২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গায়েবি মামলার রহস্য

বিরোধীদের অন্যায়ভাবে দমন-নিপীড়ন

-

বাংলাদেশে পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার নতুন কিছু নয়। দিন যত গড়িয়েছে, পুলিশকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের প্রবণতাও বেড়েছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১৮ সালের শেষের দিকে একেবারে বেহায়ার মতো ব্যবহার করা হয়েছে পুলিশকে। বিরোধী নেতাকর্মীদের আসামি করে হাজার হাজার গায়েবি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলার আসামি হয়ে সারা দেশের বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর চরম হয়রানি নেমে আসে। জাতীয় নির্বাচনের আগে পর্যন্ত বিরোধী নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়িয়েছেন। একটি জাতীয় দৈনিক এমন মামলা নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে বৃহস্পতিবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে উঠে এসেছে এসব আজগুবি মামলার রহস্য। কিছু মানুষকে হয়রানি করার জন্য নির্বাচনী মওসুমে ওই সব মামলা করা হয়েছিল, এ ব্যাপারটি এখন একেবারে স্পষ্ট হলো। প্রশ্ন হচ্ছে, জনগণের সেবাদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানকে এতটা নগ্নভাবে ব্যবহার করার কোনো প্রতিকার কি নেই?
পত্রিকাটি লিখেছেÑ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকার বিভিন্ন থানায় দায়ের হওয়া ‘গায়েবি’ মামলাগুলোর চার্জশিট দিতে পারছে না পুলিশ। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ছয়টি থানায় দায়ের হওয়া এসব মামলার বিষয়ে অনুসন্ধান করে পত্রিকাটি বলেছে, এসব মামলায় ঘুরেফিরে একই আসামি এবং মামলার এজাহারেও মিল পাওয়া গেছে। আলামত হিসেবে যেসব জব্দ করেছে পুলিশ, সেগুলোও বড়ই হাস্যকর ঠেকেছে। অন্য দিকে মামলাগুলোর বিষয়ে কিছুই জানেন না অনেক সাক্ষী, এমনই জানা গেল। পত্রিকাটির অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিমানবন্দর থানায় গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর করা ২২(৯)১৮ নম্বর মামলার এজাহারে বলা হয়, থানা এলাকায় আশকোনার হজ ক্যাম্পের সামনে হজ ক্যাম্প পার্কিংয়ে নাশকতা চালানোর জন্য বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি চালাচ্ছিল। ঠিক এ সময় থানার টহল দল সেখানে উপস্থিত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর এলোপাতাড়ি ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এতে একাধিক পুলিশ সদস্য আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে পুলিশ পরে আসামিদের নাম জানতে পারে। মামলায় আসামি করা হয় ১১২ জনকে, আছেন অজ্ঞাতনামা আরো ১০-১২ জন। আলামত হিসেবে পুলিশ জব্ধ করেছে স্কচটেপের একটি টুকরো, দু’টি জর্দার কৌটা, ১১টি ভাঙা ছোট-বড় ইটের টুকরা ও ১৩টি বাঁশের লাঠি। পত্রিকাটির প্রতিবেদনে দেখা যায়, একই তারিখে দক্ষিণখান থানায় দায়ের করা আরেকটি মামলার ধরনও প্রায় একই রকম। এই মামলায় সাক্ষী হিসেবে যাদের নাম রয়েছে, তাদের স্বাক্ষর হুবহু একই রকম। আলামতে জব্দ তালিকার লেখার সাথেও এই লেখা মিলে যায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের এ দুই থানার মামলার মতো ছয়টি থানার মামলার এজাহার বিশ্লেষণ করে একই চিত্র পায় পত্রিকাটি। ছয়টি থানায় এ ধরনের ২০টি মামলায় ঘুরেফিরে একই ব্যক্তিদের নাম এসেছে। একজন জানিয়েছে, তার বিরুদ্ধে ১১টি মামলা। নির্বাচনের আগের মাসগুলোতে তার হয়রানির শেষ ছিল না। অন্য দিকে যাদের সাক্ষী বানানো হয়েছে, এমন ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, এ ব্যাপারে তারা কিছু জানে না। এই হলো দেশব্যাপী হাজার হাজার গায়েবি মামলার প্রকৃতি।
পুলিশের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা ও মানুষের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে কাজ করা। বাস্তবে বাংলাদেশে পুলিশের কর্মকাণ্ডে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো অবস্থা দেখা যায়। ক্ষমতাসীন দল পুলিশকে স¤পূর্ণভাবে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায়। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এবং বিভিন্ন সময় যেভাবে বিরোধীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ক্ষতিকর নজির সৃষ্টি করেছে। আইনের শাসনের চরম অবনতির ইঙ্গিতই এটা বহন করে। বিরোধী নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের অধিকার যখন পুলিশ খর্ব করেছে, তখন এর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শক্ত পদক্ষেপ লক্ষ করা যায়নি। ‘শেষ ভরসাস্থল’ হিসেবে সর্বোচ্চ আদালতও সাধারণ মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি। এমনটি কোনোভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। আমরা মনে করি, ‘গায়েবি’ মামলার ব্যাপারে স্বাধীন তদন্ত হওয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement
কুষ্টিয়াতে মসজিদ কমিটি নিয়ে সংঘর্ষে আহত ৫ চেয়ারম্যান তপন ও অজিত মেম্বারকে ধরিয়ে দিতে পারলে পুরস্কার ঘোষণা নারায়ণগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ ডাকাত সদস্য গ্রেফতার রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি ছাড়াল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকদের ভিসা সহজ করার আহ্বান প্রবাসী প্রতিমন্ত্রীর চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী না হয়ে অংশীদার হওয়া উচিত : শি জিনপিং ওকাব সভাপতি নজরুল ইসলাম, সম্পাদক জুলহাস আলম পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে চুয়েট ১১ মে পর্যন্ত বন্ধ, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত নরসিংদীতে হিট স্ট্রোকে শিশুর মৃত্যু হিলিতে ভটভটি-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

সকল