২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রাজারহাটের মাছ চাষের বিলগুলো প্রভাবশালীদের দখলে

চাকিরপশার বিলে পাড় বেঁধে দখল করা হচ্ছে : নয়া দিগন্ত -

রাজারহাটের ঐতিহ্যবাহী মাছ চাষের বিলগুলো প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছেন। ফলে সরকার প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। বিলের তীরের মৎস্যজীবী পরিবারগুলোর মাছ ধরা বন্ধ হওয়ায় তাদের জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ হতে চলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ একর জমির ওপর সরকারি ২০টি মাছ চাষের বিল ও ৫টি প্লাবন ভূমি রয়েছে। এর মধ্যে রাজারহাট সদর ইউনিয়নে ৩০.২৬ একর জমির ওপর বড়গিলা বিল ৫.৬৮ একর জমিতে সরলা বিল ৬৬.৩৭ একর জমিতে দেউলার বিল, চাকিরপশার ইউনিয়নে ১৫৪.৯৩ একর জমিতে চাকিরপশার বিল, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নে ১১.৮০ একর জমিতে চতলার বিল, ৪.৮৪ একর জমিতে চতলার কুড়া, তিন একর জমিতে নাখেন্দার বিল, ৩২.৯৯ একর জমিতে কোটেশ^র বিল, ১.৫০ একর জমিতে ফতেখাঁ মেঘার দীঘি .৯৮ একর জমিতে পুরনো হাটখোলা এবং ৪৪.৯৭ একর জমিতে ঘড়িয়ালডাঙ্গা বিল রয়েছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে ৬.৫৭ একর জমির ওপর বাদিয়ার ছড়া, ৩.২০ একর জমির ওপর মাল্লির ছড়া, ৫.৫৮ একর জমিতে উকিলের ছড়া, ছিনাই ইউনিয়নে ১৫.২৬ একর জমির ওপর বুড়িদহ সাতবোন, ৭.১২ একর জমিতে ফড়িংয়ের ছড়া, ৫.৭৩ একর জমিতে কামারের ছড়া, ১.৬৫ একর জমিতে মজুদ দারের দীঘি, নাজিমখান ইউনিয়নে ৩.৮ একর জমির ওপর যুগিদহ বিল এবং উমর মজিদ ইউনিয়নে ২.২৯ একর জমিতে মাদারের কুড়া নামক বিল রয়েছে।
এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রয়েছে সরকারি খাস ভূমির ওপর প্লাবন ভূমি ও জলাশয়। তবে কাগজেকলমে উল্লেখিত মাছ চাষের বিলের জমির পরিমাণের সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই। এর মধ্যে দেউলার বিলটির পুরো অংশই স্থানীয় প্রভাবশালীরা জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে দখলে নিয়েছেন। একইভাবে প্রভাবশালীরা সরলা ও বড়গিলা বিল দখল করে নিয়ে নিজেরা দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষাবাদ করে আসছেন।
অন্য বিলগুলোর বৃহাদাংশ দখল করে ফেলেছে প্রভাবশালী মহল। প্লাবন ভূমিগুলোও এখন সরকারের হাতছাড়া। অথচ এ বিলগুলো কাগজেকলমে সরকারি হিসেবে রয়েছে। তা ছাড়া বিলগুলো দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় বিভিন্ন অংশ ভরে উঠেছে।
সরেজমিনে উপজেলার সর্ববৃহৎ চাকিরবিল ঘুরে দেখা গেছে, বিলের ১৫৪ একর জমির মধ্যে অর্ধেক জমিও বিলে নেই। বিলের বিভিন্ন অংশে প্রভাবশালীরা পাড় বেঁধে পুকুর, বাড়িঘর তৈরি এবং মাঝে মাঝে রাস্তা দিয়ে খণ্ড খণ্ড করে ফেলেছেন। বিল কমিটির সভাপতি জোগেন চন্দ্র দাস জানান, আমরা চান্দামারী জেলেপাড়া মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে ২০১৭ সালে তিন বছরের জন্য ১৯ লাখ ৮৯ হাজার টাকায় লিজ গ্রহণ করি। চুক্তিপত্রে ১৪১ একর জমির ওপর বিল থাকার কথা উল্লেখ করা হলেও সরেজমিনে আছে মাত্র ৬০ একর জমির বিল। ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিলের লিজের পুরো টাকা আজ পর্যন্ত পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি বলে জানান।
উপজেলার বাদিয়ার ছড়া বিল পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সচিন চন্দ্র বলেন, বিলের ধারের প্রভাবশালী কিছু মানুষ বিলের বৃহদাংশ দখল করে রয়েছেন। এর আগে উপজেলা প্রশাসন বিলের ভূমি উদ্ধারের চেষ্টা করলেও সম্ভব হয়নি।
উপজেলার কোটেশ^র বিলের সভাপতি স্বপন জানান, কাগজে-কলমে ৩২.৯৯ একর জমি থাকার কথা, কিন্তু রয়েছে আনুমানিক ২৫ একর; বাকি জমি প্রভাবশালীরা দখল করে পুকুর ও বাড়িঘর নির্মাণ করেছেন। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রহমান উপজেলার বেশির ভাগ বিলের বিপুল পরিমাণ জমি প্রভাবশালীদের দখলে থাকার সত্যতা স্বীকার করে জানান, অবৈধ দখল উচ্ছেদের ব্যাপারে মৎস্য অফিসের কিছু করার নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহা: যোবায়ের হোসেন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় বিলের জায়গার অবৈধ দখলদারদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকার কাজ শেষ হলে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement