৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভোলায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসায়

ভোলায় বিভিন্ন দোকানে অনিরাপদভাবে সিলিন্ডার গ্যাস রাখা হয়েছে : নয়া দিগন্ত -

ভোলায় লাইন্সেস ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলছে এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসায়। লাইসেন্সবিহীন দোকানগুলোয় অনিরাপদভাবে অবাধে বিক্রি হচ্ছে ওই জ্বালানি। আইনের তোয়াক্কা না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই জেলার প্রতিটি বাজারেই চলছে এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়। অভিযোগ উঠেছে, সরকারি নিয়মনীতি ও অনুমতিবিহীন অবৈধ গ্যাসের ব্যবসায় অদৃশ্য কোনো কারণে দেখেও না দেখার ভান করছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই ওই অবৈধ ব্যবসায় চলছে। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা দোকানগুলোয় খোলামেলাভাবে গ্যাস বিক্রি করায় চরম ঝুঁকিতে চলাফেরা করতে হচ্ছে ক্রেতা, পথচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাসহ শিক্ষার্থীদের। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায় চললে যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্থানীয়দের। এ ছাড়াও অতিরিক্ত দামে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত দাম ও অনুমোদনহীন ব্যবসায় বন্ধে প্রশাসনের সহায়তা চান পথচারী ও সচেতনমহল।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দ্বীপজেলা ভোলায় লাইন্সেস ছাড়া সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করছে বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান। জেলার বিভিন্ন পানের দোকান, চায়ের দোকান, মুদির দোকান থেকে শুরু মনোহারি, ওষুধ ও ইলিকট্রনিকসসহ প্রায় সব ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে লাইন্সেস ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করা হচ্ছে। শহরের দোকানগুলো ছাড়াও উপজেলার বাংলাবাজার, ঘুইংঘারহাট, বেপারী বাজার, বটতলা, শান্তিরহাট, ভেলুমিয়া বাজার, ব্যাংকের হাট, খেয়াঘাট, পরানগঞ্জ, ইলিশার হাট, জংশন বাজার, হাওলাদার বাজার, বাগেরহাট, ক্লোজার, রাস্তার মাথা, জনতা বাজার, তুলাতুলী, নাছির মাঝি রতনপুর, শান্তিরহাট বাজারসহ মহাসড়কের পাশে অনুমোদন ছাড়াই অনেক ব্যবসায়ী আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি করে আসছে। এ ছাড়াও জেলার দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, মনপুরা, শশীভূষণ, দক্ষিণ আইচা থানার বিভিন্ন হাট বাজারে সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায় চলছে অহরহ। এ দোকানগুলোয় নেই প্রাথমিক বিপর্যয় রক্ষায় ড্রাই পাউডার ও সিও ২ সরঞ্জামসহ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। এতে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ অনুমোদন পাওয়া ব্যবসায়ীরাও। যথাযথ নিয়ম না মেনে এসব ব্যবসায়ী গ্যাস বিক্রি করছে না বলে সাধারণ মানুষ মনে করছেন। দোকানগুলোর সামনে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয় গ্যাস সিলিন্ডারগুলো। যার ফলে পথচারীরা ঝুঁকি চলাচল করতে হচ্ছে। যেকোনো সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এমন আশঙ্কা সাধারণ পথচারীদের। এ ছাড়াও একাধিক ক্রেতা অভিযোগ করে জানান, ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় গ্যাসের যে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ক্রেতাদের জিম্মি করে ব্যবসায়ীরা তার চেয়ে বেশি নিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বোতল প্রতি ৫০-১০০ টাকা বেশি নেয়। যার ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ভুক্তভোগী ক্রেতাদের।
এদিকে বিস্ফোরক আইন ১৮৮৪ এর দ্য এলপি গ্যাস রুলস ২০০৪ এর ৬৯ ধারার ২ বিধিতে লাইসেন্স ছাড়া কোনো ক্ষেত্রে এলপিজি মজুদ করা যাবে না বলা হয়েছে। বিধি অনুযায়ী আটটি গ্যাসপূর্ণ সিলিন্ডার মজুদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স নিতে হবে। একই বিধির ৭১ নং ধারায় বলা আছে, আগুন নেভানোর জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি এবং সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হবে।
ইয়ুথ পাওয়ার ইন বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী আদিল হোসেন তপু বলেন, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করার কারণে সাধারণ মানুষসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা হুমকির মুখে পড়েছে। লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ বিস্ফোরক অধিদফতরের কোনো রকম অভিযান না থাকায় অবৈধ ব্যবসায়ীরা খোলামেলাভাবে বিক্রি হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম না থাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। যার ফলে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। হতাহত হয়েছে শত শত মানুষ। এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুনজর দেয়া দরকার।
ভোলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আলহাজ্ব মু: শওকাত হোসেন বলেন, ভোলার বিভিন্ন ছোট বড় হাট বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে সিলিন্ডার গ্যাসের দোকান। পানের দোকান, চায়ের দোকান, মুদির দোকান, মনিহারি দোকান, ইলেকট্রিকস দোকানে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে ব্যবসায়ীরা অনুমোদনহীন সিলিন্ডার গ্যাসের ব্যবসায় করছে। দোকানের সামনে রাস্তার পাশে এসব সিলিন্ডার গ্যাস রাখায় হুমকি মুখে পড়ছে সাধারণ ক্রেতা, শিক্ষার্থী ও পথচারীরা। কারণ সিলিন্ডার গ্যাস খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় যেকোনো সময় ঘটতে পাড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, ভোলার এলপি গ্যাস ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বোতল প্রতি ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নিচ্ছেন। এ বিষয় জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় সিলিন্ডার গ্যাস মজুদের কারণে যেকোনো সময় বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এটা এক ধরনের বিপজ্জনক পরিস্থিতি। এছাড়া অনুমোদনহীন ব্যবসায়ীদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান ব্যবসায়ীরা। লাইন্সেস না থাকা এবং পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকি থেকে যায় বলে জানান সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন কর্মকর্তা।
অনুমোদনহীন ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো: মাসুদ আলম ছিদ্দিক। তিনি বলেন, বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে এলপি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রির নীতিমালা প্রণয়ন ও লাইন্সেসবিহীন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে নিয়মের আওতায় আনা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement