২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফের শতকে পেঁয়াজের দর

বাজার নজরদারিতে গাফিলতি

-

কোনোভাবেই পেঁয়াজের দাম কমছে না। বেশ কিছু দিন আগে ভারত হঠাৎ পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে বাংলাদেশে এক লাফে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর শতকের ঘরে গিয়ে পৌঁছে। তখন সরকার কিছু উদ্যোগ নিলে দাম কিছুটা কমে আসে। কিন্তু গত কয়েক দিন রাজধানীর পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫-১০০ টাকায়। মাত্র পক্ষকালের মধ্যে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিপ্রতি ২০-২৫ টাকা। এতে ফের খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়, যা রেকর্ড বটে। ভারতীয় পেঁয়াজ ৯০-১০০ টাকা এবং মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮৫-৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আবার দাম বেড়ে যাওয়ায় পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। দেশে পেঁয়াজের সঙ্কট রয়েছে সত্য, কিন্তু এমন আকাশছোঁয়া দামের পেছনে সরকারের বাজার নজরদারিতে নিদারুণ গাফিলতিও স্পষ্ট।
পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজ আসছে না। মিয়ানমার থেকে যে পেঁয়াজ আনা হচ্ছে, এর ৩০-৫০ শতাংশই নষ্ট। ভারত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিলে এ দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম এক দিনে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে যায়। ফলে সকালে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৫৫-৬০ টাকা দর থাকলেও বিকেলে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পরদিন খুচরা বাজারে পেঁয়াজের কেজি ১০০ টাকা ছাড়িয়ে যায়। জনগণের চাহিদা পূরণ করতে সরকার মিয়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খোলে। বাজারে দৃশ্যত নজরদারি বাড়ানো হয়। টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রির পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলা হয়। মিয়ানমার থেকে প্রচুর পেঁয়াজ দেশে আসে। ফলে গত সপ্তাহে পেঁয়াজের কেজি ৮০-৮৫ টাকায় নেমে এসেছিল। দ্রুত পেঁয়াজ আমদানি করতে না পারলে আগামী ২-৩ মাস পেঁয়াজের দাম আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।
দেশে সেপ্টেম্বরে আগাম পেঁয়াজের আবাদ শুরু হয়ে যায়। আকস্মিক বন্যার কারণে এবার এখনো তা শুরু করা যায়নি। এতে পেঁয়াজসঙ্কট মোকাবেলা আরো কঠিন হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, শুধু পাবনার ১০টি ইউনিয়নেই এক হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়। স্থানীয় কৃষকেরা দুই দফায় দুই জাতের পেঁয়াজ আবাদ করে থাকেন। মোট পেঁয়াজ উৎপাদন হয় দুই লাখ ১০ হাজার টন। বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার পর উঁচু জমিতে আগাম পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। ডিসেম্বরের প্রারম্ভে এ জাতের ১৮ হাজার টন পেঁয়াজ পাওয়া যায়, যা সঙ্কট মোকাবেলায় কিছুটা হলেও সহায়ক। মাত্র দুই মাসে এ পেঁয়াজ খাওয়ার উপযোগী হতে পারে। ফলে প্রতি বছর ডিসেম্বরের শুরু থেকে আগাম জাতের মূলকাটা পেঁয়াজ পাওয়া যায়। কিন্তু এবার আবাদে কিছুটা বিলম্ব হবে। তাই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসতে সময় লাগবে। বন্যার কারণে এখনো মাঠে পানি। ফলে ওই পেঁয়াজ রোপণ করতে পারছেন না কৃষকেরা।
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে সরকারের তরফ থেকে যে দাবি করা হয়, তা আংশিক সত্য; পুরো নয়। ধান উৎপাদনে আমরা সাফল্য অর্জন করেছি। তবে অন্যান্য কৃষিপণ্য, বিশেষ করে ভোজ্যতেল ও রবিশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখনো অনেক পিছিয়ে। কৃষিসংশ্লিষ্ট অধিদফতরের হিসাব মতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ২৩ লাখ ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে। আমদানি হয়েছে ১০ লাখ ৯২ হাজার টন। অর্থাৎ ৪০ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়, যার বেশির ভাগ আসে ভারত থেকে। রসুন ও আদা আসে চীন থেকে। এ অবস্থায় ওই দু’টি দেশে পণ্যের উৎপাদন কমে গেলে কিংবা রফতানি কর বাড়ানো হলে আমদানিমূল্য বেড়ে যায়। কোনো পণ্য আমদানি করে সঙ্কটের মাত্র সাময়িক সমাধান মেলে। কিন্তু স্থায়ীভাবে প্রতিকারের জন্য চাই এসব পণ্যের আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনা। এর একমাত্র উপায় হচ্ছে দেশেই উৎপাদন বাড়ানো। তাহলে অন্যান্য দেশের মর্জির ওপর আর নির্ভর করতে হবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement