২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সাইবার হামলা ও অপ্রতুল প্রস্তুতি

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর এ দশা কেন?

-

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মাত্র ৩৮ শতাংশের পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে বড় ধরনের সাইবার হামলা মোকাবেলা করার জন্য। আংশিক প্রস্তুতি আছে ৩৪ শতাংশ ব্যাংকের। তবে ২৮ শতাংশ ব্যাংক আজ পর্যন্ত কোনো প্রস্তুতি নেয়নি সাইবার হামলা মোকাবেলার। এর পাশাপাশি ব্যাংক খাতে ৪৩ শতাংশ জালিয়াতি ঘটছে এটিএম কার্ড দ্বারা।
ব্যাংকের মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই উদ্বেগজনক চিত্র ফুটে উঠেছে বিআইবিএম (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট) পরিচালিত একটি গবেষণাকর্মের প্রতিবেদনে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ‘বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর আইটি নিরাপত্তা : হুমকি ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক জাতীয়পর্যায়ের সেমিনারে এটি উপস্থাপন করা হয়েছে।
বিআইবিএমের ওই জরিপের ভিত্তিতে জানানো হয়, প্রতারণার অর্ধশত ঘটনার নিরিখে দেখা যায়, প্রতারণা বা জালিয়াতি বেশি ঘটে এটিএম কার্ডের মাধ্যমে। এটা ৪৩ শতাংশ জালিয়াতির ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে। ২৫ শতাংশ প্রতারণার কারণ মোবাইল ব্যাংকিং। ইন্টারনেট ব্যাংকিং ব্যবহার করে ১২ শতাংশ জালিয়াতি ঘটানো হয়। সফটওয়্যার দায়ী ৩ শতাংশের ক্ষেত্রে।
উপস্থাপিত তথ্য-পরিসংখ্যানের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক ডেপুটি গভর্নর বলেছেন, সারা বিশ্বেই তথ্যপ্রযুক্তির ঝুঁকি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি করে দেয়া গাইডলাইন ব্যাংকগুলো মেনে চললে এই ঝুঁকি কমবে। সেমিনারে ব্যাংকারদের মনমানসিকতার পরিবর্তনের ওপর জোর দেয়া হয়, যেন আইটি খাতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়। অনুষ্ঠানে বলা হয়, ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহী থেকে সব পর্যায়ে আইটি বিষয়ে জ্ঞান থাকা চাই। যেহেতু হ্যাকাররা সব সময় সাইবার অ্যাটাক চালাতে প্রস্তুত থাকে, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে তাকিয়ে না থেকে ব্যাংকগুলোকে নিজেরাই হুমকি মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখা দরকার। কিছু ব্যাংকের হ্যাকিং-ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করে বলা হয়েছে, এর কারণ তারা ‘ভেতর থেকে’ সফটওয়্যার নিচ্ছেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মোট মিলিয়ে বলা যায়Ñ মোবাইল, এটিএম এবং প্লাস্টিক কার্ডসহ ইলেকট্রনিক চ্যানেলগুলো দিয়ে ব্যাংক খাতে সর্বাধিকসংখ্যক জালিয়াতি সংঘটিত হচ্ছে। এমনকি খোদ ব্যাংকার আর আইটি পেশাজীবীরা ঘটাচ্ছেন ৪০ শতাংশ সাইবার অপরাধ। ব্যাংক খাতে দুর্বল নিরাপত্তা, নজরদারি না থাকা, কর্মচারীদের মাঝে অপর্যাপ্ত সচেতনতা ইত্যাদি সাইবার হামলার বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী। নিরাপত্তা সচেতনতার মান ব্যাংক কর্মচারীদের ১২ শতাংশের ‘একেবারেই সামান্য’, ১৮ শতাংশের ‘সামান্য’ এবং ২৯ শতাংশের বড় জোর ‘সীমিত’। তদুপরি, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আইটি নিরাপত্তা প্রশিক্ষণের পেছনে পর্যাপ্ত ব্যয় করতে অনীহা প্রকাশ করে থাকেন। বিআইবিএমের ওই সেমিনারে ‘সরষের ভেতরেই ভূত’ থাকার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে জানানো হয়, যারা সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থা সরবরাহের ব্যবসায় নিয়োজিত, এমন অনেকে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তার নিয়মকানুন নিজেরাই লঙ্ঘন করছেন। তাই ব্যাংকের ২৭ শতাংশ সাইবার ক্রাইমে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
সেমিনারে সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কে যথাযথ প্রশিক্ষণ, আইটি নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ, ব্যাংকের সব পর্যায়ে আইটি জ্ঞান ও সাইবার নিরাপত্তার সচেতনতা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ ইত্যাদি বিষয়ের তাগিদ দেয়া হয়েছে।
আমরা আশা করি, বিলম্বে হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতিনির্ধারক পর্যায়ে দায়িত্ববোধ জাগবে এবং সবাই সম্ভাব্য সাইবার হামলা মোকাবেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন। অন্যথায় ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা ও তোড়জোড় বাগাড়ম্বরে পর্যবসিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement