২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে দুদকের প্রতিবেদন

-

বলতে গেলে বাংলাদেশের সব খাতেই চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। ফলে বাংলাদেশের দুর্নীতিচিত্রের আরো অবনতি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতি সূচকে বাংলাদেশ এবার আরো কয়েক ধাপ পিছিয়েছে। দুর্নীতিতে আমাদের অবস্থানও আরো নিচে নেমে এসেছে। এ থেকে একটা তাগিদ এসেছেÑ দুর্নীতি দমনে আমাদের আরো জোরালো পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সব সরকারই দুর্নীতি দমনে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি বরাবর দিয়ে আসছে। কিন্তু দুর্নীতি দমনে আমরা জাতীয়ভাবে ব্যর্থতার পরিচয়ই দিচ্ছি। দুর্নীতি যে বেড়েই চলেছে, সে জন্য ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সূচক কিংবা দুর্নীতিতে বিশ্বে আমাদের অবস্থান দেখে লাভ নেই, প্রতিদিন দেশের মানুষ দুর্নীতির কবলে পড়ার দুর্ভোগের অভিজ্ঞতার আলোকেই তা আঁচ করতে পারে। সে যাই হোক, দুর্নীতি এখন সব খাতে ক্রমেই জোরালো ও জটিল রূপ ধারণ করছে। সব খাতে দুর্নীতির স্বরূপ চিহ্নিত করে তা অবসানে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদটা আসে। তবে সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদনে এ খাতে দুর্নীতির মূল উৎস খোঁজার প্রয়াস রয়েছে, সেই সাথে দুর্নীতি বন্ধে কিছু সুপারিশ করেছে।
একটি সহযোগী জাতীয় দৈনিক গতকাল এর শীর্ষ সংবাদে জানিয়েছে, দুদক স্বাস্থ্য খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এর ফলে স্বাস্থ্য খাতে একধরনের দুদক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালের পরিচালক, উপ-পরিচালক, মাঠপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এসব কর্মকর্তা একশ্রেণীর ঠিকাদারের সাথে যোগসাজশ করে হাসপাতালের যন্ত্রপাতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন কেনাকাটার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ থেকে মুক্তি পেতে মন্ত্রী, এমপি, সচিবসহ উচ্চপর্যায়ে জোরালো লবিং করছেন।
মন্ত্রীর কাছে দুদক যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে স্বাস্থ্য খাতে ১১টি দুর্নীতির উৎস চিহ্নিত করেছে। গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এই প্রতিবেদন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের হাতে তুলে দেন দুদক কমিশনার মোজাম্মেল হক খান। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরে দুর্নীতি রোধে ২৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছিল দুদক। ওই চিঠির প্রেক্ষাপটে ২৩ কর্মকর্তাকে বদলি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাদের বদলির চিঠিতে বলা হয়, আগামী সাত দিনের মধ্যে তারা বদলি কর্মস্থলে যোগ না দিলে বর্তমান কর্মস্থল থেকে তাৎক্ষণিক অব্যাহতি পেয়েছেন বলে গণ্য হবে। আমরা মনে করি, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের শুধু বদলি করলেই চলবে না, আনীত অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা হোক। সেই সাথে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হোক।
বলা বাহুল্য, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতিবাজদের কারণে সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বারবার এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলা হলেও দৃশ্যমান তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। দেশবাসী চায় এবার অন্তত এদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এই দুর্নীতি নির্মূলে দুদকের প্রতিবেদনে ২৫ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়কে এসব সুপারিশ গুরুত্বের সাথে আমলে নিতে হবে এবং সে অনুযায়ী দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement