০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরানের পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন উল্লেখযোগ্য নয় : ইইউ

উত্তেজনা কমাতে ফ্রান্সের উদ্যোগ
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ফেডেরিকা মোগারিনি :ইন্টারনেট -

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকা মোগারিনি বলেছেন, চার বছর আগে ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে করা পারমাণবিক চুক্তির যতটা লংঘন করেছে ইরান, তা এখনও উল্লেখযোগ্য কিছু নয় এবং চাইলেই বদলানো সম্ভব।
২৮ দেশের জোট ইইউ‘র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে সোমবার তিনি একথা বলেছেন। ইইউর এ কর্মকর্তা বলেন, যেসব পদক্ষেপ তারা নিয়েছে তা উল্টে দিতে এবং চূক্তি পুরোপুরি মেনে চলার জন্য ইরানের প্রতি আমরা আহ্বান জানাচ্ছি,”।
পারমাণবিক চুল্লীর জ্বালানি তৈরি করতে চলতি বছরের মে মাস থেকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করণের মাত্রা বাড়িয়েছে ইরান। এ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশটি পারমাণবিক বোমা তৈরির পথে হাঁটছে বলে আশঙ্কা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের।
ছয় বিশ্ব শক্তির সঙ্গে তেহরানের স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বেরিয়ে এসে ইরানের ওপর আগের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরান এ পদক্ষেপ নেয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই তেহরান পারমাণবিক চুক্তির কিছু অংশ লংঘনের এ সিদ্ধান্ত জানায়।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার শর্তে তেহরান তাদের পারমাণবিক কর্মসূচিতে লাগাম টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ওই চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের সরিয়ে নেয়। পাশাপাশি ইরানের অর্থনীতি ধসিয়ে দিতে তাদের তেল রফতানি বন্ধেও একের পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ইরান এসব নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে চুক্তিটি টিকিয়ে রাখার পথ বের করতে ইউরোপীয় দেশগুলোকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সময় বেঁধে দেয়। ওই সময়সীমা শেষ হওয়ার পর মে থেকে একটা একটা করে নিষেধাজ্ঞার শর্ত অমান্য করা শুরু করে দেশটি। ফেডেরিকা মোগারিনি বলেছেন “কার্যত যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সবই পাল্টানো সম্ভব। আমরা দুঃখিত যে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে,”।
তিনি জানান, চুক্তি স্বাক্ষরকারী ইউরোপের দেশগুলোর কেউই ইরানের লংঘনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে না, যে কারণে এর পাল্টায় নিষেধাজ্ঞা দেয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে না। ব্রাসেলসের বৈঠকে ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর পাশাপাশি পারমাণবিক চুক্তিটি বহাল রাখার বিষয়ই গুরুত্ব পায়। বৈঠকের আগে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি এক যুক্তবিবৃতিতে ইরান পারমাণবিক চুক্তির প্রতি তাদের সমর্থনের কথা পুনর্ব্যক্ত করে।
কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনা কমাতে উদ্যোগী হয়েছে ফ্রান্স। এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির সঙ্গে কথা বলবেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। সার্বিয়া সফররত ফরাসি প্রেসিডেন্ট সোমবার রাতে বেলগ্রেডে স্বাগতিক দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন।
ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেন, ট্রাম্প, পুতিন ও রুহানির সঙ্গে তার আসন্ন সংলাপ মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করবে বলে তিনি আশা করছেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা যে কোনও সময় যুদ্ধে রূপ নেওয়ার আশঙ্কার কথা জানান ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ-ইভ লু দ্রিয়ঁ। এ সময় তিনি তেহরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়া এবং একে কেন্দ্র করে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা বাড়ানোর সমালোচনা করেন।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ দুই বাজে সিদ্ধান্তের ফলে দুই দেশের উত্তেজনা যুদ্ধে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু যুদ্ধ কারও কাছেই প্রত্যাশিত নয়। ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে উত্তেজনার মাত্রা কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement