১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


কুবিতে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা, ভিসির পদত্যাগ দাবি

কুবিতে শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা, ভিসির পদত্যাগ দাবি - ছবি : নয়া দিগন্ত

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচিতে ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরসহ সাবেক শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন মামলার আসামিদের নিয়ে হামলা করা হয়েছে। হামলার জেরে ভিসির অপসারণ চেয়ে এক দফা দাবি ঘোষণা করেছে কুবি শিক্ষক সমিতি।

গত ২৫ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি ঘোষিত ৭ দফা দাবি না মানায় ভিসি, ট্রেজারার ও প্রক্টরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে তাদের দফতরে তালা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর গতকাল শনিবার ট্রেজারারকে অবরুদ্ধ করে তার (ট্রেজারার) গাড়ি আটকে দেয় তারা (শিক্ষক সমিতি)।

পরে আজ (২৮ এপ্রিল) দুপুর ১ টায় প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী, সহকারী প্রক্টর অমিত দত্ত, জাহিদ হাসান ও মোশাররফ হোসেন ও আইকিউএসির পরিচালক ড. রশিদুল ইসলাম শেখের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাবেক শিক্ষার্থীরা তালা ভেঙে ফেলেন।

এ সময় তারা ভিসি ও ট্রেজারারকে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশের চেষ্টা করলে শিক্ষকরা বাধা দেয়ায় তাদের ওপর অতর্কিত হামলার করা হয়।

প্রতিবেদকের হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাবেক শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কিল-ঘুষি, লাথি ও ধাক্কা দিয়ে ভিসিসহ প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। এ সময় তারা ‘জয় বাংলা' এবং ‘শিবিরের গালে গালে, জুতা মার তালে তালে, ‘শিবিরের চামড়া তুলে নিব আমরা'সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

ভিডিও ফুটেজে আরো দেখা যায়, ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মোর্শেদ রায়হানকে কনুই দিয়ে ঘুষি মারেন এবং মার্কেটিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানকে ধাক্কা দেন। এছাড়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোকাদ্দেস-উল- ইসলামকে ঘুষি দিতে দেখা যায়। এরপর হামলায় আহত শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য প্রবেশ করলে সাবেক শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় দফায় আবারও শিক্ষকদের ওপর হামলা করেন।

এরমধ্যে সাবেক শিক্ষার্থী আমিনুর বিশ্বাস ও পার্থ সরকার প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় প্রক্টরিয়াল বডির উপস্থিতিতে পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক ড. দুলাল চন্দ্র নন্দী ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌসকে ধাক্কা দেন। পরবর্তীতে উপস্থিত সাধারণ শিক্ষার্থীরা আমিনুর বিশ্বাসকে নিবৃত্ত করে নিয়ে যান।

তার আগে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মো: শামিমুল ইসলাম সাবেক শিক্ষার্থীদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে বিপ্লব দাস ও আমিনুর রহমান বিশ্বাস ধাক্কা দিয়ে তাকে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর আমিনুর ও রকিবুল হাসান রকি গিয়ে শিক্ষক লাউঞ্জ বন্ধ করে দেয়।

শিক্ষকদের হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুর বিশ্বাস বলেন, তারাও (শিক্ষকরা) ধাক্কা দিয়েছে আমরাও ধাক্কা দিয়েছি। ধাক্কা যদি লেগে যায় তাহলে তো করার কিছু নাই। আমরা বের হতে চেয়েছিলাম।

পার্থ সরকারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর না দিয়ে চলে যান।

এ বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, আমরা পূর্ব ঘোষিত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। তখন ভিসি এসে আমাকে ধাক্কা দেন। পাশাপাশি আমার সহকর্মী সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষকদের ঘুষি মেরে, সন্ত্রাসী কায়দায় ভেতরে প্রবেশ করেন। তার সাথে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা, অছাত্র, ফৌজদারি মামলার আসামি তারাও শিক্ষকদের ওপর হামলা করে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এখন সাত দফার পাশাপাশি এখন আমাদের প্রধান দাবি ভিসির অপসারণ।

এ সময় হামলায় শিকার হওয়ার লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. জান্নাতুল ফেরদৌস লতা বলেন, ভিসির উপস্থিতিতে কেন বহিরাগত ও অছাত্ররা শিক্ষকদের ওপর আঘাত করবে, এটা কোথাকার কালচার? এখানে সুষ্ঠুভাবে চাকরি করতে এসেছি, মার খাওয়ার জন্য আসি নাই। আমিসহ আমার বেশ কয়েকজন সহকর্মীরা আঘাত পেয়েছেন। তারা আমাদেরকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী রানাকে মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও বারবার তিনি প্রতিবেদকের কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক ড. এএফএম আবদুল মঈন বলেন, এখানে আমাদের কোনো দোষ নেই। তাদের দাবিগুলো অযৌক্তিক। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা করছে। আমি তাদের সব সমস্যার সমাধান করে দিয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement