২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিস্ময় জাগানো নির্বাচনী হলফনামা

জন্ম দেয় নানা প্রশ্নের

-

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিটি প্রার্থীকে হলফনামার মাধ্যমে তার পরিবারের সদস্যদের অধিকারে থাকা সম্পদ ও আয়ের হিসাব দাখিল করতে হয়। বিষয়টি বাধ্যতামূলক। তাই কোনো প্রার্থীই এই হলফনামা ছাড়া মনোনয়নপত্র দাখিল করতে পারেন না। কিন্তু এবারে নির্বাচনে এসব হলফনামার কিছু কিছুটিতে এমন সব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, যা রীতিমতো সাধারণ মানুষের বিস্ময় জাগায়। যা রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে দেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে একধরনের আস্থাহীনতার জায়গা সৃষ্টি করে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না।
এ ধরনের বিস্ময় জাগানিয়া নানা নির্বাচনী হলফনামার বিবরণ এখন মানুষ জানতে পারছে গণমাধ্যমের সূত্রে। একটি প্রথম শ্রেণীর জাতীয় দৈনিক একজন সংসদ সদস্যের হলফনামার বিস্ময় জাগানো তথ্যের কথা জানিয়েছে ‘রণজিতের সম্পদ নিয়তি নির্ভর’Ñ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে। প্রতিবেদনে জানানো হয়Ñ ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হলফনামায় সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায় বলেছিলেন, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার স্ত্রীর মোট সম্পদ ছিল নগদ ৭০ হাজার টাকা ও ১৫ হাজার টাকা দামের পাঁচ তোলা সোনা। ১০ বছর পর এবারের হলফনামায় একই সংসদ সদস্য বলেছেন, স্ত্রী নিয়তি রায়ের নামে ঢাকার মিরপুরে ২৭১২ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, যশোর শহরে তিনটি বহুতল বাড়ি, ৫০ লাখ টাকা দামের আরো দু’টি ফ্ল্যাট, ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা দামের ব্যক্তিগত ব্যবহারের গাড়ি, ব্যাংকে ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার ডিপিএস, নগদ ৩৪ লাখ ও ৪৫ লাখ টাকার সোনা রয়েছে। ২০০৮ সালে রণজিত কুমারের বার্ষিক আয় ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এখন তার আয় দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ টাকা। এইচএসসি পাস এই সংসদ সদস্যের আয়ের উৎস পারিতোষিক, ব্যবসায়, কৃষি ও ভাড়া আদায়। তিনি যশোর-৪ (বাঘমারা-অভয়নগর ও সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দেয়া হলফনামা মতে, স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রণজিতের নিজের নামে ছিল এক লাখ টাকার বাঘারপাড়ায় চার বিঘা পৈতৃক জমি এবং ৫০ হাজার টাকা দামের খাজুরা বাজারে আধাপাকা একটি টিনের ঘর। আর এখন এই সংসদ সদস্যের সম্পদের মধ্যে রয়েছে পূর্বাচলে রাজউকের ১০ কাঠার প্লট, কোটি টাকা দামের দু’টি জিপ গাড়ি, বাঘারপাড়ার খাজুরা বাজারে ৯০ লাখ টাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, নগদ দুই কোটি ২৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, এক লাখ টাকার সোনা, তিন লাখ টাকার আসবাব এবং ইলেকট্রনিক সামগ্রী।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও জামদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম কাজল বলেছেন, প্রথমবার সংসদ সদস্য হওয়ার সময় একটি টিনের ঘর ছাড়া রণজিত রায়ের কিছুই ছিল না। ১০ বছরে কী এমন আশ্চর্য প্রদীপ পেলেন যে, শত কোটি টাকার মালিক হয়ে গেলেন।
একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচন উপলক্ষে দেয়া মন্ত্রিসভার আরো ১০ সদস্যের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এই পত্রিকাটি জানিয়েছে, তাদেরও আয় ও সম্পদ একইভাবে বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা হলফনামায় দিয়েছেন আগ্রহোদ্দীপক তথ্য।
আমরা জানি না, দুদক প্রার্থীদের হলফনামায় এ ধরনের বিস্ময় জাগানিয়া সম্পদ তথ্যের বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে কি না। অনুসন্ধান করবে কি না এ ধরনের সম্পদ অর্জনের উৎস। কারণ, এ ধরনের হলফনামায় দেয়া সম্পদের বিবরণগুলো জনমনে ইতোমধ্যে জন্ম দিয়েছে নানা প্রশ্নের। জানি না, এ প্রশ্নের জবাব তারা পাবে কি না।

 


আরো সংবাদ



premium cement