২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গণহারে মনোনয়নপত্র বাতিল

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ থাকছে না

-

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কতটা অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে তা নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের ভূমিকায় সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতমূলক আচরণ খুবই স্পষ্ট ও দৃশ্যমান। নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা ততই বাড়ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে মাত্র। সর্বশেষ বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যেভাবে বাতিল করা হয়েছে, তাতে সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, নির্বাচন কমিশন চায় না নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। তারা চায় ক্ষমতাসীনেরাই নির্বাচনে বিজয়ী হোক।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে এবার ৭৮৬ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তাদের বেশির ভাগ বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থী। মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে ও গণফোরাম নেতা রেজা কিবরিয়াও রয়েছেন। সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকলেও তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়নি, কিন্তু তুচ্ছ কারণে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। কয়েকটি আসনে বিরোধী দলের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হলেও সবার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। এভাবে বিপুল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত থেকে মনে হচ্ছে নির্বাচনের আগে অনেককে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
প্রাথমিক যাচাই-বাছাইয়ে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে, তারা আপিলের সুযোগ পাবেন; কিন্তু বিপুল প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের কারণে নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে আরেকটি ভুল বার্তা গেল। প্রকৃতপক্ষে ক্ষমতাসীন দলের সাজানো প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করলে কখনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব হবে না। নির্বাচন কমিশন বলেছিল ছোটখাটো ভুলে কারো মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে না; কিন্তু এর পরও বিপুল প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সঠিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতিপালন করেননি। এমনকি অতি উৎসাহ থেকেও এমন হতে পারে।
আমরা আশা করি, বড় ধরনের বিধি লঙ্ঘন না হলে কারো মনোনয়নপত্র বাতিল করা হবে না। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। না হলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা থাকবে না। নির্বাচন নিয়ে বিরোধী পক্ষের প্রার্থীরা যেকোনো ধরনের কঠোর অবস্থান নিতে পারে, যা গোটা নির্বাচনকে অগ্রহণযোগ্য ও বিতর্কিত করে তুলতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement