২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এক বছরে ১৬ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ

গ্রাহক অসন্তুষ্টি প্রধান কারণ

-

বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে গত কয়েক বছর ধরে একের পর এক দুঃসংবাদ শুধু আসছেই। ফলে ব্যাংক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে ব্যাংক গ্রাহকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা ধরনের প্রশ্নের জন্ম নিচ্ছে। থেকে থেকে আসা এসব দুঃসংবাদ টেকসই ব্যাংক খাত প্রতিষ্ঠার পথে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি করছে। একই সাথে ব্যাংক খাতের ওপর গ্রাহকদের আস্থা আর সন্তুষ্টি কমছে, যা কখনোই কাম্য হতে পারে না। কারণ, ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে বড় পুঁজি হচ্ছে গ্রাহকদের আস্থা ও সন্তুষ্টি। এ দু’টি বিষয় হারিয়ে ফেললে ব্যাংক খাতের অস্তিত্ব হুমকির মুখোমুখি হতে পারে বলে ব্যাংক সংশ্লিষ্ট তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন; কিন্তু বাস্তবে আমরা ঠিক তেমনই একটি অবস্থানে রয়েছি।
গতকাল বেশ কয়েকটি পত্রিকার খবরে জানা গেছেÑ গ্রাহকদের ব্যাংক খাতের প্রতি অসন্তুষ্টির জের ধরে গত বছর ১৬ লাখ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে দেশের ব্যাংক গ্রাহকেরা, যা আগের যেকোনো বছরের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে বলেছেÑ গত কয়েক বছরে ব্যাংক সেবায় গ্রাহকদের অসন্তুষ্টি বেড়েছে। এ কারণে ২০১৭ সালে ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৮১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে গেছে। এর পেছনে গ্রাহকদের অসন্তুষ্টিই মূল কারণ। বন্ধ হওয়া এসব হিসাব দেশের মোট ব্যাংক হিসাবের ১২ শতাংশ। এর আগে ২০১৪ সালে ৮.৬০ শতাংশ গ্রাহক অসন্তুষ্ট হয়ে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করে দেন। ২০১৫ সালে এ ধরনের গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৯.৪২ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৬৪ শতাংশ।
এই গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছরে ব্যাংক হিসাব বন্ধের প্রবণতা বাড়ছে। দেশের ব্যাংক খাতে চলমান অস্থিরতাও এই হিসাব বন্ধের কারণ বলে মনে করছেন তারা। গত পরশু রাজধানীতে আয়োজিত ‘সাসটেইনেবিলিটি ইন সার্ভিস কোয়ালিটি অ্যান্ড কাস্টমার্স কনফর্মিটি : ড্রাইভার্স অব কাস্টমার্স লয়েলটি টু ব্যাংকস’ শীর্ষক এক জাতীয় সেমিনারে উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি মূল প্রবন্ধে আরো উল্লেখ করেন, প্রতি বছর গ্রাহকেরা এভাবে ব্যাংক হিসাব বন্ধ করলেও ৫৬ শতাংশ ব্যাংকে এ বিষয়ে গ্রাহকদের কোনো সাক্ষাৎকার নেয়ার ব্যবস্থা নেই। এমনকি বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবের কোনো রেকর্ডও সংরক্ষণ করা হয় না।
আমরা মনে করি, এটি আমাদের ব্যাংকগুলোর একটি বড় ধরনের দুর্বলতা। অথচ ব্যাকগুলোর উচিত ছিল তাদের নিজস্ব উদ্যোগে তাদের ব্যাংকের হিসাবগুলো এভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণ উদঘাটন করা। এরই সাথে এসব কারণ দূর করে এই প্রবণতা বন্ধ করা। গ্রাহকের অসন্তুষ্টি ও আস্থা হারানোই এর মূল কারণ হতে পারে। এ ছাড়াও এর পেছনে থাকতে পারে আরো নানা কারণ। ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে সেসব কারণ বের করে খুবই প্রয়োজন। কারণ, ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে ব্যাংক হিসাব বন্ধের এই নেতিবাচক প্রবণতা বন্ধ করা জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রবণতা কী করে বন্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ সবার আগে নেয়া দরকার সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে। তা ছাড়া ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকেরও এ ক্ষেত্রে করণীয় রয়েছে বলে আমরা মনে করি। বিআইবিএম যে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে, তাতে চিহ্নিত এ প্রবণতার কারণগুলো দূর করায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। তবে ব্যাংক খাতে সার্বিক অস্থিরতা দূর করার বড় দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। আশা করি এ ব্যাপারে যার যা করণীয়, তা করতে সব পক্ষ একটু নড়েচড়ে বসবেন। কারণ, ব্যাংকগুলোকে টিকিয়ে রাখতে ব্যাংক হিসাব বন্ধের এই প্রবণতা আর চলতে দেয়া যায় না।


আরো সংবাদ



premium cement