০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বিজেপির ‘মান-অভিমানের’ অবসান ‘অচিরেই’ : বিএনপি

- ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ২০ দলীয় জোটের ঐক্য সুদৃঢ় রয়েছে। সেইসাথে জোট থেকে বিজেপির বেরিয়ে যাওয়াকে ‘মান-অভিমান’ অভিহিত করে ‘অচিরেই’ তার অবসান ঘটবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রিজভী এসব জানিয়ে বলেন, চলমান রাজনীতির দুঃসময়ে একটা চলছে। এই দুঃসময়ে জোটের অন্তর্ভুক্ত অনেকের মধ্যে মান-অভিমান থাকতে পারে। সেটার নিরসন হয়ে যাবে। বিশেষ করে বড় দল বিএনপির নেতৃবৃন্দ এবং জোটের আরো যারা নেতৃবৃন্দ আছেন সবার পদক্ষেপে এগুলো থাকবে না। অচিরেই এই মান-অভিমান সেরে যাবে।

তিনি বলেন, ২০ দলীয় জোট আমরা যে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা যে কর্মসূচি করে বিভিন্ন পর্য়ায়ে করে যাচ্ছি সেটা অব্যাহত থাকবে- এ ব্যাপারে আপনারা নিঃসন্দেহ থাকতে পারেন।

২০ দলীয় জোটের ঐক্য সুদৃঢ় দাবি করে রিজভী বলেন, সরকারের নানা ধরনের ইয়ে থাকতে পারে, খেলাধূলো থাকতে পারে। কিন্তু যারা দীর্ঘদিন এই দশ বছর গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মিছিল করেছেন তাদের মধ্যে ভাঙন আসবে না। যত নিষ্ঠুর নির্যাতন হবে ততই ঐক্য আরো অটুট হবে, আরো মজবুত হবে, ততই সিমেন্টেড হবে।

উল্লেখ্য, গত ৬ মে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ গণমাধ্যমের কাছে ২০ দলীয় জোট ছাড়ার ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, হ্যাঁ আমরা জোট ছেড়ে দিয়েছি। এটার কারণ তিনটি। বিএনপি অতিমাত্রায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টমুখী হয়ে গেছে। ২০ দলীয় জোটের কর্মকাণ্ড শুধু সহমত, সংহতি ছাড়া তেমন কিছুই নয়।

প্রহসন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর সংসদে যাওয়াটাকে নৈতিকভাবে ঠিক হয়নি বলে মনে করেন বিজেপি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, সংসদে বিএনপি যে যাবে এটা আমার দল শুধু নয়, জোটের কেউই জানে না। এসব কারণেই আমি জোট ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

বিএনপির নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বিজেপি। মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুরের মৃত্যুর পর তার গঠন করা এ দলের হাল ধরেন ছেলে পার্থ।

বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ
রিজভী বলেন, দুষ্টচক্রের সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকায় সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। তিনি অভিযোগ করেন, সাধারণ মানুষের প্রতি সরকারের কোনো দায় নেই। তারা জিম্মি অসাধু সিন্ডিকেটের কাছে। বাজারের দুষ্টু চক্র সিন্ডিকেট এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।

রাজধানীতে সিটি করপোরেশনের বেঁধে দেয়া নির্ধারিত মূল্যে গুরু ও খাসির গোশত বিক্রি হচ্ছে না অভিযোগ করে রিজভী বলেন, রমজানে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত মূল্য গরু প্রতিকেজি ৫২৫ টাকা এবং খাসির গোশত ৭৫০ টাকা। কিন্তু এখন বিভিন্ন এলাকায় প্রতি কেজি গরু ৬০০ টাকা এবং খাসি ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এর কারণ হিসেবে অতিরিক্ত খাজনা ও সরকারি লোকজনের চাঁদা আদায়কে দায়ী করেছেন। তারা বলছেন, পশুর হাটে চাঁদাবাজি বন্ধ হলে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৩০০ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। এই চাঁদাবাজির অর্থ সরকারের ওপর মহলেও যাচ্ছে। আওয়ামী সিন্ডিকেট পবিত্র রমজান মাস এলেই দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। লুটপাটতন্ত্র সর্বত্র আজ জেঁকে বসেছে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির জন্য সরকারি দলের সিন্ডিকেটকে দায়ী করে তিনি বলেন, রমজানের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ মানুষজন এখন বাজারে গিয়ে সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। স্বল্প আয়ের মানুষজন দিশেহারা হয়ে উঠেছেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে না। অথচ রোজার শুরুতেই বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। হু হু করে দাম বেড়ে চলেছে। বিভিন্ন পণ্যের দাম গড়ে বেড়েঝে তিন থেকে চার গুন। বাজারে সরকারের কোনো নজরদারি নেই, তাদের নজর লুটপাটে।

পাটকল শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আজকে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না, কৃষকরা তাদের উৎপাদিত পণ্যে দাম পায় না। বিজেএমসির নিয়ন্ত্রণাধীন পাটকলসমূহে প্রতিদিন কোনো না কোনো কলে ধর্মঘট চলছে। বহুদিন তারা বেতন পায় না, ক্ষুধায়-দাবিদ্র্যতায় দিনাতিপাত করতে হচ্ছে এই পাটকল শ্রমিকদেরকে। ২০১৫ সালের মজুরি কমিশন রোয়েদাদ এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। মিলগুলোতে শ্রমিকদের ১০ থেকে ১৫ সপ্তাহের মজুরি বাকি পড়ে রয়েছে। স্টাফদের তিন মাসের বেতন বাকি। সামনে ঈদ আসছে, এই তাদের সন্তানদেরকে কাপড় দেয়া দূরে থাক, তাদের পেটে আহারটুকু যোগাতে পারবে কিনা-সেটাই আজকে শ্রমিকরা সন্দিহান। রমজান মাসে পাটকল শ্রমিকদের এই যৌক্তিক দাবিগুলোকে মেনে নেয়ার জন্য আমি দলের পক্ষ থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, অগণতান্ত্রিক সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা শোচনীয় পর্যায়ে উপণীত হবে। এভাবে চলতে থাকলে সামনের দিনগুলো হবে আরো ভয়াবহ। সরকার যতই গণতন্ত্রের কথা বলুক, তারা চায় ‘নির্বাক জনগোষ্ঠী’। মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। মানুষ আর নির্বাক বসে থাকবে না। যেকোনো মুহূর্তে ক্ষমতার ‘গণেশ উল্টে’ যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শাহিদা রফিক, কেন্দ্রীয় নেতা মুনির হোসেন, মাহবুবুল হক নান্নু, খান রবিউল ইসলাম রবি ও শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement