২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কাশ্মিরি জনগণের ওপর নিপীড়ন

সমস্যার সমাধানের পথ নয়

-

কাশ্মিরিদের ওপর নতুন করে নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু হয়েছে। কোনো ধরনের বাছবিচার ছাড়া কাশ্মিরি মানেই দোষী, এ ধরনের মনোভাব ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পুলওয়ামা জেলায় ১৪ ফেব্রুয়ারি হামলার পর ভারতজুড়ে এমন অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর ওপর ওই হামলা নিয়ে প্রকৃত তদন্ত ছাড়া নরেন্দ্র মোদি সরকার অভিযোগের আঙুল তুলেছে। সেনাবাহিনীকে ব্ল্যাংক চেক দেয়া হয়েছে যে, তারা কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে যেকোনো ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারবে। এখন দেখা যাচ্ছে, কাশ্মিরি জনগণের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী বা আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন জায়গায় কাশ্মিরিদের বিরুদ্ধে আগ্রাসী পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলার পর ভারত সরকারের পক্ষ থেকে তড়িঘড়ি করে পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়। এই ঘটনার সাথে পাকিস্তান নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে। ভারতের পক্ষ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্তান এর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। যেকোনো ধরনের ভারতীয় পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দেয়া হবে বলে পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টা হুমকি এসেছে। পরমাণু যুদ্ধের আশঙ্কায় জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশ দু’টি চাইলে তারা উভয় দেশের মধ্যে মধ্যস্থতা করবে। এ দিকে দিল্লিতে অবস্থানরত পকিস্তান হাইকমিশনে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেয়া হচ্ছে না। একদল ভারতীয় উত্তেজিত জনতা সেখানে ঢুকে পড়তে চাইছে। তাদেরকে বিরত রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে কমিশনের গেটে বিক্ষুব্ধ জনতা ধাক্কাধাক্কি করেছে। এ ব্যাপারে পাকিস্তান কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারত সরকারের আক্রমণাত্মক মনোভাবের কারণে পুরো ভারতে কাশ্মিরবিরোধী মনোভাব দেখা দেয়া স্বাভাবিক। টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়, আগ্রার কিছু হোটেল মালিক কাশ্মিরিদের অতিরিক্ত তথ্য রাখছেন। তারা কাশ্মিরিদের কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন। অন্য দিকে হামলার পর সেনাবাহিনীকে কাশ্মিরে যেকোনো ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার অনুমোদন দিয়েছেন মোদি। ফলে সেখানকার সাধারণ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমন খবরও আসছে, অনেক এলাকায় কাশ্মিরিরা বাড়ি-ঘর ছেড়ে মসজিদে আশ্রয় নিয়েছে। কাশ্মিরে অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘ একটি প্রতিবেদন পেশ করে। অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মিরে নৃশংসতা বন্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। আগে থেকে কাশ্মিরিদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন চালানো হচ্ছে।
কাশ্মির প্রশ্নে গণভোটের প্রস্তাব রয়েছে জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে। ওই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীন হবে, না তারা ভারত-পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে; তা নির্ধারণের দায়িত্ব নিজেদের ওপর তুলে দেয়া হয় ওই প্রস্তাবে। প্রথমে ভারত জাতিসঙ্ঘের ওই প্রস্তাব মেনে নিলেও পরে গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কাশ্মির নিয়ে ওই বৈরিতা পুরো অঞ্চলকে অস্থির করে রেখেছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘ দিনের শত্রুতার প্রধান কারণ এটি। এর একটি সুরাহা হয়ে গেলে এ ধরনের দীর্ঘ বৈরিতা অবসানের সুযোগ রয়েছে। দমিয়ে রাখার ভারতীয় আগ্রাসী চেষ্টা কাজে আসছে না। এ ধরনের নীতি থেকে ভারতের সরে আসা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement