১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


অ্যালকোহল ও ঘুমের ওষুধ

-

অ্যালকোহল বিভিন্ন দেশের সমাজব্যবস্থা ও সংস্কৃতির ওপর অ্যালকোহলের ব্যবহার ও প্রভাব নির্ভর করে। কোনো সমাজে অ্যালকোহলের ব্যবহার পানি পানের মতো, আবার কোথাও অ্যালকোহল বা মদপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। সামাজিক রীতিনীতি, আচার-ব্যবহার প্রভৃতি অ্যালকোহলের ব্যবহারকে অনেকখানি নিয়ন্ত্রিত করে থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে অ্যালকোহলের ব্যবহার খুবই বেড়েছে। মদ খাওয়ার নেশা নতুন কোনো বিষয় নয়, কিন্তু ইদানীং কলেজের ছেলেমেয়েদের মধ্যে নেশার ব্যাপারটি যেন ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। গ্রামগঞ্জের বা মফস্বলের ছেলেমেয়েরাও শহরে পড়তে এসে নেশার শিকার হচ্ছে। সিনেমা, ভিডিও, সিডি, ফিল্মে অ্যালকোহল পানাহারের যত ছবি দেখানো হচ্ছে; ততই যুবসমাজ এর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে। স্ট্যাটাস দেখানোর প্রবণতা যে কত ছেলেমেয়ের জীবনকে নেশাচ্ছন্ন করছে তার হিসাব পাওয়া কঠিন। তা ছাড়া, রয়েছে বাড়ির পরিবেশের প্রভাব। কিছু বাবা-মা রয়েছেন, যারা ছেলেমেয়ের সামনেই বন্ধুবান্ধব বা অফিসের সহকর্মীদের সাথে মদ বা অ্যালকোহল খেয়ে থাকেন এবং এই পানাহার তাদের ছেলেমেয়েদের প্রভাবিত করে থাকে অ্যালকোহলে আসক্ত করে।
অনেক রকমের রাসায়নিক যৌগ আছে যেগুলোকে অ্যালকোহল বলা হয়, তাদের মধ্যে ইথাইল অ্যালকোহল বা ইথানল সাধারণভাবে বিভিন্ন ধরনের মদের মধ্যে থাকে। যদিও কারখানার অ্যালকোহল পেট্রোলিয়ামজাত পদার্থ থেকে তৈরি হয়, কিন্তু ‘পান’ করার যে অ্যালকোহল তা ইস্ট দিয়ে গ্লুকোজকে ফার্মেন্টেশন করে পাওয়া যায়। বিভিন্ন রকম ‘ওয়াইন’ পাওয়া যায়। অ্যালকোহলের মাত্রার ওপর নির্ভর করে এদের বিভিন্ন নাম দেয়া হয়। সাধারণত যে মদ পাওয়া যায় তা হলোÑ
ব্র্যান্ডি : ভদকা, জিন,
রাম : শেরি, বিয়ার
হুইস্কি : শ্যাম্পেন, রেড ওয়াইন
হুইস্কি, ব্র্যান্ডি, রাম, জিন, ভদকা প্রভৃতিতে অ্যালকোহলের মাত্রা শতকরা ১৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত থাকে। এদের মধ্যে বিয়ারে অ্যালকোহলের পরিমাণ অনেক কম।
১ গ্রাম অ্যালকোহলে প্রায় ক্যালরি থাকে ৭, যা অন্যান্য উপাদান যেমনÑ কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাটের থেকে বেশি। কিন্তু অ্যালকোহলে কোনো ভিটামিন বা খনিজ পদার্থ নেই। যারা অ্যালকোহল পান করে, তাদের শরীরের ক্যালরির চাহিদা কিছুটা পূরণ হলেও তাতে খিদে কমে যায়, খনিজ পদার্থের অভাব ঘটতে থাকে। ফার্মাকোলজির সংজ্ঞা অনুযায়ী অ্যালকোহল এ রকমের ওষুধ যাÑ
* সিডেটিভ বা প্রশান্তিদায়ক
* ট্রানকুইলাইজার বা নিদ্রা আকর্ষণকারী ওষুধ
অ্যালকোহলে সাময়িকভাবে অবসাদ কিছুটা কমে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ীভাবে খারাপ ফলাফল নিয়ে আসে। অ্যালকোহল পান করার পর ধীরে ধীরে রক্তে এর মাত্রা বাড়তে থাকে ও ১ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ মাত্রায় পৌঁছায়। অবশ্য কী ধরনের অ্যালকোহল খাওয়া হচ্ছে এর পরিমাণ, অন্যান্য খাদ্য ও শরীরের ওজনের ওপর তা নির্ভর করে।
অ্যালকোহল মাঝে মধ্যে পান করলেও তা কখন পানাহার, কখন নেশায় পরিবর্তিত হয় বুঝতে পারা কঠিন। সোজা কথায় প্রথমে ‘মদ’ কেউ খেলেও ‘মদ’ই পরে তাকে খেতে শুরু করে। খুবই ভাবনার কথা যে, অনেক কম বয়সী ছেলেমেয়েও কলেজে মদপান শুরু করতে পারে।
শরীর ও মনের ওপর অ্যালকোহলের স্বল্পস্থায়ী, দীর্ঘস্থায়ী ও কমবেশি বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া থাকে। সামাজিক রীতিনীতির বৈশিষ্ট্য হিসেবে সামাজিক কোনো কোনো ধর্মীয় আচার-আচরণে অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়।
দেশী মদ, চুলু প্রভৃতি বিভিন্ন শ্রেণীর অ্যালকোহল বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ ব্যবহার করে। দেশ-কাল-পাত্রভেদে এর হেরফের হয়। ধর্মীয়, সামাজিক বা আইনের চোখে অ্যালকোহল শরীর ও মনের ওপর নির্দিষ্ট প্রতিক্রিয়া করে ও দীর্ঘ দিন অ্যালকোহল ব্যবহার করলে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়।
শরীরের রক্তচাপ, হার্টের রোগ, ব্লাড সুগারের সমস্যা, কিডনি প্রভৃতি নানারকম সমস্যা ও প্রতিক্রিয়া করে এবং অবসাদগ্রস্ত বা ডিপ্রেশন সৃষ্টি করে থাকে। অ্যালকোহলের প্রভাবে মনের ওপর অনেক রকম প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়Ñ সন্দেহপ্রবণতা, বিষণœতা, হতাশা, রাগ, ক্ষোভ, হিংসা, বিরক্তি ইত্যাদি।
ঘুমের ওষুধ
বিভিন্ন ধরনের ঘুমের ওষুধ দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। ওষুধগুলো নিদ্রাহীনতায় যেমন ব্যবহৃত হয়, তেমনি ‘চিত্তচাঞ্চল্য’ কমানোর জন্য মানসিক অসুস্থতায় ব্যবহৃত হয়। অনেক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ বা নির্দেশ ছাড়াও প্রকৃত প্রয়োজন না থাকলেও অনেকে এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে ও ক্রমেই আসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের এমনই নির্ভরশীলতা জন্মায় যে ওষুধ না খেলে ঘুম হয় না, রাতে ছটফট করে, কাজে অবসাদ আসে, বিরক্তি লাগে, ব্যাকুলতা সৃষ্টি হয়, মাথাব্যথা করে, বারবিচুরেট জাতীয় ওষুধ ঘুমের জন্যই নয়, এপিলেপসির চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া ডায়াজিপাম কোরডায়াজেক্সাইড নাইট্রাজিপাম প্রভৃতি ঘুমের ওষুধ ও ট্রাঙ্কুলাইজারের খুবই প্রচলন দেখা যায়। ইদানীং অনেক কিশোর-কিশোরীও সামান্য অবসাদ, ঘুমের সমস্যা ও মানসিক চঞ্চলতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য অথবা বন্ধুবান্ধবের পরামর্শে ঘুমের ওষুধ ও ট্রাঙ্কুলাইজার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ব্যবহার করে ও ধীরে ধীরে ‘নির্ভরশীল’ হয়ে পড়ে।
নিয়মিত নেশার দ্রব্য বা মাদকদ্রব্য ব্যবহার করলে যা হয় : যেসব কিশোর-কিশোরী নিয়মিত মাদকদ্রব্য ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা যায়। অবশ্য কী ধরনের পরিবর্তন হবে, সেটা মাদকদ্রব্যের বৈশিষ্ট্য, মাত্রা, কত দিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে নেশা করা অবস্থায় মাদক ব্যবহারের পরিমাণ অনেক সময় ঠিক থাকে না ও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। অনেকে এ সময় আত্মহত্যাও করে ফেলতে পারে। মানসিক স্থিতাবস্থা বা ভারসাম্য নষ্ট হয়। ভুলে যাওয়া, অমনোযোগ, হতাশা দেখা দেয়। মাত্রাতিরিক্ত মাদক ব্যবহারের ফলে অজ্ঞান হওয়াও অস্বাভাবিক নয় বা দম বন্ধ হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে। মত্ত অবস্থায় বিশেষ করে গাঁজা, মদ প্রভৃতি নেশার জন্য অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়ে, মারধর, আগুন লাগানো, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় জড়িয়ে পড়ে, যৌনবিকৃতি, যৌনবিকার ও যৌন উচ্ছৃঙ্খলতা দেখা যায়।
লেখিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় কর্মরত


আরো সংবাদ



premium cement
প্রতিটি ঘরে ইসলামের সঠিক দাওয়াত পৌঁছাতে হবে : মোবারক হোসাইন নাঙ্গলকোটে বিয়ের দাবিতে প্রেমিকা তরুণীর অনশন, পলাতক প্রেমিক চার উইকেট নেই জিম্বাবুয়ের বরিশাল অঞ্চল জামায়াতের উপজেলা আমির সম্মেলন অনুষ্ঠিত তারা আহম্মকের স্বর্গে বাস করেন : শাহজাহান খান অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক পহেলা বৈশাখ আমাদের মূল চালিকাশক্তি : পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাণীনগরে নদীতে ডুবে জেলের মৃত্যু ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়ায় জনগণের আদালতে আ’লীগের বিচার হবে: জোনায়েদ সাকি হঠাৎ বেসামাল বাংলাদেশ, গুটিয়ে গেল অল্পতেই মারাত্মক বিপর্যয়ে বাংলাদেশ আল্লাহ পরিপূর্ণ সুস্থতা দান করলে দেশের সেবায় নিয়োজিত হব : ড. খন্দকার মোশাররফ

সকল