২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

দেবিদ্বারে রোপা আমনের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে আশঙ্কা

দেবিদ্বারের গ্রামঞ্চলে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এখন সোনালি ধানের সমারোহ : নয়া দিগন্ত -

সবুজ শ্যামল আবাদি মাঠজুড়ে এখন হলুদ সোনালি ফসলের হাসি। ধানের মিষ্টি গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠছে গ্রামীণ জনপদ। মাঠজুড়ে এখন শুধু সোনালি ধানের ঢেউ। বাতাসে দুলছে ধানের শীষ। মাঠে মাঠে রোপা আমন দেখে কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন না হওয়ায় দেবিদ্বারে এবার রোপা আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন মাঠ ঘুরে দেখা যায় দিগন্ত জোড়া মাঠ সেজেছে সবুজ ও হলুদ রঙে। দফায় দফায় বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কুমিল্লার দেবিদ্বারের প্রান্তিক চাষিরা বেশ খুশি। তবে ধানের ভালো ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশায় আছেন এই অঞ্চলের কৃষকরা।
দেবিদ্বার কৃষি অফিস সূত্রে জানাযায়, চলতি মৌসুমে দেবিদ্বারে রোপা আমন চাষে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১১ হাজার ১২০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী ১০ হাজার ৮৯৫ হেক্টর ও স্থানীয় ২২৫ হেক্টর। সর্বমোট আমন ধান আবাদ করা হয়েছে ১১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় এবার ৭০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এই জমি থেকে প্রায় ৩৪ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারণা করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
আর মাত্র দুই সপ্তাহ পর নতুন ধান কাটায় ব্যস্ত হয়ে উঠবেন প্রান্তিক কৃষক। এর পরই শুরু হবে কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন চালের পিঠার নবান্ন উৎসব। একাধিক কৃষকের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এই মৌসুমে চাষাবাদে বাড়তি সেচের কোনো প্রয়োজন না হওয়ায় বৃষ্টির পানি দিয়ে ও কম খরচে আবাদ করতে পারায় আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে।
মাশিকাড়া গ্রামের ধান চাষি আবদুল হাসেম মিয়া বলেন, এ বছর আমরা উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী রোপা আমনের চাষ করেছি। আল্লাহর রহমতে ধানও ভালো হয়েছে। তবে সরকার ধানের মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও তৃণমূল চাষিপর্যায়ে সঠিক মূল্য না পাওয়ায় চাষিদের লোকসান গুনতে হয়। বর্তমানে ধান উৎপাদনে যে টাকা ব্যয় হয়, ধান বিক্রয় করে সে টাকা আয় হয় না। তাই এ বছর ধানের আশানুরূপ ফলন হলেও দাম নিয়ে কৃষকদের মনে সংশয় রয়েই গেছে।
এ দিকে একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে গেলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে ধান ফিরিয়ে দেয় গুদাম কর্তৃপক্ষ। তাই খাদ্য অধিদফতরে যদি প্রকৃত চাষিপর্যায়ে ন্যায্যমূল্যে ধান ক্রয় করে তা হলে এই অঞ্চলের কৃষকরা কিছুটা লাভের মুখ দেখবেন।
দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদিন জানান, বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। কৃষকদের আগ্রহী করতে বিনা মূল্যে ধানের বীজ, সার ও বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে আসছে। তবে ধানের ন্যায্যমূল্য নির্ধারণ করে দিলেও কিছু অসাধু চক্রের কারণে তৃর্ণমূল কৃষকরা তা পান না। তাই খাদ্য অধিদফতর যদি কোনো অনিয়ম না করে প্রান্তিক কৃষকদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে ধান কেনে তা হলে এই অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হবেন। পাশাপাশি আগামীতে ধানের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষিবিদ উত্তম কুমার কবিরাজ বলেন, এ বছর দেবিদ্বার উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অধিক জমিতে ধানের চাষ হয়েছে। নিবিড়ভাবে মাঠ পরিদর্শনের ফলে জমিতে পোকার আক্রমণ খুব বেশি দেখা যায়নি। কিঞ্চিৎ পরিমাণ জমিতে মাজরা ও পাতা মোড়ানো পোকার আক্রমণ ছিল, যা আমরা দ্রুত দমন করতে সক্ষম হয়েছি। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের তাণ্ডবে প্রায় ১৯০ হেক্টর আমন ধানের জমি হেলে পড়ে। তবে এতে ধানের ফলনে খুব বেশি প্রভাব পড়বে না। কর্তনের সময় শ্রমিক খরচ কিছুটা বাড়তে পারে। আশা করছি এই মৌসুমে প্রায় ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন হবে। আগামীতে রোপা আমন ধানের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement