২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোরবানির পশুতে ঘাটে ঘাটে চাঁদা

বন্ধ করতে উদ্যোগ দরকার প্রশাসনের

-

ঈদ আমাদের দেশে একশ্রেণীর মানুষের জন্য চাঁদাবাজির মওসুম হিসেবে আসে। দুই ঈদে সারা দেশে যেন চাঁদাবাজদের এক মহাসমারোহ চলে। এবার কোরবানির ঈদে এই চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। মূলত কোরবানির পশুগুলোকে টার্গেট করে চাঁদাবাজি চলে। বাজারের ইজারা নেয়া, ঘাটবদল ও পশু পরিবহন চাঁদাবাজির প্রধান উৎস। একটি পশুকে নির্ধারিত বিক্রেতার কাছ থেকে ক্রেতার হাট পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক ঘাট। প্রতি বছর এ ধরনের ঘাটের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। কোরবানির পশুকে পবিত্র গণ্য করা হয়। তাই এই পশুর রয়েছে আলাদা মর্যাদা। পশুগুলোকে মানুষ স্রষ্টার উদ্দেশ্যে নিবেদন করে। তাই কোরবানির পশুর ওপর এ ধরনের চাঁদাবাজি পুরোপুরিভাবে অনাকাক্সিক্ষত হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এমন চাঁদাবাজি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেই, বরং অনেক ক্ষেত্রে খোদ পুলিশের বিরুদ্ধে রাস্তায় পশু বহনের সময় চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে।
কোরবানির পশু সংগ্রহ করে পশুর হাটে পৌঁছাতে গিয়ে কতটা চাঁদাবাজির শিকার হতে হচ্ছে, এ ব্যাপারে নয়া দিগন্ত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, ঘাটে ঘাটে টাকা দিতে গিয়ে পশুর দাম বাড়ছে। এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গেলেই পশুপ্রতি দাম বেড়ে যাচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটি পশুকে কোরবানির হাটে পৌঁছাতে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত চাঁদাবাবদ লেগে যাবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রাজধানী কিংবা বড় শহরগুলোয় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে অনেক ঘাটে তাদের চাঁদা দিতে হবে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই চাঁদার পরিমাণ আরো বেশিও হতে পারে। এর মধ্যে পশু পরিবহনের যানবাহনের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, বেপারিরা যাতে বেশি দামে যানবাহন ভাড়া করতে বাধ্য হন। যানবাহনের মালিক ও চালকেরা কোরবানির পশু পরিবহন নিয়ে এমন অনৈতিক কাজ করতে পারেন না। কোরবানির আর মাত্র আট দিন বাকি। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পশু সংগ্রহ করছেন বেপারিরা। প্রস্তুতি চলছে বড় বড় শহরে পাঠানোর। প্রত্যন্ত অঞ্চলে পশু সংগ্রহ করতেই তাদের ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিতে হচ্ছে। প্রতিবেদনে দ্বীপজেলা ভোলার উদাহরণ দেয়া হয়। বাজার থেকে কিনতে তহসিল তো দিতেই হয়; এরপর যখন ট্রলারে তোলা হয় গরুপ্রতি দিতে হয় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। লক্ষ্মীপুরে গিয়ে ট্রলার থেকে নামানো হলে গরুপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা দিতে হয়। এরপর নির্ধারিত বাজারে পৌঁছাতে গেলে পথে পথে চাঁদার স্টপেজ রয়েছে। এগুলোয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের অধীনে চাঁদাবাজি চলে। নির্ধারিত অঙ্কের চাঁদা না দিলে কোরবানির পশু চলাচল করতে দেয়া হয় না। রাস্তায় এ ধরনের চাঁদাবাজিতে পুুলিশও যোগ দেয় অনেক সময়। পুলিশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা সিন্ডিকেট করেও এ ধরনের চাঁদাবাজি করে থাকে।
কোরবানির পশুর ওপর এই অনাকাক্সিক্ষত চাঁদাবাজি বন্ধে এখনই উদ্যোগ নিলে সফল হওয়া যেতে পারে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া যেতে পারে। রাস্তায় যারা চাঁদাবাজি করবে, তাদের বিরুদ্ধে অগ্রিম ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। চাঁদাবাজ কারা, সেই রেকর্ড পুলিশ প্রশাসনের কাছে রয়েছে। একটি পশু ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বড় বাজারগুলোয় পৌঁছা পর্যন্ত ঘাটে ঘাটে যদি চাঁদাবাজির শিকার না হয়, তাহলে ক্রেতারা গড়ে একটি কোরবানির পশু ১০ হাজার টাকা কম দিয়ে কিনতে পারবেন। আমরা আশা করব, সরকার এবার বিষয়টিতে নজর দেবে। অন্তত কোরবানির উন্নত নৈতিক উদ্দেশ্য পবিত্রতার কথা ভেবে কঠোর হবে।


আরো সংবাদ



premium cement