২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পোশাক শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি

শ্রমের উপযুক্ত মূল্যায়ন চাই

-

 

পোশাক শিল্প বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রফতানি খাত হলেও এর মূল কারিগর পোশাক শ্রমিকেরা উপযুক্ত মূল্যায়ন পাননি। পোশাক শিল্পের যতটা বাড়বাড়ন্ত, সেটি বেকারত্বের সুযোগ কাজে লাগিয়ে করা হয়েছে। উদ্যোক্তারা মূলত মানুষের অসহায়ত্ব কাজে লাগিয়ে নিজেদের ব্যবসায় বাড়িয়ে নিয়েছেন। এতে করে একটি গোষ্ঠী হুট করে কোটিপতি বনে গেছে। পোশাক শিল্প শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়ায়নি। এর ওপর নির্ভরশীল শ্রমিক গোষ্ঠীও উপযুক্ত মূল্য পায়নি। একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি কত হবে, এ নিয়ে অনেক টালবাহানা চলেছে। শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। সর্বশেষ জানা গেল, পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা জানি, এ দুর্মূল্যের বাজারে আট হাজার টাকায় একটি সংসার চালানো আদৌ সম্ভব নয়। উচ্চ বাসাভাড়া ও খাদ্যমূল্যের কারণে এই টাকায় একজন শ্রমিকের পরিবার নিয়ে চলা কঠিন।
খবরে প্রকাশ, মজুরি বোর্ডের পঞ্চম সভায় শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার মজুরি বোর্ডের সভায় অনেক দরকষাকষির পর এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এর আগে তাদের ন্যূনতম মজুরি ছিল পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। এর মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি দুই হাজার ৭০০ টাকা বাড়ল। শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামোতে মজুরি পাবেন পোশাক শ্রমিকেরা। চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি পোশাক শ্রমিকদের জন্য মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। স্থায়ী চার সদস্যের সাথে পোশাক কারখানার মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি ও শ্রমিকদের একজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত এই মজুরি বোর্ড সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে মজুরি নির্ধারণ করেছে বলে জানানো হয়েছে। বাস্তবতা হলো, বিগত দশ বছরে মুদ্রাস্ফীতিজনিত কারণে অর্থের মূল্য অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৩ সালের ৭ নভেম্বর পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। আমরা যদি পোশাক খাতের অবদান লক্ষ করি, তাহলে এটাকে পোশাক শ্রমিকদের প্রতি বঞ্চনা বলতে হবে। বছরের পর বছর তাদের বঞ্চিত রেখে আমাদের পোশাক খাত এগিয়ে গেছে। বর্তমানে দেশে পণ্য রফতানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক খাত থেকে। কিন্তু এই খাতে কাজ করা ৩৬ লাখ শ্রমিক মানবেতর জীবন যাপন করেন। পোশাক খাতের দ্রুত উন্নতি হলেও পোশাক শ্রমিকদের ইতিহাস করুণ। ১৯৯৪ সালে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ছিল ৯৩০ টাকা। ২০০৬ সালে সেটি নামমাত্র বাড়িয়ে করা হয় এক হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা। ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি করা হয় তিন হাজার টাকা।
পোশাক শিল্পের পোয়াবারো হওয়ার মূল কারণ বাংলাদেশের গরিব মানুষের সস্তা শ্রম। দুঃখের বিষয়, গরিবদের সাথে আমরা একধরনের প্রতারণা করে গেছি। এ ধরনের উন্নয়ন কখনো ভারসাম্যপূর্ণ হতে পারে না। শ্রমিকদের বঞ্চিত করে যদি পোশাক শিল্পের রফতানির সুযোগ নেয়া হয়, সেটি একপর্যায়ে ভঙ্গুর হবে। এই রফতানি কখনো টেকসই হবে না। মূলত আমাদের দরকার পোশাক রফতানি করে বিশাল গরিব শ্রমিক জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা। এখন মূলত সস্তা শ্রমের সুযোগ নিচ্ছে দু’টি শ্রেণী। একটি শ্রেণী আমাদের গুটিকয় শিল্পপতি, অন্য শ্রেণী হলো বিদেশী ক্রেতারা। আমাদের শ্রমিকদের শোষণ করে এ দুই শ্রেণীর শোষণ-বঞ্চনা অব্যাহত চলতে দেয়া যায় না। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের মজুরি একটি ন্যায্য ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়া দরকার।

 


আরো সংবাদ



premium cement