২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ফারমার্স ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতি

নিয়মকানুনের প্রতি চরম অবহেলা

-

বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের দুর্নীতির চিত্র ভয়াবহ। একেকটি ব্যাংকের দুর্নীতির যে চিত্র পাওয়া যায়, তা অনেক সময় বিশ্বাস করাও কঠিন। কী করে কোনো ব্যাংকে এ ধরনের জাল-জালিয়াতি চলতে পারে? আরো প্রশ্ন জাগে, ব্যাংকগুলো পরিচালনার জন্য কোনো নিয়মকানুন কি দেশে কার্যকর আছে? ফারমার্স ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতির ঘটনা তেমনি একটি উদাহরণ। কারণ, এ ঘটনায় এক পরিবারের পেটে গেছে ওই ৫০০ কোটির মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা। এ ধরনের দুর্নীতি যে একটি ব্যাংককে ধ্বংসের পথে নিয়ে যেতে পারে, তা আমরা কয়েক মাস আগে দেখেছি। এ ধরনের দুর্নীতি ব্যাংকটির সুনাম এমনভাবে বিনষ্ট করে যে, শেষ পর্যন্ত ব্যাংকটি নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম ‘পদ্মা ব্যাংক’ ধারণ করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে, নাম পরিবর্তন করে ব্যাংকটি তার ব্যবসায়িক সুনাম ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে কি?
একটি জাতীয় দৈনিক এর শীর্ষ সংবাদে জানিয়েছেÑ বহুলালোচিত ফারমার্স ব্যাংকের জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পরিবারের পেটে গেছে ৩০০ কোটি টাকা। ব্যাংকের সাবেক প্রভাবশালী পরিচালক ও অডিট কমিটির চেয়ারম্যান মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী, তার স্ত্রী রোজী চিশতী, ছেলে রাশেদুল হক চিশতী ও কলেজপড়–য়া মেয়ে রিমি চিশতীর নামে এসব টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও দুদকের আলাদা দু’টি তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ফারমার্স ব্যাংকের ওপর তৈরি করা তদন্ত প্রতিবেদনটি দুদকে পাঠানো হয়েছে। এর সূত্র ধরে দুদক আরো বিশদ অনুসন্ধান করছে। তাদের অনুসন্ধানে ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বাবুল চিশতীর অবিশ্বাস্য সব জালিয়াতির ঘটনা উঠে আসে। দুদক চিশতী পরিবারের সব সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে। প্রতিবেদন দু’টি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফারমার্স ব্যাংকে বলতে গেলে কোনো ধরনের নিয়মই মানা হয়নি। বাবুল চিশতীর মৌখিক নির্দেশে ব্যাংক কর্মকর্তারা শত শত কোটি টাকা লেনদেন করেছেন। ব্যাংক থেকে নগদ টাকা দেয়ার ক্ষেত্রে কোনো চেক বা লিখিত নেয়ার প্রয়োজন পর্যন্ত বোধ করেননি এসব কর্মকর্তা। চিশতীর মৌখিক নির্দেশেও ব্যাংক থেকে টাকা দেয়া হয়েছে। তবে এসব টাকার বেশির ভাগই গেছে তার পরিবারের সদস্য এবং তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবে। পরে এসব অর্থ চিশতী নিজের কব্জায় নিয়েছেন।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, এসব লেনদেন কিভাবে চলতে পারল, বাংলাদেশের একটি ব্যাংকে প্রচলিত নিয়মে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে হলে চেক এবং পেমেন্ট দিতে হলে লিখিত আদেশ দিতে হয়। এ ছাড়া টাকা তোলার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু ফারমার্স ব্যাংকে চিশতীর বেলায় এসব কিছুই লাগেনি! যেখানে ব্যাংকের প্রতিটি লেনদেনে থাকা আবশ্যক যথাযথ কাগজপত্র। একটি ব্যাংকে সুশাসনের অভাব কম বেশি নেমে গেলে এমনটি ঘটতে পারে, তা সহজেই বোধগম্য।
আমরা মনে করি, এই অনিয়মের সাথে জড়িত বাবুল চিশতী ও তার পরিবারের সদস্যসহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা জরুরি। নইলে ব্যাংক খাতে অব্যাহত দুর্নীতি আরো ব্যাপকতা লাভ করবে। ফলে গোটা ব্যাংক খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যা জাতীয় অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে বাধ্য।


আরো সংবাদ



premium cement