২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্বাগতম পয়লা বৈশাখ

নববর্ষ হোক এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়

-

আজ বাংলা সন ১৪২৬-এর প্রথম দিন, পয়লা বৈশাখ। এ দিবস আমাদের শেখায় নতুন প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত হতে। পয়লা বৈশাখ বাঙালি সংস্কৃতির এক ঐতিহ্যধারার গুরুত্বপূর্ণ দিন। এটি এ দেশের সমাজকে দিয়েছে সমৃদ্ধ লোকজ ঐতিহ্য। আমাদের সমাজজীবনে পয়লা বৈশাখ নববর্ষের আবহ ও আমেজ সৃষ্টি করে, তেমনি উল্লসিত রাখে উৎসবমুখর একটি দিন উদযাপনে। এর মধ্যে ঐতিহ্যগত রেওয়াজ ও লোকজ সংস্কৃতির কিছু রূপময়তা ফুটে ওঠে। এ দিন নারী-পুরুষ ও ছেলে-বুড়োসহ সব বয়সী মানুষকে আনন্দে উদ্বেলিত হতে দেখা যায়। বাংলাদেশের জনজীবনে আজো দেশীয় বা বাংলা পঞ্জিকা নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটি বাংলার প্রকৃতি, লোকসংস্কৃতি, জলবায়ু ও জীবনযাত্রার সাথে ঘনিষ্ঠ।
বাংলা বর্ষপঞ্জি ‘ফসলি সন’ হিসেবে পরিচিত ছিল। মোগল সম্রাট আকবরের পৃষ্ঠপোষকতায় সৌরসনের সাথে মিল রেখে হিজরি পঞ্জিকার ভিত্তিতে বাংলা সন বর্ষ গণনার রীতি চালু করা হয় কৃষিকাজ তথা অর্থনৈতিক প্রয়োজন মেটানোর স্বার্থে। নানা সংস্কারের মধ্য দিয়ে বাংলা সন একটি বাস্তবোচিত ও বিজ্ঞানসম্মত পঞ্জিকার মর্যাদায় আজ অধিষ্ঠিত। ষাটের দশকে এ ব্যাপারে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহসহ বাংলা একাডেমির ভূমিকা স্মর্তব্য। যুক্তিসঙ্গত সংস্কারের ফলে লিপইয়ারসহ বাংলা সন এখন সুনির্ধারিত, যা ইংরেজি বর্ষপঞ্জির সাথে চমৎকার সাযুজ্য তৈরি করেছে।
হালখাতা, অর্থাৎ পুরনো হিসাবকে হালনাগাদ করার রেওয়াজ থেকে পয়লা বৈশাখের দিনে নববর্ষ পালনের তাগিদ এলেও এটা আর সেখানে সীমাবদ্ধ নেই। এর সাংস্কৃতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব বেড়েছে অনেক। বেড়েছে জনজীবনে উদ্যোগ-আয়োজন এবং উৎসাহ-উদ্দীপনাও। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে খেলা-মেলা, সঙ্গীত-বিনোদন আর আনন্দ উপভোগে এখন পয়লা বৈশাখ বাংলাদেশে সার্বজনীন জাতীয় উৎসব। অতীতেও এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম সম্প্রদায় ও দেশের সবাই বাংলা নববর্ষকে আত্মস্থ করে নিয়েছে নিজ নিজ কৃষ্টি ও বিশ্বাসের আলোকে। একই দিন যার যার সাধ্যমতো উৎসব-আয়োজন, খেলা-মেলার মধ্য দিয়ে আপন সংস্কৃতির মধ্যে অবগাহন করে আসছে। অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে দেশজ সংস্কৃতির মধ্যে বৈরী সংস্কৃতির অনাকাক্সিক্ষত অনুপ্রবেশ ঘটানোর অপপ্রয়াস লক্ষ করা যায়।
পয়লা বৈশাখ উদযাপন আমাদের সমাজ, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে বিভিন্নভাবে এবং সাধারণ মানুষকে শিকড়ে ফিরতে অনুপ্রাণিত করেছে। কৃষিজীবী মানুষকে সম্পূর্ণভাবে সম্পৃক্ত করা সম্ভব হলে এর বৈচিত্র্য ও আকর্ষণ আরো বাড়বে। নগরজীবনের অসহ বিড়ম্বনায় একটু স্বস্তি পেতে শহুরে মানুষেরা পয়লা বৈশাখ পালনের তাগিদ অনুভব করেছে। তবে এ ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের সাথে কিছু শহুরে ও আরোপিত অপসংস্কৃতির প্রলেপ দেয়া হচ্ছে। অথচ এসবের সাথে কৃষিভিত্তিক গ্রামবাংলার গণমানুষের আত্মার সম্পর্ক নেই।
নববর্ষ আসে অতীতের গ্লানি দূর করে সামনে এগোনোর তাগিদ নিয়ে। হতাশাগ্রস্ত ও বিভক্ত জাতি নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে চায় আত্মসমীক্ষার পথ ধরে। মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের সাথে সেতুবন্ধে আমাদের সংস্কৃতি হয়ে উঠুক সব ধর্ম, বর্ণ, পেশা ও শ্রেণীর গণমানুষকে জাগিয়ে তোলার উদ্দীপনা। সেই সাথে, যাবতীয় সঙ্কট উত্তরণে জাতি নতুন চেতনায় জেগে উঠুক। পয়লা বৈশাখ হোক আমাদের এগিয়ে যাওয়ার অনিঃশেষ প্রত্যয়।


আরো সংবাদ



premium cement