২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালে ধর্মঘট

রোগীদের জিম্মি করে আন্দোলন নয়

-

চট্টগ্রামে একটি বেসরকারি হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সূত্র ধরে চট্টগ্রাম নগরীর সব বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এতে করে চিকিৎসাধীন রোগীরা চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। অনেকে রোগী নিয়ে এসে হাসপাতালে সেবা পাচ্ছেন না। একটি শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঘটনার পর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পরে একই হাসপাতালে র্যাবের অভিযান ও এর পরবর্তী জরিমানার সূত্র ধরে এই ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। অসুস্থ ও রোগীদের বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব পাওয়ার কথা থাকলেও সেটাই যেন আড়ালে চলে গেল। সরকারি প্রশাসন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের রশি টানাটানিতে রোগীরা ভুক্তভোগী।
র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত বন্দর নগরীর মেহেদীবাগের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেন। এই জরিমানার প্রতিবাদে সেবা বন্ধ করে দিয়েছে চট্টগ্রামের বেসরকারি সব হাসপাতাল ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। র্যাবের অভিযানের মধ্যেই নগরীর জিইসি মোড়ে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) কার্যালয়ে চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান মালিকেরা জরুরি বৈঠকে বসেন। পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক, ম্যাক্স হাসপাতালের পরিচালক ডা: লিয়াকত আলী খান অনির্দিষ্টকালের জন্য সেবা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। ধর্মঘটের ঘোষণায় বলা হয়েছে, হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন রোগীরা এই ধর্মঘটের আওতায় পড়বেন না। গত রোববার দুপুরে হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন বেসরকারি চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান সমিতির ঘোষণার পর প্যাথলজি পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেকে ফিরে এসেছেন। অনেক রোগী হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। খবরে প্রকাশ, ম্যাক্স হাসপাতাল থেকে ঘোষণার এক ঘণ্টার মধ্যে এক রোগীকে চিকিৎসা না পেয়ে বেরিয়ে যেতে দেখা গেছে। ওই নারী রোগী পেটে ব্যথা ও বমির লক্ষণ নিয়ে ৪ জুলাই থেকে এ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রোগীর আত্মীয়দের বলা হয়েছেÑ ‘ডাক্তার নেই’। ঘোষণার পর বন্দরনগরীর প্রবর্তক মোড়ের সিএসসিআর ক্লিনিকের মূল ফটক বন্ধ দেখা যায়। এ হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইভাবে ও আর নিজাম রোডের চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সেবা বন্ধ, রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। একই অবস্থা দেখা যায় নগরীর রয়াল হাসপাতাল ও শেভরন হাসপাতালেও।
রোগীদের চিকিৎসাসেবা শর্তহীন থাকা দরকার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডাক্তার-নার্সসহ যারা সেবার কাজে জড়িত রয়েছেন, প্রত্যেকের কাছে এমন প্রত্যাশা করলে কি বেশি কিছু আশা করা হয়? যারা ডাক্তার হয়েছেন, তারা মূলত মানুষের সেবার ব্রত নিয়ে এই পেশায় এসেছেন। নার্সেরাও একই ধরনের মানসিকতা থেকে এই সেবাকর্মে এসে থাকেন। তবে এ ব্যাপারটিও সত্য, ডাক্তার রোগীর কাছে অনেক সময় উপযুক্ত মূল্যায়ন পান না; কিন্তু রোগীর অবস্থার অবনতি হলে অনেক সময় এর দায় তার ওপর বর্তানোর চেষ্টা করা হয়। একজন রোগী সুস্থ ও আরোগ্য লাভ যেমন করতে পারেন, একইভাবে তার অসুস্থতাও বাড়তে পারে। এ বিষয়টি সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। ডাক্তার ও রোগীর সম্পর্ক নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখা উচিত। শুধু আমাদের দেশে এ সম্পর্ক বেশ তিক্ত। এ জন্য বাংলাদেশের চিকিৎসা নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা চালানো হয়। ফলে বাংলাদেশের চিকিৎসার ওপর একধরনের অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রোগীরা চলে যাচ্ছেন ‘ভালো চিকিৎসার’ জন্য আশপাশের দেশে। আমাদের অবশ্যই চিকিৎসাব্যবস্থার এ ত্রুটি সারিয়ে তুলতে হবে। রোগীদের কোনোভাবেই জিম্মি করা যাবে না।


আরো সংবাদ



premium cement