২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


‘নামিবিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময়’

- ছবি : ডয়চে ভেলে

জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক ভাল্টার স্টাইনমায়ার শনিবার নামিবিয়ার প্রেসিডেন্টের স্মরণসভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, নামিবিয়ার জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার উপযুক্ত সময় এখন।

নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট হাগে গেইনগব ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান। তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। রোববার তাকে সমাহিত করা হয়। গেইনগব বেশ জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। অনেকে তাকে ‘নামিবিয়ার ঘরের জনক’, ‘মানুষের প্রেসিডেন্ট’ বলে ডাকতেন।

গেইনগবকে সমাহিত করার আগে শনিবার অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় জার্মান প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘আমাদের ইতিহাসের ‘অন্ধকার অধ্যায়’ বিষয়ে জার্মান জনগণের কাছে পৌঁছানোর সাহসের জন্য প্রেসিডেন্ট গেইনগবকে সবসময় স্মরণ করা হবে।’’

‘অন্ধকার অধ্যায়’ বলতে স্টাইনমায়ার ১৯০৪ থেকে ১৯০৮ সালের মধ্যে জার্মান সামরিক বাহিনীর হাতে নামিবিয়ার হেরেরো জনগোষ্ঠীর ৫০ থেকে ৬০ হাজার ও নামা গোষ্ঠীর প্রায় ১০ হাজার সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি বুঝিয়েছেন। ওই সময় নামিবিয়া জার্মানির উপনিবেশ ছিল।

জার্মান প্রেসিডেন্টের ভাষণের আগে বক্তব্য রাখেন নামিবিয়ার বিরোধী নেতা ম্যাকহেনরি ভেনানি। তিনি বলেন, ‘আমাদের জনগণ গণহত্যার মামলাটি নিষ্পত্তি হবে বলে আশা করছে।’

স্টাইনমায়ারের দিকে তাকিয়ে ভেনানি বলেন, ‘আমরা আপনাকে অনুরোধ করছি, আমাদের জনগণের পক্ষে একটি সম্মানজনক চুক্তি তৈরি করুন, যেন আমরা এই অধ্যায়টি শেষ করতে পারি।’

উল্লেখ্য, গণহত্যা বিষয়ে একটি যৌথ ঘোষণা তৈরি করতে দুই দেশ প্রায় এক দশক ধরে আলোচনা করছে। ২০২১ সালের মে মাসে একটি খসড়া উপস্থাপন করা হয়েছিল। প্রস্তাবে ক্ষতিপূরণ হিসেবে জার্মানি ৩০ বছর ধরে ১.১ বিলিয়ন ডলার দেবে বলে প্রস্তাব দেয়া হয়।

কিন্তু নামিবিয়ার সরকার ও স্থানীয় জাতিগোষ্ঠীগুলো এই খসড়া প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। বিরোধী রাজনীতিবিদ ও গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের বংশধরেরা এই খসড়ার তীব্র সমালোচনা করেছেন।

নিজের বক্তব্য দেয়ার সময় স্টাইনমায়ার দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ‘জার্মানি সমঝোতার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ।’ শিগগিরই তিনি আবার দেশটিতে ফিরে জার্মানির ঔপনিবেশিক শাসনের সময় নৃশংসতার জন্য ক্ষমা চাওয়ার অঙ্গীকার করেন। ‘আমি আশা করছি, আমি আবার এই দেশে খুব তাড়াতাড়ি আসবো। এবং সেটা অন্যরকম হবে, কারণ আমি নিশ্চিত যে নামিবিয়ার মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার এটিই উপযুক্ত সময়।’

গেইনগব ও স্টাইনমায়ার গত অক্টোবরে শেষবার আলোচনায় বসেছিলেন। স্টাইনমায়ার জানান, ওই সময় গেইনগব এবার তার শেষ মেয়াদের মধ্যেই বিষয়টির নিস্পত্তি করতে চান বলে তাকে জানিয়েছিলেন। ২০২৫ সালের মার্চে গেইনগবের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। স্টাইনমায়ার শনিবার গেইনগবের সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করার অঙ্গীকার করেন।

বক্তব্য দেয়ার সময় স্টাইনমায়ার কয়েকবার হাততালি পেলেও সবাই তার বক্তব্যের প্রশংসা করেননি। নামা ট্র্যাডিশনাল লিডারস এসোসিয়েশনের সদস্য ও পরিচিত অ্যাক্টিভিস্ট সিমা লুইপার্ট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমি এটা বেদনাদায়ক মনে করছি যে জার্মান রাষ্ট্রপতি আমাদের শোকের সময়কে উসকানি দেয়ার জন্য ব্যবহার করছেন এবং আমাদের বিশ্বাস করাতে চাইছেন যে জার্মানি সত্যিই তথাকথিত সমঝোতা করতে চাইছে।’

নামা ট্র্যাডিশনাল লিডারস অ্যাসোসিয়েশন ও ওভাহেরেরো ট্র্যাডিশনাল অথরিটি নামিবিয়া ও জার্মানির মধ্যে যে আলোচনা চলছে তার তীব্র সমালোচনা করছে। বিরোধী ল্যান্ডলেস পিপলস মুভমেন্টের সঙ্গে মিলে তারা যৌথ ঘোষণার বৈধতা নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করেছে। মার্চের শুরুতে পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।

ল্যান্ডলেস পিপলস মুভমেন্টের মুখপাত্র লিফালাজা সিমাতা ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘একদিকে আমরা এটা শুনে খুব খুশি যে জার্মান প্রেসিডেন্ট ক্ষমা চাইতে খুবই আগ্রহী।’

কিন্তু ‘অন্যদিকে, আমরা কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। কারণ নামিবিয়ার সরকার সংশ্লিষ্টদের আলোচনার বাইরে রেখেছে, যেটা একটা সমস্যা।’ এছাড়া শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চাওয়ার বিষয়টি কেমন হবে তা নিয়েও প্রশ্ন আছে তার। সূত্র : ডয়চে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement