০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে ৫০ কোটি বাতিল রুপি

বদলে দিতে অনাগ্রহী ভারত

-

বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশী ও উষ্ণ বন্ধু ভারত। দেশটির সাথে বাংলাদেশের লেনদেন সবচেয়ে বেশি। সেই হিসেবে প্রত্যাশা থাকে, দেশটি আমাদের সাথে উদার আচরণ করবে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বৃহৎ এ দেশটি বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে পারছে না, বরং অনেক সময় অবন্ধুসুলভ ও সঙ্কীর্ণ আচরণ করে থাকে। এবারের সঙ্কীর্ণ আচরণ দেখা গেল মাত্র ৫০ কোটি রুপি নিয়ে। বাংলাদেশী টাকায় যা ৯০ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে ভারত ১০০০ ও ৫০০ রুপির নোট বাতিল করার সময় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে এ পরিমাণ রুপি ছিল। বাংলাদেশ ঠিক সময় এই রুপি পরিবর্তন করতে গেলে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সুযোগ দেয়নি। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বন্ধুত্বের সূত্র ধরে ৫০ কোটি রুপির বদল নিতে চাইলে এখনো কাজ হয়নি।
সহযোগী একটি দৈনিক এ ব্যাপারে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পত্রিকাটি লিখেছে, ভারতে প্রচলিত ৫০০ ও ১০০০ রুপির মুদ্রা বাতিল করার দেড় বছরের বেশি সময় পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সংরক্ষিত ৫০ কোটি ‘বাতিল’ রুপি পরিবর্তন করে দেয়নি দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক; বরং এসব মুদ্রা ফেরত নেয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। এ অবস্থায় ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এসব মুদ্রা পরিবর্তন করা যায় কি না সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনার উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের কাছে পাঁচ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ রুপি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে ৪৯ কোটি ৪৬ লাখ ৫০০ রুপি রয়েছে। ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর এ দু’টি নোট বাতিলের কথা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এরপর এসব নোট পরিবর্তনের জন্য ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় দেশটির সরকার। সময় শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের ভল্টে থাকা রুপি পরিবর্তনের আবেদন জানায় ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ২০১৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর ভারতীয় এসব বাতিল নোট ডলার বা টাকায় রূপান্তর করতে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া বরাবর আধা সরকারি পরিপত্র (ডিও লেটার) দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির ভারতীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার অনুরোধ জানান। নির্ধারিত সময়ে এ অনুরোধ রক্ষা করা দূরে থাক, চিঠি দেয়ার ১৩ মাসেরও বেশি সময় পর চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক জবাব দিয়েছে। ওই চিঠিতে একটি আইনের দোহাই দিয়ে এসব নোট পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
৫০ কোটি রুপি বা ৯০ কোটি টাকা অর্থের অঙ্কে অনেক বড় কিছু নয়। বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের কাছে এটি একটি ছোট অ্যামাউন্ট। তবে দুই দেশের বন্ধুত্বের যে মাত্রা, তাতে এটি অবশ্যই একটি গণ্য বিষয়। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সময়মতো বাতিল রুপি পরিবর্তনের আনুষ্ঠানিক আবেদন করে। সেটি করা হয় যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের এ আহ্বানকে সম্মান জানানো হয়নি। এখন বাংলাদেশ এই মুদ্রা পরিবর্তনের জন্য বন্ধুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চেষ্টা করছে। আমরা আশা করব, ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সঙ্কীর্ণতা দেখিয়েছে, ভারতের রাজনৈতিক নেতারা এর ঊর্ধ্বে উঠবেন নিশ্চয়ই। তারা ৫০ কোটি রুপির সমপরিমাণ অর্থ বাংলাদেশকে পরিবর্তন করে দেবেন, আশা করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement