপাকে খামারিরা : চট্টগ্রামে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে ৫ লাখ লিটার দুধ

বিক্রি অর্ধেক কমে গেলেও প্রতিদিন দুধ সংগ্রহ করছে খামারিরা। ছবিটি সাতকানিয়ার একটি খামার থেকে তোলা হনয়া দিগন্ত -

বিশ্বময় মহামারী করোনার প্রভাব দারুণ সঙ্কটে ফেলেছে কর্ণফুলী ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রায় ১০ হাজার দুগ্ধ খামারিকে। প্রতিদিন উৎপাদিত ১০ লাখ লিটার দুধের পাঁচ লাখ লিটার দুধই বিক্রি করতে না পেরে নালায় ফেলে দিতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। এ কারণে প্রতিদিনের ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত ২৬ মার্চ থেকে মিষ্টিজাত কারখানার পাশাপাশি দোকানপাট ও হাটবাজার বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন দুগ্ধখামারিরা।
কর্ণফুলী উপজেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দিন জানান, দুধ পচনশীল হওয়ায় চার ঘণ্টার বেশি রাখা যায় না। মিষ্টিজাত কারখানা ও হাটবাজার বন্ধ থাকায় দুধ নিয়ে ছোটবড় সবমিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার দুগ্ধখামারি বিপাকে রয়েছেন। তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেয়া না হলে দুগ্ধশিল্প হুমকির মুখে পড়বে। তিনি জানান, এ দিকে উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারছেন না অপর দিকে গোখাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিকের বেতনসহ প্রতিদিন কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুক্ষীণ হচ্ছেন দুগ্ধখামারিরা। তিনি জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ডেইরি অ্যাসোসিয়েশনের আওতায় ৭০০ দুগ্ধখামার রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। মিষ্টিজাত কারখানা ও হাটবাজার বন্ধ থাকায় প্যাকেট করে কোনোভাবে অর্ধেক দুধ বিক্রি করতে পারলেও অর্ধেক দুধ নালায় ফেলে দিতে হচ্ছে।
সাতকানিয়ার পুরানগড়ের অর্গানিক আশা ডেইরি ফার্মের মালিক পুলিশ পরিদর্শক রঞ্জিত বড়ুয়া বলেন, প্রতিদিন তার খামারে ১০০ লিটার দুধ উৎপন্ন হয় কিন্তু দুধ বিক্রি করা নিয়ে তিনি খুব বিপদে পড়েছেন। এ কারণে প্রতিদিন তার শ্রমিকের বেতন, গোখাদ্যসহ ১০ হাজার টাকা করে ক্ষতি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম জেলায় রেজিস্ট্রার্ড এক হাজার ৬৫০টিসহ তিন হাজার ৭৮২টি দুগ্ধ খামার রয়েছে। এ ছাড়াও ছোট বড় মিলে অন্তত ১০ হাজার দুগ্ধ খামার রয়েছে চট্টগ্রাম জেলাজুড়ে।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: রেয়াজুল হক জসিম জানান, জেলায় রেজিস্ট্রার্ড ১৬৫০টি খামারে প্রতিদিন তিন লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এ ছাড়াও আনরেজিস্ট্রার্ড ও ছোটবড় মিলে চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ১০ হাজার দুগ্ধখামার রয়েছে। ওই সব খামারে গড়ে প্রতিদিন ১০ লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হয়।
কর্ণফুলী উপজেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মিল্কভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাবের কারণে দুগ্ধশিল্প ও খামারিদের বাঁচিয়ে রাখতে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রণোদনা চেয়েছে। গত ২ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার এ বি এম আজাদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে আর্থিক ক্ষতি কাটিয়ে ও দুগ্ধশিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রণোদনা চেয়ে একটি পত্র দেয়া হয়েছে। এর আগে ২৫ মার্চ অনুরূপ একটি পত্র চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে পাঠানো হয়। খামারিদের পক্ষ থেকে মিষ্টির দোকান খোলা রাখা এবং মিল্ক ভিটার কারখানা সচল রাখার দাবি জানানো হয়।
কর্ণফুলী উপজেলা ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও মিল্ক ভিটার পরিচালক নাজিম উদ্দিন হায়দার জানিয়েছেন, গার্মেন্ট শিল্পের পাশাপাশি দুগ্ধ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি দরকার। তা ছাড়া দুধ পরিবহনের গাড়ি যাতে কোনো ধরনের বাধা সৃষ্টি না হয় এবং গোখাদ্যের দাম বাড়ানো হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement