২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইভিএম প্রকল্পে বিলাসী কেনাকাটা

ক্রয়মূল্য পর্যালোচনা করা দরকার

-

ইভিএম ব্যবহার নিয়ে সরকারবিরোধী সব দলই এর বিরুদ্ধে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের কোনো কোনো শরিক দলও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বলতে গেলে একমাত্র সরকারি দল আওয়ামী লীগই চায় ইভিএম ব্যবহার হোক। নির্বাচন অতি নিকটে। এর পরও নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে ইভিএম নিয়ে চলমান প্রবল বিতর্কের মুখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইভিএম ব্যবহার চাপিয়ে দেয়া হবে না। এর আগে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, সব দল একমত না হলে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। এমনি প্রেক্ষাপটে ধরে নেয়া যায়, আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই কম। কিন্তু অবাক হতে হয়, যখন গণমাধ্যমে খবর আসে ‘ইভিএম প্রকল্পে বিলাসী কেনাকাটা চলছে’।
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর মতে, নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রকল্পে কেনাকাটায় বিলাসিতার অভিযোগ উঠেছে। নতুন ইভিএম প্রস্তুতে কমিটি হলেও দাম নির্ধারণে কোনো কমিটি হয়নি। প্রকল্প খরচের ক্ষেত্রে বাজার যাচাই করা হয়নি। কেনাকাটায় বাজারদরের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে আসবাবপত্র কেনা হচ্ছে। সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াই তিন হাজার ৮২৯ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ইসি। ইসির এমন কার্যক্রমকে বিলাসিতা বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইসি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানিয়েছেÑ নির্বাচন ব্যবস্থায় অধিকতর স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে ‘ইভিএম কেনা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় দেড় লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে জমা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। গত মাসে পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) প্রস্তাবের ওপর বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ দেয়। সেখানে যন্ত্রপাতি কেনাসহ সামগ্রিক কেনাকাটার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে ডিপিপি প্রস্তুত করে পিইসিতে জমা দেয় ইসি। নির্বাচন কমিশনের ডিপিপি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রকল্পের আওতায় ইভিএম ছাড়াও আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র কেনা হচ্ছে উচ্চমূল্যে। নতুন ইভিএমের প্রতি-ইউনিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই লাখ টাকা, যা আগের ইভিএমের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। আসবাবপত্র কেনার বেলায়ও বাজারদর অনুসরণ করা হয়নি। আসবাবপত্রের যে মূল্যতালিকা দেয়া হয়েছে, তা-ও আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। প্রকল্পে একটি নরমাল চেয়ার ১০ হাজার টাকা, এক্সিকিউটিভ চেয়ার ৪০ হাজার টাকা, এক্সিকিউটিভ টেবিল ৮০ হাজার টাকা, সাইড টেবিল ১৫ হাজার টাকা, ড্রেসিং টেবিল ১৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু পত্রিকাটি জানিয়েছেÑ এ ধরনের ২০ রকম আসবাবপত্রের প্রস্তাব রয়েছে উচ্চমূল্যে। রাজধানীর পান্থপথে বেশ কিছু শোরুমে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক্সিকিউটিভ চেয়ারের বিভিন্ন ধরন আছে। আর এসব চেয়ারের দাম ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। দেশের নাম করা ফার্নিচার দোকানের শোরুমে সাধারণ চেয়ারের দাম এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। হাতিলের দোকানে ১৮ হাজার টাকার বেশি দামের কোনো এক্সিকিউটিভ চেয়ার পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিবেচনায় আমরা মনে করি, ইভিএম প্রকল্পে ইভিএম ও আনুষঙ্গিক আসবাবপত্র কেনার সরকারি অর্থের অপচয়ের প্রয়াস রয়েছে। আমরা চাই অবিলম্বে পুরো কেনাকাটার তালিকার অস্বাভাবিক দাম বাতিল করে বাজারদরের সাথে সমন্বয় করা হোক। আর এ ধরনের বিলাসী কেনাকাটার জন্য যারা দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক। না হলে ‘সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল’ প্রবণতা বন্ধ হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement