২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পেঁয়াজের সাথে তাল দিচ্ছে চাল

সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেয়া হচ্ছে

-

অদ্ভুত এক দেশে আমরা বাস করছি। এই বাংলাদেশে কোনো কারণ ছাড়াই যেমন জলজ্যান্ত মানুষ গুম হয়ে যায়, তেমনি কোনো কারণ ছাড়াই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ে। কোনো দায়বদ্ধতা ছাড়াই ক্রসফায়ারের নামে নির্বিচারে একের পর এক মানুষ খুন করা যায়; বেআইনি সিন্ডিকেট করে মানুষের পকেটের টাকা লোপাট করা যায় অবাধে।
এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে নিত্যপণ্যের দামের বেলাগাম বৃদ্ধির হাল দেখে। এ মুহূর্তে সারা দেশে মুহুর্মুহু বৃদ্ধি পাচ্ছে পেঁয়াজের দাম। ৩০ টাকার পেঁয়াজের দাম উঠেছে ২৭০-২৮০ টাকায়। আকাশছোঁয়া এই দাম কোন মহাশূন্যে গিয়ে ঠেকবে, বোঝার উপায় নেই। হয়তো তা ৩০০ টাকা ছাড়াবে না এ জন্য যে, নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে এবং বিদেশ থেকে প্রচুর পেঁয়াজ নাকি বিমানে আসছে।
পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধির পেছনে সিন্ডিকেট বা দুষ্টচক্র কাজ করেছে বলে অনেকেই বলছেন। এর সত্যতা নিশ্চয়ই আছে। এর একটি প্রমাণ হলো, বাণিজ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। দাম যখন ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই তখন বাণিজ্যমন্ত্রী (যিনি নিজে একজন ব্যবসায়ী) এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকার নিচে নামা সম্ভব নয়। এতে ‘দাম বাড়িয়ে যে যতটা মুনাফা করার করে নাও’ এই ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছিল মনে হওয়াই স্বাভাবিক। তিনি না বুঝে ওই মন্তব্য করেছেন, এমন নয়। দাম যখন ১৩০ টাকায় ওঠে তখন শিল্পমন্ত্রী জাতীয় সংসদে বলেছিলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আছে। এ বক্তব্যে স্পষ্ট, তারা এ মুহূর্তে অস্বাভাবিক দামকেই ‘স্বাভাবিক’ মনে করছেন। এই মন্ত্রীর বক্তব্যের পরদিনই পেঁয়াজের কেজি ১৫০ টাকায় পৌঁছে যায়। আর এখন সেটি ২৮০-এ উঠে মহা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। টিসিবির হিসাবেই বছরের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির হার ৫৪৬.১৫ শতাংশ। আর এতে করে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে অসহায় জনগণের শত শত কোটি টাকা।
পেঁয়াজের ঝাঁজে সাধারণ মানুষের যখন অন্তিম শ্বাস উঠতে শুরু করেছে, তখন সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রধান খাদ্য, চালের সিন্ডিকেট। চলতি বছর দেশে চালের উৎপাদন হয়েছে গত বছরের চেয়ে বেশি। ফলে দেশে চালের যথেষ্ট মজুদ আছে। এ বছর এর আমদানিও গত বছরের এই সময়ের চেয়ে বেশি। পাইকারি ও খুচরা বাজারে সরবরাহও স্বাভাবিক। তবুও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। চালের দাম বৃদ্ধির জন্য মিলার ও খুচরা বিক্রেতারা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন, যা সম্পূর্ণ যুক্তিহীন। বিক্রেতারা বলছেন, চালকল মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার অস্থির। আর চালকল মালিকদের দাবি, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে চালের দাম।
জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে হঠাৎ প্রায় সব রকম চালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ থেকে ছয় টাকা। এর মধ্যে প্রতি কেজি মিনিকেট চালের দাম বেড়েছে পাঁচ থেকে ছয় টাকা; বিআর-২৮ চালের দাম পাইকারি দুই টাকা আর খুচরাবাজারে চার থেকে পাঁচ টাকা বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে দেশে চালের উৎপাদন, আমদানি, সরবরাহ ও মজুদ বেশি। গত অর্থবছরের এ সময় উৎপাদন হয়েছিল ১০ লাখ ৯০ হাজার টন। এবার একই সময়ে উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৭৫ হাজার টন। গত অর্থবছরের এ সময় আমদানি হয়েছিল দুই লাখ ৩৩ হাজার টন। এবার আমদানি হয়েছে ছয় লাখ ৭৪ হাজার টন। সরবরাহ লাইনে গত অর্থবছরে ছিল ৬৮ হাজার টন। চলতি অর্থবছরে রয়েছে প্রায় ছয় লাখ টন। তার পরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল, যা উদ্বেগজনক।
পেঁয়াজের পাশাপাশি চালের দামও বাড়তে থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা, বিশেষ করে মধ্য ও নি¤œবিত্ত মানুষ। তারা বলছেন, মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের আসলে কোনো পদক্ষেপ নেই। অতি দ্রুত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে চালের দাম কমিয়ে আনার দাবি তাদের। তবে সরকারি সংস্থার গৎবাঁধা দাবি, তারা বাজার মনিটরিং যথারীতি করছেন। শিগগিরই বাজারদর স্বাভাবিক হয়ে আসবে, দেশবাসীর সামনে এমন আশাবাদী হওয়ার কারণ আছে বলে মনে হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement