২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


 ভোটের মাঠ ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থকদের জন্য নির্বিঘ্ন নয়!

 ভোটের মাঠ ২০ দল ও ঐক্যফ্রন্ট সমর্থকদের জন্য নির্বিঘ্ন নয়! - ছবি : সংগৃহীত

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা সরকার সমর্থকেরা ব্যাপক ডামাডোলে শুরু করলেও এক যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমর্থকদের জন্য তা নির্বিঘ্ন নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেন এমন নেতাকর্মীদের বেছে বেছে পুলিশ গ্রেফতার করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতৃবৃন্দ। প্রচারণা শুরুর প্রাক্কালেই বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান অভিযোগ করেছেন, সোমবার রাত থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত তার নির্বাচনী এলাকার ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনে টিকে থাকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন। 

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে পুলিশি গ্রেফতারি থেমে নেই। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা চাঁদাবাজিসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যে, তারা জড়িত নয়; কিন্তু পুলিশ তাদের কিছুই করছে না, উল্টো তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে বিএনপি নেতাদের দাবি। পাশাপাশি পুলিশ সরকারবিরোধী কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি, হুমকি-ধমকি দিচ্ছে এবং গণগ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে উল্লেখ করে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীতেই তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। 

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক ইদ্রিস আলী নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গত তিন দিন ধরে ইতঃপূর্বে যারা মেয়র নির্বাচনে বিএনপির এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচনে শরিক দলগুলোর প্রার্থীদের এজেন্ট ছিলেন এবং আগামী নির্বাচনে যারা সম্ভাব্য এজেন্ট থাকতে পারেন এমন সক্রিয় তৃণমূলের কর্মীদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ হানা দিচ্ছে এবং হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। পুলিশের ভূমিকা রীতিমতো উদ্বেগজনক বলে তিনি দাবি করেন। 

এ দিকে মহানগরীর নিকটবর্তী চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড নির্বাচনী এলাকায় সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর বাড়ি ঘেরাও করে ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয় বলে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে। বাকলিয়া থানার বিএনপি নেতা ইয়াকুব চৌধুরীকে গতকাল সকালে কোতোয়ালি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, যাকেই গ্রেফতার করা হচ্ছে তাকেই বিভিন্ন মামলায় আসামি করে চালান দেয়া হচ্ছে। 

চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া সাতকানিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিনা ওয়ারেন্টে বা মামলা ছাড়া গ্রেফতার এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি করে হয়রানি করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন মাওলানা শামসুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমির জাফর সাদেক।

গতকাল দুপুর ১২টায় শাহ আমানত (রহ:)-এর মাজার জিয়ারতের মধ্যে দিয়ে প্রচার শুরুর প্রাক্কালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম-১০ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের যে ওয়াদা করেছিল তার বরখেলাপ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, গত সোমবার রাত থেকে এ পর্যন্ত তার এলাকার দশজনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গণহারে গ্রেফতাার চলছে বিভিন্ন এলাকায়। তাদের পাওয়া না গেলে পরিবারের সদস্যদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হলেও এ ব্যাপারে কোনো সমাধান মেলেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসন যে কার্যক্রম শুরু করেছে তাতে নির্বাচনে টিকে থাকাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করুন। অন্যথায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য আপনাদের দায়ী থাকতে হবে।’

ধানের শীষের প্রার্থীর বিবৃতি
এ দিকে চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া সাতকানিয়া) আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিনা ওয়ারেন্টে বা মামলা ছাড়া গ্রেফতার করা এবং বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিযান ও তল্লাশি করে হয়রানি করার প্রতিবাদে বিবৃতি প্রদান করেছেন ২৩ দলীয় জোটপ্রার্থী আ ন ম শামসুল ইসলামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আমির জাফর সাদেক।

গতকাল এক বিবৃতিতে জাফর সাদেক বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পর থেকে সিইসি কর্তৃক কোনো দলের কর্মী-সমর্থকদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার না করার ঘোষণা থাকলেও এই এলাকায় নিরীহ জনগণকে গ্রেফতার করে যাচ্ছে। রাতে ধানের শীষের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি পুলিশ পাঠিয়ে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে। ইতঃপূর্বে বেশ কয়েকজনকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে গায়েবি মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে চালান দেয় পুলিশ। এমনকি গত সোমবার পুলিশ লোহাগাড়া থানার সুখছড়ি রহমানিয়া মাদরাসা শিক্ষক ও মৌলভীপাড়া নিবাসী মাওলানা শফিকুর রহমান এবং লোহাগাড়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড হাজীপাড়া নিবাসী মো: নাজিম উদ্দীনকে কোনো ধরনের মামলা ব্যতীত গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

গতকাল মঙ্গলবার ধানের শীষের পোস্টার লাগানোর সময় পদুয়া ও আধুনগর থেকে কর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। অন্য দিকে, সাতকানিয়া থানার বিভিন্ন ইউনিয়নে রাতে অভিযানের নামে ধানের শীষ প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালায়। উপজেলার ঢেমশা ইউনিয়নের হাফেজ আমির হোসাইনকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

প্রার্থীর কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে যাকে যেভাবে পেয়েছে আটক করে নিয়ে যায়। ছদাহা ইউনিয়নের ফজুরপাড়ায় মাওলানা নুর মোহাম্মদের বাড়িতে গিয়ে কেওচিয়া থেকে বেড়াতে আসা তার ভগ্নিপতি মোহাম্মদ জসিম উদ্দীন এবং একই ইউনিয়নের আফজলনগর এলাকার আইয়ুব মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালিয়ে তার ভাই ইলিয়াছসহ মোহাম্মদ ওসমান ও আরফাতকে কোনো ধরনের মামলা ছাড়াই গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আর সাতকানিয়া পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ড ভোয়ালিয়া পাড়ার কাউন্সিলর নেছার আহমদসহ ২০ দলীয় জোটের বেশ কয়েকজন কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে পুলিশ তল্লাশি চালায়। 

বিবৃতিতে বিশেষ অভিযানের নামে সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের গ্রেফতার না করে আওয়ামী প্রার্থীর নির্দেশে জামায়াত, শিবির ও আ ন ম শামসুল ইসলামের নির্বাচনী সমর্থকদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করায় তীব্র নিন্দা জানানো হয়। একই সাথে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে গ্রেফতার ও হুমকি-ধমকি বন্ধ করে জনগণের হয়ে পুলিশকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়।


আরো সংবাদ



premium cement