২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পশ্চিম আফ্রিকা থেকে বিদায় নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র!

পশ্চিম আফ্রিকা থেকে বিদায় নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র! - ফাইল ছবি

নাইজারের সামরিক জান্তা ওয়াশিংটনের সাথে সামরিক সহযোগিতা বাতিল করার ঘোষণা দেবার পর মার্কিন কর্মকর্তারা সাহেল অঞ্চলে তাদের সন্ত্রাস-বিরোধী অভিযানের ভবিষ্যৎ পর্যালোচনা করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের নাইজেরিয়া সফরের পর এই ঘোষণা দেয়।

নাইজারের উত্তরে একটি বড় বিমান ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের শত শত সৈন্য রয়েছে। এই ঘাঁটি থেকে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে সাহেল অঞ্চলে বিমান টহল দেয়া হয়, যেখানে আল-কায়েদা এবং ইসলামিক ষ্টেট-এর সাথে সম্পৃক্ত গ্রুপগুলো তৎপর রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় দূত মলি ফি নাইজারের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করার জন্য চলতি সপ্তাহে রাজধানী নিয়ামে-তে ফিরে আসেন। তার সাথে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আফ্রিকা কমান্ডের মারিন জেনেরাল মাইকেল ল্যাংলি।

মলি ফি এর আগে ডিসেম্বরে এসেছিলেন, আর ডেপুটি সেক্রেটারি অফ ষ্টেট ভিক্টোরিয়া নুলান্ড অগাস্ট মাসে নিজের-এ এসেছিলেন।

সামাজিক মাধ্যম এক্স (আগের নাম টুইটার)-এ দেয়া এক পোস্টে আমেরিকার পররাষ্ট্র দফতর বলে, ‘খোলাখুলি’ আলোচনা হয়েছে এবং তারা জান্তার সাথে যোগাযোগ বজায় রাখছে। তবে, নাইজার থেকে যাবার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষি করার আর কোনো পথ আছে কি না, তা পরিষ্কার নয়।

এই অস্থিতিশীল অঞ্চলে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠা উগ্রবাদী গ্রুপগুলোকে হারানোর জন্য পশ্চিমা দেশগুলো নিজেরকে তাদের অংশীদার দেশগুলোর অন্যতম হিসেবে দেখত। কিছু দিন আগে পর্যন্ত, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স-এর ২,৫০০ সামরিক সদস্য মোতায়েন ছিল। অন্য ইউরোপিয়ান দেশগুলোর সাথে তারা সামরিক সাহায্য এবং প্রশিক্ষণে লক্ষ লক্ষ ডলার বিনিয়োগ করেছে।

কিন্তু এসব জুলাই মাসে বদলে যায়, যখন বিদ্রোহী সেনা সদস্যরা দেশের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে। কয়েক মাস পর তারা ফরাসি বাহিনীকে নিজের ছেড়ে চলে যেতে বলে।

আকাশ থেকে নজরদারি

কংগ্রেসকে দেয়া হোয়াইট হাউসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী, ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ৬৫০ জন সামরিক সদস্য নাইজারের অবস্থান করছিল। নিজের-এর ঘাঁটি ব্যবহার করে পাইলট-চালিত এবং পাইলট-বিহীন, দু’ধরনের আকাশযান দিয়ে নজরদারি করা হয়।

সাহেল অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অভিযানে অংশ নেয়াসহ পদাতিক সৈন্যদেরও সাহায্য করে থাকে। তবে নাইজারের ২০১৭ সালে এক যৌথ অভিযানের সময় আমেরিকান সৈন্য নিহত হবার পর সরাসরি অংশগ্রহণ কমিয়ে দেয়া হয়েছে।

সামরিক সম্পর্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জান্তা কেন নিলো, তা পরিষ্কার নয়। জান্তা মুখপাত্র কর্নেল মেজর আমাদু আব্দরামানে বলেন, সাম্প্রকিত সপ্তাহগুলোতে নাইজারের সীমানার ভেতরে আমেরিকান বিমানের ফ্লাইট বেআইনি ছিল।

ইন্সা গারবা সাইদু, যিনি নিজেরের সামরিক শাসকদের গণসংযোগ বিষয়ে সহায়তা করেন, যুক্তরাষ্ট্রর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নাইজারকে এক কৌশলগত অংশীদারের বদলে আরেকটি বেছে নিতে বাধ্য করার চেষ্টা করছে।

'আমেরিকান ঘাঁটি আর তাদের বেসামরিক লোকজন আর নাইজারের মাটিতে থাকতে পারবে না,' তিনি এপিকে বলেন।

ডিসেম্বরে তার সফরের পর যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ দূত ফি সংবাদদাতাদের বলেন, জান্তা নেতাদের সাথে 'ভালো আলোচনা' হয়েছে। তিনি সামরিক সম্পর্ক এবং ত্রাণ সাহায্য পুনরায় শুরু করার বিনিময়ে দেশে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার আহবান জানান।

তবে তিনি বলেন যে রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নিয়ামেকে সাবধান করে দিয়েছে।

মালি আর বুরকিনা ফাসো

প্রতিবেশী মালি এবং বুরকিনা ফাসো, যেখানে ২০২০ সালের পর দুটি সামরিক অভ্যুথান হয়েছে, নিরাপত্তা সাহায্যের জন্য মস্কোর দিকে ঝুঁকেছে। নাইজারের অভ্যুথানের পর সামরিক বাহিনী সাহায্যের জন্য রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের সাথে যোগাযোগ করে।

ক্যামেরন হাডসন, যিনি সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ) এবং ষ্টেট ডিপার্টমেন্ট-এর জন্য আফ্রিকায় কাজ করেছেন, বলেন যে এই ঘটনা দেখিয়েছে এই অঞ্চলে আমেরিকার উদ্দেশ্য অর্জনের ক্ষমতা কতটুকু হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, জান্তাকে রাশিয়ার কাছ থেকে দূরে থাকার জন্য ওয়াশিংটনের চাপ প্রয়োগের চেষ্টা তাদের ক্ষুব্ধ করেছে।

'এটা বেশ বিপরীতমুখী কারণ, বাইডেন প্রশাসনের একটি ঘোষিত নীতি হচ্ছে, আফ্রিকান দেশগুলো স্বাধীনভাবে তাদের অংশীদার বাছাই করতে পারবে,' তিনি বলেন।

মুসলিমদের জন্য পবিত্র মাস রমজানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল সফরে আসে। জান্তা নেতা জেনেরাল আব্দুরাহমানে চিয়ানি আমেরিকান প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে অস্বীকার করেন। নাইজারের আমেরিকান দূতাবাসে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সম্মেলন বাতিল করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতি নিয়ে প্রশ্ন

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জান্তা মুখপাত্র বলেন, জান্তা সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সাথে 'শুধুমাত্র ভদ্রতার কারণে' দেখা করেছেন। তিনি আমেরিকানদের কথা বলার ধরনের সমালোচনা করেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের আফ্রিকা বিশেষজ্ঞ অ্যানেলিস বারনার্ড বলেন, সাম্প্রতিক এই সফর ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রর উচিত তারা কিভাবে কূটনীতি চালাচ্ছে, শুধু নাইজারের নয়, গোটা অঞ্চলে, তা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা।

'যুক্তরাষ্ট্রের সরকার অনেক সময় চোখ বেঁধে কাজ করে। নিজের এবং সাহেল অঞ্চলে কী হচ্ছে, তা সব সময় একটা শূন্যের মধ্যে হয় না,' তিনি বলেন।

'আমাদের অস্বীকার করার উপায় নেই যে উপসাগর, ইসরাইল এবং অন্যান্য জায়গায় আমাদের সম্পর্কের অবনতি, পশ্চিম আফ্রিকায় আমাদের দিপাক্ষিক সম্পর্ককে প্রভাবিত করছে,' বারনার্ড বলেন।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement