২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শ্রমিক ১৫ শতাংশ, ৮৫ শতাংশ মেশিন মেয়াদোত্তীর্ণ

সৈয়দপুর রেল কারখানা এখন ‘জীবন্মৃত’

-

আধুনিক যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ এবং প্রয়োজনীয় জনবলের নিদারুণ অভাবে ঐতিহ্যবাহী সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা এখন ধুঁকছে। এখানে ৭৮৭টি মেশিনের বেশির ভাগের বয়স ২০ বছরের বেশি এবং ৮৫ শতাংশ মেশিনই মেয়াদোত্তীর্ণ। একসময়ে উপমহাদেশ খ্যাত এই কারখানায় কাজ করতেন সাত হাজার ৩৫৬ জন শ্রমিক। সেখানে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র এক হাজার ১১০ জন, যা আগের জনবলের মাত্র ১৫ শতাংশের মতো।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, নীলফামারী জেলার ‘রেলশহর’ সৈয়দপুরে অবস্থিত এই গুরুত্বপূর্ণ কারখানার বয়স প্রায় দেড় শ’ বছর। ঐতিহাসিক সিপাহি বিপ্লবের কয়েক বছর পরে, ১৮৭০ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জমিতে রেল কারখানাটি স্থাপন করেছিল। ১৯৯২ সালের আগে এখানে কর্মরত ছিলেন সাত হাজার ৩৫৬ জন শ্রমিক। তখন কারখানায় তাদের ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটত। ১৯৯৩ সালে ৫৬৭ জনের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সেখানকার জনবল সঙ্কোচনের পালা শুরু। শ্রমিকের সংখ্যা নেমে যায় তিন হাজার ১৭১-এ। দক্ষ শ্রমিকেরা ক্রমেই অবসর নেয়ায় এখন সর্বসাকুল্যে এক হাজার ১১০ জন অবশিষ্ট আছেন। এত বিপুল পদ শূন্য পড়ে থাকার পরও কোনো লোক নিয়োগ করা হয়নি। আগামী দিনে নতুন লোক নিয়োগ দিলেও হয়তো তাদের দক্ষতা অর্জন সম্ভব হবে না। তখন মূল্যবান মেশিন বিনাকাজে পড়ে থাকতে পারে, যা উৎপাদনকে ব্যাহত করবে মারাত্মকভাবে। দক্ষ শ্রমিকের অভাবে ইতোমধ্যে সাত-আটটি নতুন মেশিন ‘অলস বসে থাকতে বাধ্য হচ্ছে’। দিনের পর দিন এ অবস্থা চলায় যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
পত্রিকার খবরে আরো জানানো হয়, সীমিত জনশক্তি দিয়েই পুরনো রেল কোচ মেরামত করতে হচ্ছে। তারা নিপুণ হাতে মেরামত করে কোচগুলোকে রেলপথে চলাচলের উপযোগী করে তুলছেন। অতীতে সৈয়দপুর কারখানায় নতুন রেল কোচ তৈরি হতো; কিন্তু অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাবে তা আর সম্ভব হয় না। ফলে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগব্যবস্থা বিদেশী কোচের আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অথচ পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও দক্ষ কর্মী থাকলে এখানে তৈরি করা কোচ দেশের চাহিদা পূরণ তো করতই, তা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করাও সম্ভব হতো। এতে দেশীয় মুদ্রার সাশ্রয় হতো এবং বেকারত্ব দূর করা যেত অনেকখানি। একে তো কোচ মেরামতের জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি, তদুপরি এ ক্ষেত্রে সরকারের অর্থ বরাদ্দও অপর্যাপ্ত। এ দিকে, নতুন কোচ তৈরি করার কারখানা প্রতিষ্ঠা করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে আগে পুরনো কোচ মেরামতের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকা প্রয়োজন। রেল কর্তৃপক্ষের মতে, সৈয়দপুর রেল কারখানায় দুই-তৃতীয়াংশ জনবল নেই।
আমরা মনে করি, রেল যোগাযোগব্যবস্থার গুরুত্ব এ দেশে মোটেও কমেনি। কারণ, অপেক্ষাকৃত নিরাপদ ও সাশ্রয়ী গণপরিবহন হিসেবে ট্রেন আজো সর্বাধিক জনপ্রিয়। এ অবস্থায় উপযুক্ত জনবল নিয়োগ এবং নতুন মেশিন স্থাপনসহ যথাযথ আধুনিকায়নের মাধ্যমে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুনাম ফিরিয়ে আনা উচিত। এ জন্য যথেষ্ট অর্থ বরাদ্দ করতে হবে সরকারকে। অন্যথায় রেল যোগাযোগ বিঘিœত হবে এবং তা ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement