২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খালিদ হোসেনের ইন্তেকাল

চলে গেলেন শুদ্ধ নজরুলগীতির এক সৈনিক

-

নজরুলগীতির বরেণ্য শিল্পী, গবেষক, স্বরলিপিকার ও একুশে পদকে ভূষিত শুদ্ধ সঙ্গীতসাধক খালিদ হোসেন ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। গত বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন অসমান্তরাল উচ্চতায় ওঠা এই নজরুলগীতি শিল্পী, গবেষক ও সংগঠক। তিনি এ দেশের একজন জ্যেষ্ঠ নজরুলগীতি শিল্পী হিসেবে সবার কাছে ছিলেন ব্যাপক জনপ্রিয়। তার এই বিদায় এ দেশের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষকে ব্যথিত করেছে।
নজরুলের গানের জন্য তার নিবেদন কোনো দিন ভোলার নয়। নজরুলের গান গাওয়া, গবেষণা, অন্যদের সংগঠিত করাসহ এ সম্পর্কিত নানা ক্ষেত্রে তিনি তার কর্মযজ্ঞ দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। তিনি আর আমাদের মধ্যে নেই। তবুও তার গাওয়া নজরুলের গান যেন এখনো আমাদের কানে বাজে। একজন মানুষ হিসেবেও ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। সবার প্রতি যথাযোগ্য আচরণ প্রদর্শনে ছিলেন তিনি আন্তরিক। তিনি যাদের সাথে মিশতেন তাদের সাথে মজা করতে ভুলতেন না। অনেকের সাথে খোশগল্পসহ হাসি-তামাশায় মেতে উঠতেন। সব মিলিয়ে সঙ্গীত জগতের বাইরেও তিনি ছিলেন একজন প্রাণের মানুষ। এই প্রাণের মানুষটিকে হরিয়ে আজ অনেকেই ব্যথিত।
ইন্তেকালের সময় খালিদ হোসেনের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। বেশ কয়েক বছর ধরেই তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। কিছু দিন আগে তার কিডনির জটিলতা বেড়ে যায়। ফুসফুসেও সমস্যা ছিল। পাশাপাশি ছিল বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা। চিকিৎসা নেয়ার জন্য প্রতি মাসেই তাকে হাসপাতালে যেতে হতো। প্রায়ই দুই-তিন দিন তিনি হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি থাকতেন। সর্বশেষ গত ৪ মে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে চিকিৎসকেরা তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়েননি। এখনেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
খালিদ হোসেনের জন্ম ১৯৩৫ সালের ৪ ডিসেম্বর। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জফনগরে। দেশভাগের পর তিনি মা-বাবার সাথে কুষ্টিয়ার কোর্টপাড়ায়, ১৯৬৪ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস করেন।
নজরুলগীতি শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন দীর্ঘ দিন। দেশ-বিদেশে রয়েছে তার অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। তিনি একুশে পদক পান ২০০০ সালে। এ ছাড়া পেয়েছেন নজরুল একাডেমি পদক, শিল্পকলা একাডেমি পদক, কলকাতা থেকে চুরুলিয়া পদকসহ অসংখ্য সম্মাননা। তার গাওয়া গানের ছয়টি অ্যালবাম প্রকাশ হয়েছে। আছে একটি আধুনিক গানের অ্যালবাম ও ১২টি ইসলামী গানের অ্যালবামও। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, দেশের সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ টেক্সট বুক বোর্ডে সঙ্গীত প্রশিক্ষক ও নিরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তার মতো একজন গুণী শিল্পীর চলে যাওয়া নিঃসন্দেহে জাতির জন্য এক অভাবনীয় ক্ষতি। আমরা তার ইন্তেকালে পরিবারের সদস্যদের শোক বইবার ক্ষমতা প্রার্থনা করছি মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে। সাথে কামনা করছি তার রূহের মাগফিরাত।


আরো সংবাদ



premium cement