২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এবার শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন

দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে

-

এবার শিক্ষকের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটাল এক শিক্ষার্থী। বিভাগের চেয়ারম্যানের রুম থেকে তাড়িয়ে নিয়ে যায় তাকে একদল উচ্ছৃঙ্খল ছাত্র। লিফট থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করে লাঞ্ছিত করে তাকে। একপর্যায় ওই ছাত্রদের একজন তার ওপর কেরোসিন ঢেলে দেয়। ঘটনাটি ঘটিয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের (ইউএসটিসি) কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ ঘটনার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের উপদেষ্টা প্রবীণ শিক্ষক মাসুদ মাহমুদ। যারা এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের প্রভাব কাজে লাগিয়েছে অন্যায় কর্মকাণ্ডে।
শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্র মাহমুদুল আলমকে আটক করেছে পুলিশ। অভিযুক্তকে আটক করে কেবল তাকে শাস্তি দানের মাধ্যমে এ অপরাধের অপনোদন হতে পারে না। এর সাথে যারা ইন্ধনদাতা রয়েছে, তাদেরও শনাক্ত করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে নিতে হবে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। এভাবে একজন প্রবীণ স্বনামধন্য শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার ঘটনা সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের চূড়ান্ত নমুনা প্রকাশ করে। শিক্ষাঙ্গনে এ লক্ষণ আরো আগে থেকে দেখা দিয়েছে। এ ধরনের নিন্দনীয় অনেক ঘটনার সাথেই সম্পৃক্ত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। কোথাও এই কাজে তাদের নেতাকর্মীরা সরাসরি সম্পৃক্ত; কোথাও দেখা যাচ্ছে তারা পরোক্ষ ইন্ধন জোগাচ্ছে। ইউএসটিসিতে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার সাথে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের একটি অংশের উসকানির কথা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে। এ ঘটনার সূত্রপাত কিছু ছাত্র নিয়মিত ক্লাস না করায় তাদের পরীক্ষা দিতে না দেয়ার কারণে। এর সাথে যুক্ত হয় কয়েকজন শিক্ষকের চাকরিচ্যুতি। এই প্রবীণ শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রথমে অভিযোগ তোলা হয় যৌন হয়রানির। তদন্ত কমিটি এ অভিযোগের সত্যতা পায়নি, বরং এ শিক্ষকের পড়ানোর ধরন নিয়ে শিক্ষার্থীরা মুগ্ধ; এমন খবর উঠে এসেছে। অভিযোগ তোলা শিক্ষার্থীরা চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের এক নেতার অনুসারী। এরা শিক্ষা উপমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেয় ব্যাপারটি নিয়ে। মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষার্থী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার চেষ্টা করে ক্যাম্পাসে। অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার, গুটিকয় শিক্ষার্থী এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ঘোরতর অসম্মানজনক যে আচরণ করেছে, তাকে তুই-তোকারি করেছে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছে; এ ধরনের আচরণ কেবল রাজনৈতিকভাবে আশকারা পাওয়া সন্ত্রাসীরাই করতে পারে। এমন আচরণ আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো দেখেছি। সামান্য কারণে ক্ষমতাসীন দলের উগ্র কর্মীরা শিক্ষকদের বিভিন্ন সময় অপমানিত-অসম্মানিত করে এমনকি মারধর করার ঘটনাও ঘটিয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছে, ছাত্র নামের এমন সন্ত্রাসীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হচ্ছে না। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইন-আদালত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
প্রবীণ শিক্ষক মাসুদ মাহমুদকে লাঞ্ছিত করেই ক্ষান্ত হয়নি ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীরা। তার হাতে থাকা একটি বই কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে দেয় তারা। ওই বইটি তিনি ৫০ বছর ধরে সযতেœ রেখেছিলেন। এ বইয়ের সাথে তার দুর্লভ কিছু স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। আমরা দেখছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্ষমতাসীনদের সাথে সংশ্লিষ্ট ছাত্ররা নানা ধরনের অযাচিত কর্মকাণ্ড করে চলেছে। ন্যক্কারজনক ওই সব ঘটনার বিচার না হওয়ায় অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। সামান্য কারণে এসব ছাত্র নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে করে খুনোখুনি যেমন হচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশও বিঘিœত হচ্ছে। গত বুধবার নগণ্য কারণে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দু’টি পক্ষ মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে ৭০ জন ছাত্র আহত হয়েছে। আমরা মনে করি, অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিলে এমনটি ঘটতে পারে না।


আরো সংবাদ



premium cement