৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ক্রেতাশূন্য রেকর্ডসংখ্যক কোম্পানি

ডিএসই থেকে তালিকাচ্যুত রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইং

-

দীর্ঘ পর্যবেক্ষণের পর দু’টি কোম্পানি তালিকাচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কর্তৃপক্ষ। কোম্পানি দু’টি হলো খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের রহিমা ফুড করপোরেশন ও বস্ত্র খাতের মডার্ন ডাইং। বুধবার ডিএসই পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুসারে কোম্পানি দু’টিকে তালিকাচ্যুত করা হয়। বৃহস্পতিবার থেকে কোম্পানি দু’টির লেনদেন আর ডিএসইর মূল মার্কেটে হচ্ছে না। তবে ওটিসি মার্কেটে কোম্পানিটির লেনদেনের সুযোগ থাকবে।
ডিএসই কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে কোম্পানি দু’টির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ভবিষ্যতেও উৎপাদনে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তাই ডিএসই পর্ষদ কোম্পানি দু’টির তালিকাচ্যুতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসইর একজন পরিচালক এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে উৎপাদনে না থাকা সত্ত্বেও কোম্পানি দু’টির শেয়ারের দাম অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে, যা পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের জন্য তিকর। তাই ডিএসইর ২০১৫ সালের লিস্টিং রেজুলেশনের ৫২(১)(সি) ধারা অনুযায়ী কোম্পানি দু’টিকে তালিকাচ্যুত করা হয়েছে।
ডিএসইর এই সিদ্ধান্তে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বিস্ময় প্রকাশ করলেও অধিকাংশ বিনিয়োগকারী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। বাজারে এ ধরনের আরো বেশ কিছু কোম্পানির ব্যাপারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর অভিযোগ রয়েছে যেগুলো বাস্তবে কোনো উৎপাদনে না থাকলেও শুধু স্বল্প মূলধনকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর বিনিয়োগকারী অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটাচ্ছে যা পুঁজিবাজারের শৃঙ্খলা ও স্বাভাবিকত্ব নষ্ট করছে। অথচ আইনগতভাবে এসব কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তাই তারা এ ধরনের বাকি কোম্পানিগুলোর বিষয়েও দ্রুত সিদ্ধান্ত চান।
১৯৯৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রহিমা ফুড লিমিটেড। কিন্তু ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। ২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির নিকট ভবিষ্যতে উৎপাদন শুরু হওয়ার মতো কোনো সম্ভাবনা নেই। তারপরও শেয়ার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। সর্বশেষ বুধবার কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১৭৪ দশমিক ৭০ টাকায়। অথচ গত নভেম্বরে কোম্পানিটির শেয়ারদর ছিল ৪৩ টাকা। সে হিসাবে গত কয়েক মাসে উৎপাদনহীন কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ৪০০ শতাংশের বেশি।
অন্য দিকে ২০১০ সালের ৩১ জানুয়ারি থেকে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে মডার্ন ডাইং অ্যান্ড স্ত্রিন প্রিন্টিং লিমিটেডের। এরপর ওই বছরই বিশেষ সাধারণ সভায় (ইজিএম) শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতিক্রমে ফ্যাক্টরির জায়গা দীর্ঘ মেয়াদে গোডাউনের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে। তারপরও শেয়ারটির দাম বাড়ে অস্বাভাবিকভাবে। ১৯৮৮ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অথচ দিনের পর দিন অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে সর্বশেষ গত বুধবার কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের শেয়ার ৩২৬ টাকায় লেনদেন হতে দেখা যায়। ওই দিনও কোম্পানিটির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায় দিনের সার্কিট ব্রেকারের সর্বোচ্চ।
এ দিকে ডিএসই কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দু’টি কোম্পানির তালিকাচ্যুতির সিদ্ধান্তে গতকাল ‘জেড’ গ্রুপে লেনদেন হওয়া রেকর্ডসংখ্যক কোম্পানি ছিল ক্রেতাশূন্য। সাম্প্রতিক সময়ে পুঁজিবাজারটিতে একদিনে একসাথে এতগুলো কোম্পানি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়তে দেখা যায়নি। কমপক্ষে ২০টি কোম্পানির শেয়ারের কোনো ক্রেতা ছিল না। দিনের শুরুতে এ সংখ্যা আরো বেশি ছিল। কিন্তু যেসব কোম্পানি এখনো উৎপাদনে রয়েছে এ ধরনের কোম্পানিগুলোতে ধীরে ধীরে শেয়ারের ক্রেতা ফিরে আসতে দেখা যায়। কোম্পানিগুলোর মধ্যে ছিল এমারেল্ড অয়েল, জুট স্পিনার্স, সমতা লেদার, সাভার রিফ্রেক্টরিজ, শ্যামপুর সুগার মিলস, ইমাম বাটন, বিচ হ্যাচারিজ, সোনারগাঁও টেক্সটাইলস, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক ও দুলামিয়া কটন।
বাজার পরিস্থিতি : বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও মিশ্র আচরণের শিকার ছিল পুঁজিবাজার। উভয় বাজারই লেনদেন শেষ করে সূচকের নামমাত্র উন্নতি দিয়ে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বেশির ভাগ খাতেই ছিল মিশ্র আচরণ। তবে এ সময় দেশের দুই বাজারেই লেনদেন বৃদ্ধি পায়। ডিএসই গতকাল ৯১২ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে যা আগের দিন অপেক্ষা ৪৯ কোটি টাকা বেশি। বুধবার ডিএসইর লেনদেন ছিল ৮৬৩ কোটি টাকা। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) লেনদেন পৌঁছে যায় ১৫২ কোটিতে। আগের দিন বাজারটি ৬০ কোটি টাকার লেনদেন নিষ্পত্তি করে।
সূচকের উন্নতি দিয়ে দিন শুরু করলেও গতকাল লেনদেনের বিভিন্ন পর্যায়ে সৃষ্ট বিক্রয়চাপ বাজারের অবনতি ঘটায়। বিশেষ করে রেকর্ড পরিমাণ কোম্পানি ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ায় এ সময় তা সূচককে যেমন কমবেশি প্রভাবিত করে তেমনি বাজারে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়। এতে দিনের শুরুতে বৃদ্ধি পাওয়া সূচকের সামান্যই টিকে থাকে।
ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স গতকাল ৩ দশমিক ২৪ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়। ডিএসই-৩০ ও ডিএসই শরিয়াহ সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৪ দশমিক ৪৮ ও ৩ দশমিক ৯৮ পয়েন্ট। অপর দিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে সার্বিক মূল্যসূচক ও সিএসসিএক্স সূচকের উন্নতি ঘটে যথাক্রমে ৪১ দশমিক ০৫ ও ৩৯ দশমিক ৭৮ পয়েন্ট। এখানে সিএসই-৫০ ও সিএসই শরিয়াহ সূচক যথাক্রমে ১ দশমিক ১৯ ও ৬ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট বৃদ্ধি পায়।


আরো সংবাদ



premium cement