৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


নানা দিবসকে ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন জীবননগরের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা

-

আসন্ন বিজয় দিবস, ইংরেজি নববর্ষ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আসন্ন পাঁচটি দিবসকে ঘিরে ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা চলতি মৌসুমে ৩০-৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে উপজেলার ফুলচাষিরা দিন-রাত ফুল বাগানের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে উপজেলার চাষিরা বিশ্ব ভালোবাসা, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও ইংরেজি নববর্ষ উপলক্ষে ফুল বাজারজাত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন।
জীবননগর উপজেলার একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। এলাকার চাষিরা তাদের জমিতে জারবেরা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, চন্দ্রমল্লিকা, রজনীগন্ধাসহ বিভিন্ন রঙের ফুল চাষে ব্যতিব্যস্ত আছেন। বিভিন্ন দিবসে ফুলের বাড়তি দামের আশায় ১৬ ডিসেম্বর থেকে বসন্তবরণ পর্যন্ত ক্ষেতে ব্যস্ত সময় কাটাবেন তারা। ফুলচাষিরা বছরজুড়েই অলস সময় পার করলেও দেশের বিভিন্ন দিবসকে ঘিরে তাদের মধ্যে একধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। কারণ বিভিন্ন দিবসে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রি হয়। আর তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে এখন যেন বসে থাকার কোনো ফুরসত নেই। এ কাজে শুধু কৃষকই নয় কৃষাণীরাও সার্বক্ষণিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন।
উপজেলার বাঁকা গ্রামের ফুলচাষি রাশেদুল ইসলাম ও নুরুজ্জামান বলেন, আমাদের সাড়ে আট বিঘা জমিতে গাঁদাফুল, চন্দ্রমল্লিকা, ও রজনীগন্ধা ফুলের চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দিবস ছাড়াও বসন্তবরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুল সরবরাহ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছি। বছরের অন্য সময়ের তুলনায় ফুলের মৌসুমে আমাদের ব্যস্ততা একটু বেড়ে যায়। বর্তমান বাজারে ফুলের চাহিদা একটু কম হলেও ১৬ ডিসেম্বর ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকবে; তাই এবার একটু আগে ভাগেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। তারা আরো বলেন, এক বিঘা জমিতে গোলাপ চাষে ৮০-৯০ হাজার টাকা খরচ হয়। চার হাজার চারার দাম ৪০ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্যান্য খরচ মিলে আরো ৪০-৫০ হাজার টাকা ব্যয় হবে। তারপরও পরিচর্যার জন্য একটা বাড়তি খরচ তো রয়েছেই। একবার রোপণ করলে টানা চয়-সাত বছর ফুল পাওয়া যাবে।
জীবননগর বাজারের পাইকারি ফুল ব্যবসায়ী মামুন মিয়া বলেন, জাতীয় দিবসের পাশাপাশি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। শহীদ মিনারে ফুল দেয়ার কারণে এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে একে অপরের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করতে ফুল এক মহামূল্যবান উপকরণ। যে কারণে এসব দিবসে ফুলের চাহিদাও থাকে বেশি। বাজারে জারবেরা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা ফুলের চাহিদা বেশি। কৃষকেরাও ভালো দাম পেয়ে থাকেন এবং আমরা যারা ব্যবসায়ী তারাও বেশি ফুল বিক্রি করতে পারি।
আমাদের উপজেলার বাঁকা, হাসাদহ ও আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন এলাকায় বেশি ফুলের আবাদ হয়ে থাকে। এবারো এসব ইউনিয়নে অনেক বেশি ফুলের আবাদ হয়েছে।
উপজেলার বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদের আব্দুল কাদের প্রধান বলেন, আমাদের উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয় আমাদের বাঁকা ইউনিয়ন এলাকায়। তারপর আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়নে। বাঁকা ও আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন এলাকার মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অনুকূল। আমাদের চাষিরা এখন দেশী ফুলের চাষ করলেও বর্তমানে বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ করছেন। বিদেশী ফুলের মধ্যে লিলিয়ান, জারবেরা, গ্লাডিওলা অন্যতম। এসব ফুলের সাথে সংশ্লিষ্ট দুস্থ ও হতদরিদ্র নারী শ্রমিকেরা আয় করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কৃষকদের উৎপাদিত ফুল এলাকার চাহিদা পূরণ করে তা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করার কারণে এলাকার সুনাম বাড়ছে। ফুল চাষ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
জীবননগর ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সোহেল রানা শ্যামল বলেন, আমাদের উপজেলা ছাড়াও পাশের মহেশপুর উপজেলার বিপুল জমিতে ফুলের চাষ হয়। এ দু’টি উপজেলার চাষিরা জীবননগর ফুলবাজারে তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রি করেন। জীবননগর-মহেশপুর উপজেলার ফুলচাষিরা এবার ৩০-৪০ কোটি টাকার ফুল সরবরাহ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলার অনেক প্রান্তিক চাষি ফুল চাষে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছেন। এবার চাষিরা ফুলের ন্যায্য মূল্য পাবেন বলে আশা করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার সারমিন আক্তার বলেন, জীবননগর উপজেলা মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফুল চাষ লাভজনক হওয়ায় চাষিদের মধ্যে দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহ বাড়ছে। এ উপজেলার উৎপাদিত ফুল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে রফতানি করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। উপজেলায় ৩১ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ হয়েছে।
জীবননগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সিরাজুল ইসলাম বলেন, ফুল ভালোবাসার প্রতীক এবং আমাদের ঐতিহ্য। ফুল চাষে দুস্থ নারীরা আয় করে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি এলাকার বেকার সমস্যা সমাধানেও ফুল চাষ ভূমিকা রাখছে। ফুলচাষিদের উচ্চ ফলনশীল ও নতুন জাতের ফুল চাষের ব্যাপারে উপজেলা কৃষি বিভাগ স্থানীয় কৃষকদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement