মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজার গতকাল প্রথম দিন অতিবাহিত হয়েছে। বিপুল উৎসাহ- উদ্দীপনায় ‘মহাশক্তি মহামায়া দুর্গতিনাশিনী দেবীদুর্গাকে ভক্তিভরে বরণ করে নেন সারা দেশের হিন্দু নর-নারী। গতকাল সকালে সারা দেশে মণ্ডপে মণ্ডপে হয়েছে দেবীর ঘুম ভাঙানোর সেই বন্দনা পূজা বা বোধন। ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে মূল দুর্গোৎসবের সূচনা হয়।
রাজধানীর পূজামণ্ডপগুলোতে সকালে দেবী দুর্গার মঙ্গল অর্চনার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় মহাষষ্ঠী। ধুপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল, কাঁসর ঘণ্টা, শাঁখ উলুধ্বনী আর ভক্তিমন্ত্রে আর চণ্ডিপাঠে মুখর হয়ে ওঠে পূজামণ্ডপ। উলুধ্বনি, শঙ্খনাদ, সাথে ঢোলের বোল, মাতৃবন্দনার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় সকালে। নানা উপচারে ডালা সাজিয়ে আসতে থাকেন ভক্তরা। অশুভ শক্তির বিনাশে ‘মঙ্গলময়ী’ দেবীর জাগরণে জগতে সুর শক্তি প্রতিষ্ঠার প্রার্থনা করেন তারা।
সন্ধ্যা শুরু হতে না হতেই মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্ত ও দর্শনার্থীদের আগমন বাড়তে থাকে। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ সর্বস্তরের শ্রেণিপেশার মানুষ এতে অংশ নেন। ভক্তরা ভক্তিভরে দেবী দুর্গাকে প্রণাম করেন। সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু কামনা আর মনোবাসনা পূর্ণ হওয়ার জন্য আরাধনা করেন।
আজ মঙ্গলবার মহাসপ্তমী। সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে দুর্গাদেবীর নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপন, সপ্তমাদি কল্পারম্ভ ও মহাসপ্তমী বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর অঞ্জলি প্রদান। পরদিন অর্থাৎ আগামীকাল বুধবার সকাল ৯টা ৫৮ মিনিটে মহাঅষ্টমী পূজার পর হবে কুমারী পূজা।
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পূজামণ্ডপের পাশাপাশি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে চলছে আনন্দের মহোৎসব। শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত এই আনন্দে মাতোয়ারা।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের জমি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের জমিসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করে বলেছেন, সরকার ইতোমধ্যেই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘এই ঢাকেশ্বরী মন্দিরে জমি নিয়ে একটা সমস্যা ছিল। ইতোমধ্যেই সেই সমস্যাটা আমরা সমাধান করে ফেলেছি। বাকি কাজটা আপনাদের ওপরই নির্ভরশীল।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে শারদীয় দুর্গোৎসবের মহা ষষ্ঠীর দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শনে এসে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
দেশে-বিদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধর্ম যার যার কিন্তু উৎসব সবার।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই সেটাই মানি আর বাংলাদেশ বিশ্বে সেটার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রত্যেকটা উৎসবে সবাই ভাই-বোনের মত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আমরা এই উৎসবটা উদযাপন করে যাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতাসংগ্রামে এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা মুসলমানরা শুধু নয়, আমাদের সবধর্মের মানুষ- হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সবাই মিলেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে এদেশ স্বাধীন করে গেছেন। বাংলাদেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এবং এই বাংলাদেশে জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই যার যার অধিকার নিয়েই বসবাস করবে, তাদের ধর্ম-কর্ম পালন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশকে আমরা সবাই একসাথে গড়ে তুলতে চাই। বাংলাদেশ উন্নত হোক, সমৃদ্ধশালী হোক, দারিদ্র্যমুক্ত এবং ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ হোক এটাই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শৈলেন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জি, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি মিলন দত্ত অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, হাজী সেলিম এমপি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, প্রধানমন্ত্রী রামকৃষ্ণ মিশন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান। সেখানে মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান। স্থানীয় এমপি কাজী ফিরোজ রশিদ এবং পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাভেদ পাটোয়ারী এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা