২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ছবি তুলে বিপদে নুসরত ও মিমি!

ভারতীয় পার্লামেন্টের সামনে মিমি-নুসরত - ছবি : সংগৃহীত

রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে ‘দুই বিঘা জমি’র লাইনটা বদলে দিতে পারতেন : বাবু যত বলে, ট্রোলবাহিনীতে বলে তার শতগুণ!

সংসদে অবশ্য গণতন্ত্রের নিয়ম মেনেই কোনো বাবু-টাবু নেই। নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহের মতো নেতারাও এ নিয়ে অহেতুক শব্দ ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি। কিন্তু বিজেপির ট্রোলদের ঠেকায় কে! ভারতের সাধারণ নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস থেকে নবনির্বাচিত দুই এমপি মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান সোমবার শার্ট-ট্রাউজ়ার্স, জিন্‌স পরে সংসদভবনে গিয়েছিলেন, তার পরেই তাদের ঘিরে উত্তাল হল ট্রোলবাহিনী। শাড়ি পরিহিতা লকেট চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দুই নায়িকার ছবি দিয়ে সাইবার দুনিয়ায় ছড়াল, ‘এক জন বিজেপির। অন্য দু’জনের সঙ্গে তফাত সহজেই দেখা যায়।’ দুই নায়িকাই চমৎকার ভাবে মানানসই পাশ্চাত্য পোশাকে, তবু টুইটার থামে না! মিমি-নুসরত নন, ট্রোলবাহিনীর মানসিক স্বাস্থ্য আঁচ করা গেল। জিন্‌স-টপের পাশ্চাত্য পোশাক মানেই ‘হট’ নায়িকা। মানে, মিমি-নুসরতকে গালি দিতে গিয়ে এরা ভারতীয় ছবির ঐতিহ্যকেই খাটো করলেন। ষাটের দশকে ‘অ্যান ইভনিং ইন প্যারিস’ ছবিতে বিকিনি পরিহিতা শর্মিলা ঠাকুর বা সত্তর দশকে পশ্চিমি পোশাকে ‘হাতি মেরে সাথী’র তনুজা থেকে ‘জুগনু’ ছবির হেমা মালিনীকেও ‘এক্স রেটেড’ ছবির নায়িকা বানিয়ে দিলেন!

আর এক নেটিজ়েন সংসদভবনের সিঁড়িতে নবনির্বাচিত তরুণ এমপি তেজস্বী সূর্যের মাথা ঠেকানোর ছবি পোস্ট করে জানিয়েছেন, ‘এই ভাবে সংসদে যাওয়া উচিত। মিমি চক্রবর্তী, আপনি এক জন কুলাঙ্গার।’ এমনিতে সংসদে কোনো পোশাকবিধি নেই। গণতন্ত্রের অন্যতম শর্তই সেটি। সকলে ইচ্ছামাফিক খাবে, পোশাক পরবে। আসামের কোনো তরুণী এমপি মেখলা পরে আসতেই পারেন। আর নরেন্দ্র মোদি গত বছর সংসদের সিঁড়িতে মাথা ঠেকিয়েছেন বলে সবাইকে যে ওই ভাবে ‘আমার মাথা নত করে দাও হে’-র কোরাস গাইতে হবে, তার মানে নেই।

মিমিদের নিয়ে এই ট্রোলগুলোই বুঝিয়ে দিচ্ছিল, বাঙালি পুরুষের একাংশ আজও কতখানি সেক্সিস্ট! বহু মহিলাও অবশ্য দুই নায়িকাকে ট্রোল করেছেন। মিমি, নুসরতরা সাংসদ হিসেবে কেমন হবেন বা না-হবেন পরের কথা। কিন্তু সংসদভবনের সামনে তাঁদের জিন্‌স-টপ পরে সেলফি তোলা নিয়ে এত ছিছিক্কার উঠবে কেন?

এখানে শুধু বিজেপি-র ট্রোলবাহিনীকে দায়ী করে লাভ নেই। সমাজবিজ্ঞানী পার্থ চট্টোপাধ্যায় তার এক নিবন্ধে দেখিয়েছিলেন, উনিশ শতকের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্যেই একটা সূক্ষ্ম ফাঁক ছিল। জাতীয়তাবাদী বাঙালি মধ্যবিত্ত মনে করত, তার অন্দরের মেয়েরা পূজনীয়। ব্রিটিশ মেয়েদের মতো নয়। ‘নেশন’ তো বাইরে, কিন্তু ঘরের মেয়ে-বউরা লক্ষ্মীমন্ত হলেই বিদেশি শক্তিকে বোঝানো যাবে, আমরা কোথায় আলাদা।

রাজনীতির অঙ্গনে পা রাখার পরে মিমি চক্রবর্তীকে নিয়ে ট্রোল অবশ্য আগেও হয়েছে। প্রচারে তার জিন্স-টপ পরা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ প্রসঙ্গে মিমিকে প্রশ্ন করা হলে, তিনি বলেন, ‘‘আমরা নারী-পুরুষের সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলি, অথচ এখনও পোশাক নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করি। অনেক পুরুষই ওখানে জিন্‌স, টি-শার্ট পরেছিলেন। অথচ তাঁদের কাউকে ট্রোল করা হলো না। বাঙালি কালচার নিয়ে এত কথা বলে! কিন্তু আমাদের সংস্কৃতি কি এটাই শেখায় যে, মহিলাদের গালাগালি করতে হবে?’’

নুসরত বললেন, ‘‘আমি কোনো দিনই ‘ট্রোল’কে পাত্তা দিইনি। কাজ আমার কাছে বরাবর গুরুত্ব পেয়েছে। এ বারও কাজই আমার হয়ে কথা বলবে।’’
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement