২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
  প্রবাসে সঙ্কটে বাংলাদেশীরা

এগিয়ে আসছেন না সংশ্লিষ্টরা

-

বাংলাদেশীরা নিজের ও পরিবারের একটু ভালো জীবনের প্রত্যাশায় প্রবাসে গিয়ে আয়-রোজগার করার মরিয়া চেষ্টা করেন। এই চেষ্টায় অনেক সময় জীবন বিপন্ন হচ্ছে অনেকের। বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রচেষ্টায় অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। সুদূর এশিয়া, আফ্রিকা পাড়ি দিয়ে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টা করেও অনেকে প্রাণ দিচ্ছেন। সর্বশেষ ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে তিউনিসিয়া উপকূলে ৬০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের বেশির ভাগ বাংলাদেশী। একইভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশী অভিবাসীরা নানা সমস্যায় রয়েছেন। এদের বেশির ভাগই নি¤œ আয়ের শ্রমজীবী। অনেকে অবৈধ অভিবাসী হয়ে পলাতক জীবন কাটাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশী দূতাবাসের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি ন্যূনতম সহযোগিতা না করার অভিযোগ রয়েছে।
দরিদ্র পরিবারের তরুণ সদস্যরা বিদেশে গিয়ে নিজেদের ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখেন। আদম বেপারিরা তরুণদের এমন স্বপ্নকে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কাজে লাগায়। অনেকে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে তাদের হাতে তুলে দেন। পাড়ি জমান অজানার উদ্দেশে। বিদেশে গিয়ে দেখেন তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেটা মিথ্যা। তার হাতে যেসব কাগজপত্র দেয়া হয়েছে সেটা ভুয়া। যে বেতনের বথা বলা হয়েছে, সেটা ছিল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি। নিজেকে তিনি আবিষ্কার করেন একজন অবৈধ অভিবাসী হিসেবে। পালিয়ে বেড়াতে হয় প্রশাসনের কাছ থেকে। এ ধরনের প্রতারণার ঘটনা ঘটছে অহরহ। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, এ ধরনের অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসীদের শেষ পরিণতি হয় জেলখানা। অথচ তারা এর আগে দেশীয় দূতাবাসের সাহায্য পাওয়ার কথা। অনেকে অভিযোগ করেন, দূতাবাস কেবল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকে। কিন্তু অসহায়, অবৈধ বাংলাদেশীদের কোনো ধরনের সাহায্য করতে আগ্রহী নয়। সহযোগী একটি দৈনিক জানাচ্ছে, বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে কাগজপত্রহীন ১০ লাখ বাংলাদেশী রয়েছেন। অনেকের ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ওইসব দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এ ধরনের অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা মালয়েশিয়ায় তিন লাখ ও সৌদি আরবে দুই লাখ। ভিসা সমস্যায় চরম সঙ্কটে আছেন আরব আমিরাতে পাঁচ লক্ষাধিক লোক। ইউরোপ, আমেরিকা ও আফ্রিকায়ও এমন অবৈধ বাংলাদেশী অভিবাসী রয়েছেন। এদের প্রতি দেশের দায় রয়েছে। যেখানে এ ধরনের লোক বিদেশী মুদ্রা পাঠিয়ে অর্থনীতিকে সচল রেখেছেন, অন্য দিকে জীবনের শঙ্কা নিয়ে যারা বঙ্গোপসাগর কিংবা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিচ্ছেন; তাদের ব্যাপারে দেশের কি কিছু করণীয় নেই? আমরা দেখেছি অনেকে ইউরোপে অবৈধভাবে প্রবেশ করে পরে নানা চেষ্টা-প্রচেষ্টা করে বৈধ হয়েছেন। এমন বৈধদের ভালো অবস্থা থেকে অন্যরা অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন। এ ব্যাপারটি সরকারের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা দরকার। ইউরোপ যদি বাংলাদেশী অভিবাসী গ্রহণ করে, সেটা একটা বৈধতার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হতে পারে।
সচ্ছলতার আশায় বিদেশে গিয়ে যারা সঙ্কটে পড়ছে তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশী দূতাবাস এ জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছেন। এসব দেশে থাকা শ্রমিকেরা বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে যাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে দূতাবাসে প্রয়োজনীয় তদারকি করার কথা। বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সমস্যায় পড়ে যাওয়া বাংলাদেশীরা দ্রুত সাহায্য পান না। অবৈধ শ্রমিক হয়ে পুলিশের ভয়ে সদা তাড়িত হন। এ ব্যাপারে কী উদ্যোগ নিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, সাধারণ জনগণ সেটি দেখতে চায়। তারা প্রত্যাশা করে, বিদেশের মাটিতে একজন বাংলাদেশীও অবহেলার শিকার হবেন না।

 


আরো সংবাদ



premium cement