২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শাঁওইলের চাদর ও কম্বল যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে

-

বগুড়াকে নতুন করে পরিচিত করেছে শাঁওইলের তৈরি কম্বল ও চাদর। পুরনো সোয়েটারের সুতা, ঝুট থেকে বাছাই করা সুতা দিয়ে নতুন করে বুনানো স¯Íা কম্বল ও চাদর সারা দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। পুরনো সুতা বাছাই ও উল্টা চড়কায় সোয়েটারের সুতা খোলার কাজে বগুড়া, জয়পুরহাট ও নওগাঁ জেলার প্রায় আট হাজার নারী-পুরুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এ প্রক্রিয়াটা শুরু করেছিলেন প্রায় ৪৫ বছর আগে শাঁওইলের কিছু তাঁতি ও সুতা কাপড় ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অনেকেই এখন মারা গেছেন। কিন্তু মাইলফলক হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছেন শাঁওইল গ্রামের প্রবীণ তাঁত কারিগর মোজাহার হোসেন, মকবুল হোসেন, আব্দুল হামিদ, ফজলুর রহমান, আফজাল হোসেন, মীর কাশেম আলী ও বর্তমান প্রজন্মের বিশিষ্ট সুতা ব্যবসায়ী মোফাজ্জল হোসেন। সারা দেশে যখন লাখ লাখ তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তখন বগুড়া অঞ্চলের হাজার হাজার তাঁত শুধু চাদর কম্বল বুনানোর জন্য আজো টিকে আছে। এই গ্রামের তৈরি বাহারি ডিজাইনের চাদর ও কম্বল দেশের বিভিন্ন এলাকায় এমনিক মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হচ্ছে।
বগুড়া জেলা শহর থেকে ৩৮ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত শাঁওইল গ্রাম। এই গ্রামের তাঁতি সম্প্রদায়ের লোকেরা আগে গামছা ও লুঙ্গি তৈরি করে স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করত। বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা সৃষ্টি হলে তারা গার্মেন্টের সুতা কিনে শুরু করেন বিভিন্ন ডিজাইনের চাদর ও কম্বল বুনানো। প্রথম দিকে গ্রামের পুরুষরা চাদর ও কম্বল বুনন ও বিক্রি শুরু করলেও এখন নারী-পুরুষ মিলে এ কাজ করছেন। কৃষি প্রধান এলাকায় বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবেই এই তাঁতি স¤প্রদায় কম্বল ও চাদর বুনন শুরু করেন। এভাবে যতদিন অতিবাহিত হয়েছে শাঁওইল গ্রামের চাদর ও কম্বলের কদর ততই বেড়েছে।
এ ব্যাপারে গ্রামের তাঁত শিল্প কারিগর আলিমুদ্দিন শেখ জানান, দিন হাজিরাতে কম্বল বুননের কাজ করেন তিনি। শীত আসার আগে থেকেই তারা এ কাজ শুরু করেন। শীত মৌসুমের পরেও চলে এ কাজ। বড় মহাজনরা ডিজাইন দিয়ে সারা বছর চুক্তিতে কাজ করে নেন। একই গ্রামের গৃহবধূ আয়শা সিদ্দিকা জানান, তিনি একটি তাঁত মেশিন বসিয়ে চাদর বুননের কাজ করেন। এ তাঁত মেশিনের ওপর নির্ভর করে চারজনের সংসার চলে। তিনিসহ পরিবারের সব সদস্য সেখানে কাজ করেন। তারা সারা দিনে ১৫ থেকে ২০টি চাদর তৈরি করেন। প্রতিটি চাদর ৩৫ থেকে ৪০ টাকা লাভে বিক্রি করেন। গ্রামের চাদর কারিগর রেজাউল করিম জানান, আগে লাভ হতো বেশি।
শাঁওইল হাট ও বাজার কমিটির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন জানান, শাঁওইল ও আশপাশ গ্রামের প্রায় আট হাজার পরিবারের মানুষ কম্বল চাদর তৈরি করে পরিবারের অভাব ঘুচিয়েছেন। এ কাজের সাথে জড়িয়ে আছে প্রায় অর্ধ লÿাধিক মানুষ। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কম্বল ও চাদর কিনতে আসেন। প্রতি রোববার ও বুধবার ভোর থেকে বেলা ১০টা পর্যন্ত চলে এ হাটে বেচাকেনা। হাটবার ছাড়াও বেচাকেনা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এখান থেকে চাদর ও কম্বল কিনে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করার পাশাপাশি সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান, মিয়ানমারসহ মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement