২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রশাসনে দলীয়করণের নেতিবাচক প্রভাব

নীতিনিষ্ঠ হওয়ার দায় বাড়ছে

-

বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসেই প্রশাসন দলীয়করণের দিকে নজর দিয়েছিল। তাই দলীয় মেজাজে প্রশাসন সাজাতে শুরু থেকে সচেষ্ট ছিল। এ কারণেই বর্তমান সরকারের আমলে প্রশাসনে আট দফা পদোন্নতি দেয়া হলেও শুধু রাজনৈতিক কারণে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিতদের তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। মন্তব্যে ‘নেগেটিভ’ উল্লেখ থাকায় পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভাগ্যবিপর্যয় ঘটে। এখন তাদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। দীর্ঘ চাকরিজীবনে সৎ, দক্ষ ও অভিজ্ঞ হওয়া সত্ত্বেও তাদের পদোন্নতি জোটেনি। গত প্রায় ১০ বছরের বেশির ভাগ সময় তাদের ওএসডি থাকতে হয়েছে। আবার অনেককে বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোক চিহ্নিত করে বাড়িও পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
দেশের সিভিল প্রশাসনে বর্তমানে কর্মরত পাঁচ হাজার ৬৯২ কর্মকর্তার মধ্যে ৪৩৮ জনই ওএসডি হয়ে আছেন। অতীতে কখনো এত অধিকসংখ্যক কর্মকর্তা ওএসডি হননি। বৈষম্যের কারণে বঞ্চিত অনেকেই চাকরিজীবনের শেষপর্যায়ে রয়েছেন। বর্তমানে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর সচিব পদে ৭৬ জন, অতিরিক্ত সচিব ৬৩১, যুগ্ম সচিব ৬১৩, উপসচিব এক হাজার ৭৫৫, সিনিয়র সহকারী সচিব এক হাজার ৪৬৩ এবং সহকারী সচিব পদে এক হাজার ১৫৪ জন কর্মরত। আট দফা পদোন্নতির সময় বিভিন্ন ব্যাচ পর্যায়ক্রমে ধরা হলেও কর্মকর্তাদের একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বঞ্চিতই রয়ে গেছেন। ‘ভিন্নমতের’ বলে বঞ্চিত রাখার নীতির কারণে সৎ, যোগ্য, দক্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই গত ১০ বছরে কোনো পদোন্নতি পাননি। দেশে ক্যাডার সার্ভিস এবং প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কর্মকর্তা নিয়োগের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান পাবলিক সার্ভিস কমিশন। গেল সপ্তাহে পিএসসি ৩৯তম বিসিএসের প্রিলিমিনারির ফল প্রকাশ করেছে। ৪০তম বিসিএসের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের ছেলের বয়সীদের সামনে এমন বঞ্চনার রেকর্ড অতীতে নেই।
এক দিকে বর্তমান সরকার যখন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা এবং দফায় দফায় পদোন্নতি দিচ্ছে, পাশাপাশি বঞ্চিতদের ভিড়ও বাড়ছে। ’৮৫-৮৬ ব্যাচ কর্মকর্তাদের বেশ কয়েকজন এখনো উপসচিব রয়ে গেছেন। অথচ তারা মাঠ প্রশাসনে সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সুনাম কুড়িয়েছেন। অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকেই প্রাপ্য পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিভিল প্রশাসনে কর্মরতদের জন্য একটি ‘ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পলিসি’র খসড়া তৈরি করা হয়েছে। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল থেকে এই ক্যারিয়ার প্ল্যানিং পলিসি তৈরির কাজ শুরু হয়। এটি হবে একটি ক্যারিয়ার গাইডলাইন। তবে এ ব্যাপারে অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা মনে করেন, চাকরিজীবনের সঠিক পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া পদোন্নতি দেয়া যায় না। কর্মকর্তাদের জন্য একটি ক্যারিয়ার প্ল্যানিং হলে তা পুরো চাকরিসংক্রান্ত হতে হবে। তা ছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তাকে পদোন্নতি না দেয়া কিংবা বসিয়ে রাখা উচিত নয়। বাস্তবে অনেক কর্মকর্তাকে অনেকটা অমানবিকভাবে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাই পদোন্নতিবঞ্চিতদের বঞ্চনার শেষ নেই।
আমরা মনে করি, প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখা ও মেধাবীদের স্থান করে দেয়াই গতিশীল প্রশাসনের প্রধান ভূমিকা হওয়া উচিত, যা বর্তমানে উপেক্ষিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে পরামর্শ থাকবেÑ শতভাগ নীতিনিষ্ঠ থেকে প্রশাসন সাজানোর উদ্যোগ নিন।


আরো সংবাদ



premium cement