৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শ্রাবণ শেষেও বৃষ্টি নেই : পাট নিয়ে উৎকণ্ঠায় চুয়াডাঙ্গায় চাষিরা

বৃষ্টির দেখা নেই। পাট নিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছেন কৃষক। ছবিটি দামুড়হুদার ইব্রাহিমপুর থেকে তোলা : নয়া দিগন্ত -

‘আল্লায় যেন গজব দিয়িছে, বর্ষাকাল শেষ হয়ে গেলো পানি হচ্ছে না। খাল বিলি এক ছটাকও পানি নেই যে সেখানে পাট জাগ দেবো। মহাজনের কাছে সুদির টেকায় ঋণ নিয়ি ১৫ কাটা জমিতে পাট চাষ করিলাম। এখন মাটের পাট নিয়ি চিন্তায় ঘুমিতে পারছি না।’ মাঠের পাট নিয়ে এভাবেই নিজের দুর্ভোগের কথা বলছিলেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক ইন্তাজ মণ্ডল। শুধু এই ইন্তাজ মণ্ডল নন, চলতি বছর পাট নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তার মতো হাজার হাজার কৃষক। পানির অভাবে তারা সবাই পাট জাগ দিতে পারছেন না। এমন দুর্ভোগে পড়ে অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।
দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলেও বৃষ্টি নেই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায়। ভরা বর্ষাতেও বৃষ্টি না হওয়াতে জেলার নালা, খাল-বিল ও পুকুরগুলোও ফেটে চৌচির অবস্থা। আর এতে জেলার কয়েক হাজার পাটচাষি পড়েছেন চরম বিপাকে। পানির অভাবে তারা পাট জাগ দিতে পারছেন না। পানি না পেয়ে অনেক কৃষকই ক্ষেতেই শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন সোনালি আঁশ খ্যাত স্বপ্নের ফসল। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। তবে শরতের শুরুতেই দুই দিনের বৃষ্টিতে কিছুটা আশা জেগেছে চাষির মনে। চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার মাটি ও আবহাওয়া পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ জেলার কৃষকেরা অন্য ফসলের মতোই পাট চাষ করে থাকেন। গত বছরের মতো বাজার দর ভালো হওয়ায় চলতি বছরও তারা আগ্রহী হয়ে ওঠেন পাট চাষে। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, চলতি বছর জেলার চারটি উপজেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। কিন্তু সেই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করে পাটের আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় আবাদ হয়েছে ৫৯০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ছয় হাজার ২৮৫ হেক্টর, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ছয় হাজার ২০০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় দুই হাজার ১৫০ হেক্টর। জেলার চারটি উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ বিস্তীর্ণ পাটের ক্ষেত। বাতাসে মৃদু দুলছে পাটগাছ। আলমডাঙ্গা ও দামুড়হুদা উপজেলার কয়েকটি মাঠের চিত্র বলছে বেশ আগেই পাট কাটার সময় পেরিয়ে গেছে। কিন্তু পাট না কাটাতে অনেকটা বিবর্ণ হয়ে গেছে পাটের চেহারা।
কথা হয় আলমডাঙ্গা উপজেলার বড় গাংনী গ্রামের কৃষক আব্বাস আলীর সাথে। তিনি বলেন বাপ-দাদার আমল থেকে আমরা পাট চাষ করে আসছি। গত বছরের মতো ভালো লাভের আশায় এবারো পাঁচ বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন তিনি। বিস্তীর্ণ ক্ষেতের সবুজ পাতা স্বপ্ন দেখাচ্ছিল সোনালি আঁশ ঘরে তোলার। কিন্তু বিধিবাম। বৃষ্টির দেখা নেই কোথাও। পাট জাগ দিতে পারছি না।
সদর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের পাটচাষি আখের আলী বলেন, বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এসেছে। তার পরও দেখা নেই কাক্সিক্ষত বৃষ্টির। মাঠের পাট কাটার সময়ও পেরিয়ে গেছে আগেই। পাট জাগ দিতে না পেরে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে পাটচাষিদের মাঝে। তাদের আশঙ্কা সঠিক সময়ে পাট জাগ দিতে না পারলে ফলন বিপর্যয় হবে। এতে বড় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক সুফি রফিকুজ্জামান বলেন, পাটের চাষের জন্য চুয়াডাঙ্গার মাটি খুবই উত্তম। এ কারণে প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে পাটের আবাদ। তিনি স্বীকার করেন, বৃষ্টির অভাবে সঠিক সময়ে পাট পচাতে না পারলে কিছুটা ফলন বিপর্যয় হতে পারে। তবে কৃষি বিভাগ কৃষকদের বিকল্প উপায়ে পাট পচানোর পরামর্শ দিচ্ছে। এ জন্য রেবন রেটিং পদ্ধতিসহ পুকুর ও ডোবা-নালাগুলো সেচের পানিতে ভরাট করে পাট পচানোর জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়ার শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি দোয়ারাবাজারে নিখোঁজের ২ দিন পর ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার খালিস্তানিদের পাশে থাকার বার্তা ট্রুডোর, উদ্বেগ ভারতের নাজিরপুরে বাসচাপায় নিহত ১ হবিগঞ্জে পিকআপ-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ২ শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে বিএনপি সংকল্পবদ্ধ বায়ুদূষণে শীর্ষে দিল্লি, ঢাকার অবস্থান কত? শৈলকুপায় মামাতো ভাইদের লাঠির আঘাতে ফুফাতো ভাই নিহত আমরা নিজের দেশেই অদৃশ্য : ভারতের মুসলিমরা যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ৩৪ রাজনীতির মাঠে যেভাবে খেলছেন ইউসুফ পাঠান

সকল