২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিশ্বমানে পিছিয়ে পড়ছে ব্যাংক খাত

শৃঙ্খলা ফেরাতে সরকার তৎপর নয়

-

নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনে জানা গেছেÑ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পিছিয়ে পড়ছে দেশের ব্যাংক খাত। ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধনের জোগান, খেলাপি ঋণের হার, তারল্য পরিস্থিতি, মুদ্রার বিনিময় হার ও সুদহারের জোগান সূচকে আন্তর্জাতিক মানের চেয়ে দুর্বল অবস্থানে রয়েছে দেশীয় ব্যাংকিং খাত। এ ধরনের দুর্বলতা এক দিনে হয়নি। এক দশক ধরে ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম হয়েছে, অব্যাহতভাবে তা বেড়েছে। কোনোভাবে সরকার এগুলোকে নিয়মের আওতায় আনতে কঠোর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এর নেতিবাচক ফল ভোগ করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় সরকারের যেমন সতর্ক পদক্ষেপ দরকার, সেটি এখন লক্ষ করা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের নিচে হলে আন্তর্জাতিকভাবে তা ঝুঁকির আওতামুক্ত ধরা হয়। কিন্তু সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণের হার ১০ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ব্যাংকভেদে এ হার ৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। ব্যাংক খাতের অবস্থা কতটা নাজুক, অনুমান করা যায়। এতে করে বোঝা যায় কিছু ব্যাংক রয়েছে নামেমাত্র। তাদের আমানতের প্রায় পুরোটাই কুঋণ হয়ে গেছে। দেশের তফসিলি ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে মাত্র ১২টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের নিচে রয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি বেসরকারি ও পাঁচটি বিদেশী ব্যাংক রয়েছে। খেলাপি ঋণ ৩ শতাংশের নিচে আরো বেশ কয়েকটি ব্যাংকের ছিল। প্রথম দিকে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে যখন দ্রুত কুঋণের পরিমাণ বাড়ছিল, সেটি অন্য ব্যাংকের ওপরও প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে সরকারি প্রভাব কাজে লাগিয়ে ঋণ নেয়া হয়েছে। সেসব ঋণ সময়মতো ফেরত দেয়া এখন অনেক দূরের ব্যাপার। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনগণের এসব অর্থ অনেকের পকেটের টাকায় পরিণত হয়েছে। কোনো সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ৩ শতাংশের নিচে নেই। সরকারি ব্যাংকগুলো আগেই খেয়ে ফোকলা করে দেয়া হয়েছে। এরপর একে একে ভালো ভিত্তিসম্পন্ন বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ধরা হয়েছে। কিছু বিদেশী ব্যাংকের অবস্থা ভালো রয়েছে, এর মূল কারণ সেগুলো থেকে লুটপাটের কোনো সুযোগ ছিল না। অন্যথায় এ ব্যাংকগুলোও রুগ্ণ অবস্থায় পতিত হতো। ব্যাংক খাতে মূলধন সংরক্ষণের হারও হতাশাজনক। মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে চার বছর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি রোডম্যাপ দিয়েছিল ব্যাংকগুলোকে। ওই রোডম্যাপ অনুযায়ী, চলতি বছর শেষে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে সাড়ে ১২ শতাংশ হারে মূলধন সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাত মূলধন সংরক্ষণ করতে পেরেছে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ হারে। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান বিবেচনায় নিলে দেশের ব্যাংক খাত অনেক পিছিয়ে রয়েছে। ব্যাংকগুলোর এ দুর্বল অবস্থানে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষ্পত্তি ব্যয় বেড়েই চলেছে। বেড়ে যাচ্ছে ব্যবসায়ের ফি। ব্যাহত হচ্ছে লেনদেনের স্বাভাবিক গতি।
ব্যাংক খাতের লুটপাটের একপর্যায়ে সেটা অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হবে, এমন আশঙ্কা অনেক আগে থেকে করা হচ্ছিল। বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কা কোনো পাত্তা পায়নি। সরকার এসব নিয়ে খুব কমই মাথা ঘামিয়েছে, বরং বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনে হয়েছে লুটেরাদের জন্য একটা সুযোগ খোলা রাখা সরকারের কাজ। সত্যিকার অর্থে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। সরকারের উচিত সংশোধনমূলক পদক্ষেপ নেয়া। ব্যাংক খাতে লুটপাট হওয়া টাকা ফেরত আনতে না পারলেও যেন এর ফুটো বন্ধ করে দেয়া হয়।


আরো সংবাদ



premium cement